Ajker Patrika

আর বিদেশে গিয়ে সনদ–হলফনামা পুনঃসত্যায়ন করতে হবে না, বছরে বাঁচবে ৬০০ কোটি টাকা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আর বিদেশে গিয়ে সনদ–হলফনামা পুনঃসত্যায়ন করতে হবে না, বছরে বাঁচবে ৬০০ কোটি টাকা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন করা কাগজপত্র আর অন্য দেশে আবার সত্যায়ন করতে হবে না। বাংলাদেশ এপোস্টল কনভেনশনে যুক্ত হওয়ায় এ সুবিধা পাওয়া যাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আজ সোমবার নেদারল্যান্ডসে এক অনুষ্ঠানে দেশের পক্ষে এপোস্টল কনভেনশনে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্মতিপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।

এর আগে গত ২০ মে মন্ত্রিসভায় এপোস্টল কনভেনশন স্বাক্ষরের অনুমোদন দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক এই কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশগামী শিক্ষার্থী ও মানুষের বিভিন্ন সনদ, দলিল, হলফনামায় নিজ দেশের যথাযথ সত্যায়ন থাকলে অন্য দেশে গিয়ে পুনরায় সত্যায়নের প্রয়োজন হয় না। এতে দেশের মানুষের বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। 

নেদারল্যান্ডস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ‘দ্য কনভেনশন অন অ্যাবোলিশিং দ্য রিকোয়ারমেন্ট অব লিগালাইজেশন অব ফরেন পাবলিক ডকুমেন্ট’ বা এপোস্টল কনভেনশন–১৯৬১–এর পক্ষভুক্ত হলো। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের লাখ লাখ নাগরিকের জন্য এই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও তাৎক্ষণিক সুবিধাদি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এর ফলে এখন থেকে বিদেশগামী ছাত্র–ছাত্রী, পেশাজীবী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিদেশে ভর্তি ও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব কাগজপত্র সনাতন পদ্ধতিতে সত্যায়িত করতে হতো, তা দ্রুততর, সহজ ও সুলভে করতে পারবে। এতে প্রতি বছর বিদেশগামী বাংলাদেশিদের আনুমানিক ৫০০–৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। 

এতে দেশের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, কারণ এর ফলে ই–এপিপি বা ইলেকট্রনিক এপোস্টল প্রোগ্রাম পদ্ধতিতে সত্যায়ন করে ইলেকট্রনিক এপোস্টল সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে, যার সত্যতা ও সঠিকতা সার্টিফিকেটে বিদ্যমান কিউআর কোড দিয়ে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে যাচাই করা যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা এপোস্টল সার্টিফিকেট ব্যবহার করলে সত্যায়নের জন্য বিদেশি দূতাবাস বা বিদেশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বিদেশি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হতে হবে না। এতে বিদেশগামী ছাত্র-ছাত্রী এবং পেশাজীবীদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তি সম্পূর্ণ লাঘব হবে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, অন্যান্য দেশের মতো কনভেনশনে যোগদানের আট মাসের মধ্যে এতে পক্ষভুক্ত অন্য দেশগুলোর চূড়ান্ত সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ই–এপিপি বা ইলেকট্রনিক এপোস্টল প্রোগ্রাম সম্পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হবে। 

বর্তমানে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, চাকরির আবেদন, বিদেশে স্থায়ী হওয়া, বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনসহ নানাবিধ প্রয়োজনে বিদেশগামী ও বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের বিভিন্ন দলিলাদি (যেমন: একাডেমিক সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন সনদ, বৈবাহিক সার্টিফিকেট ইত্যাদি) একাধিক কর্তৃপক্ষের সত্যায়নের প্রয়োজন হয়। দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সত্যায়নসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন শেষে সেবা প্রার্থীকে আবার বিদেশি দূতাবাস, সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে সত্যায়নের জন্য যেতে হতে হয়, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, শ্রমসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। 

অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহ্ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ড. শাহ্ মো. তানভীর মনসুরসহ দুই দেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠান শেষে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রসচিব পল হুজিস ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত