পরিবর্তিত পদ্ধতিতে কনস্টেবল নিয়োগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ২০: ১৪
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০: ০৬

বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পাওয়া ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের ‘জনগণের পুলিশ’ হওয়ার শপথ বুকে ধারণ করে  দেশ ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ (রোববার) বিকেলে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘চাকরি নয়, সেবা’ স্লোগানে পরিবর্তিত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান। 

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। 

একাডেমির প্রিন্সিপাল অতিরিক্ত আইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মো. মাজহারুল ইসলাম, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ভিশন ২০৪১ পূরণের মাধ্যমে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত বিশ্বের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে বিশ্বে গর্ব করি। আমাদের পুলিশ বাহিনীর মান এখন বিশ্বমানের কাছাকাছি। 

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন

মন্ত্রী বলেন, পরিবর্তিত নিয়মে স্বচ্ছতা ও পেশাদারির সঙ্গে কনস্টেবল নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশের নিয়োগ তথা সরকারি নিয়োগে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে, রচিত হয়েছে এক নতুন ইতিহাস। ১৯৮০ সালের পর বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগে প্রথম পরিবর্তন এনেছে সরকার। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর পরিবর্তিত পদ্ধতিতে কনস্টেবল নিয়োগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

তিনি বলেন, দেশের সকল সেক্টরে এখন উন্নয়নের সুবাতাস বলছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে ‘চাকরি নয়, সেবা’ স্লোগানে সৎ, সাহসী, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়মে নিয়োগকৃত কনস্টেবলদের মৌলিক প্রশিক্ষণেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাঁদের জন্য প্রতিটি কক্ষে চারজনের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ হ্যান্ডবুক পরিবর্তন এবং প্রশিক্ষণ প্রায়োগিক ও বাস্তবভিত্তিক করা হয়েছে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তিত আধুনিক বিশ্বে অপরাধের ধরনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে সাইবার অপরাধ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, ট্রান্স ন্যাশনাল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দক্ষ পুলিশের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ পুলিশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য কনস্টেবল। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার, টহল, বেআইনি সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ, পরোয়ানা তামিল, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথোপকথনমন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হব। এই প্রক্রিয়া ধরে রাখতে হলে সবকিছুর মূলে হল সুশাসন। আর সুশাসনের অন্যতম প্রধান নিয়ামক আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন। আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নের মূল কাজ করে পুলিশ। পুলিশ যদি ঠিকভাবে কাজ না করে তবে কোন কিছুই ঠিক থাকবে না। 

মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশে যখন রিক্রুটমেন্ট হতো তখন এসপি সাহেবদের যে কী বিব্রতকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হতো তা আমি দেখেছি। আইজিপি মহোদয় এবং তাঁর টিম এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছেন। এ জন্য তিনি আইজিপিকে ধন্যবাদ জানান। 

নিয়োগপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, তোমরা যেভাবে নিয়োগ পেয়েছ, সেভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের হাত দিয়ে জ্ঞাতসারে যেন মানুষের জুলুম না হয়। আমাদের সবাইকে দেশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করতে হবে, সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই বাংলাদেশ ‘সোনার বাংলা’ হবে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশে ওয়েববেইজড স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে চমৎকারভাবে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে। আজ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। 

বক্তব্য রাখেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)নব নিয়োগকৃত কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন পুলিশের কাছে যায়। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত হবে। ২০৪১ সালের উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণে তোমাদের সচেষ্ট হতে হবে। সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা সর্বোপরি জনগণের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মানুষকে সেবা দেওয়া, জনগণকে ভালোবাসার মানসিকতা থাকতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তোমাদের সেভাবে কাজ করে যেতে হবে যেভাবে তোমরা সততার মধ্য দিয়ে চাকরিতে এসেছ। 

বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, নতুন নিয়োগ বিধিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জব মার্কেট থেকে ‘বেষ্ট অব দি বেষ্ট’ প্রার্থী নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এর সুফল জনগণ শিগগিরই পাবে। এসআই এবং সার্জেন্ট পদে নিয়োগের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। অধস্তন পদের সঙ্গে সংগতি রেখে বিসিএসের মাধ্যমে এএসপি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। 

নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তোমরা ৩৫ থেকে ৪০ বছর চাকরি করবে। যে দক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তোমাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে তাতে তোমরা জনগণকে ‘বেষ্ট সার্ভিস’ দিতে পারবে। তোমাদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রায়োগিক সিলেবাস করা হয়েছে। তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করব, জাতির জন্য তোমাদের প্রতিদান। তোমরা এ ট্যাগলাইনে বিশ্বাস করো। তোমরা সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছ। গণমানুষকেও তোমরা সততা, যোগ্যতা ও মেধাকে ব্যবহার করে বৈষম্যহীনভাবে সেবা দিতে হবে। আসো, আমরা সমাজ থেকে সকল বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসান ঘটাই। 

একাডেমির প্রিন্সিপাল খন্দকার গোলাম ফারুক ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের ভাগ্যবান আখ্যায়িত করে বলেন, কনস্টেবলদের কোনো প্রশিক্ষণ কোর্স এভাবে উদ্বোধন হয়নি। আজ তোমরা দেশ ও জনগণের সেবায় যে ওয়াদা করেছ তা রক্ষা করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠানে নব নিয়োগকৃত তিন হাজার কনস্টেবল উপস্থিত ছিলেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত