ভালো নির্বাচন হলেও স্বৈরতন্ত্র আসবে না, এমন গ্যারান্টি নেই: সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৩৯
Thumbnail image
‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন’—শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন বলেছেন, ‘জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে দেশ পরিচালিত হবে—এটাই স্বাভাবিক, এর কোনো ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। কিন্তু দেশের ন্যূনতম কোনো সংস্কার না করে রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া অনেকে নিরাপদ বোধ করছে না। ভালো নির্বাচন হলেও স্বৈরতন্ত্র আসবে না, তার গ্যারান্টি নেই। তাই নির্বাচনে যাওয়ার আগে কিছু জরুরি সংস্কার করা দরকার।’

আজ বৃহস্পতিবার সুজনের সহযোগিতায় দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন।

সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘১৭ কোটি মানুষের ভাগ্যবদলের চিন্তা করতে হবে, এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ৫৩ বছর ধরে রাষ্ট্র এটা করেনি। এতগুলো জীবনের বিনিময়ে এখন বৈষম্যবিরোধী সমাজ পাচ্ছি। গতকাল (শুক্রবার) স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটল, এটা কাম্য ছিল না।’

সোহরাব হাসান আরও বলেন, ‘সরকার আহতদের প্রতি ন্যায়বিচার করেনি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করেনি। এখনো পর্যন্ত নিহতদের তালিকাও করা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সব অবিচার বন্ধ হয়ে যায়নি। অবিচারের প্রতিবাদ এখনো করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র চাই। জনগণের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, তারা কাকে নির্বাচিত করে।’

সাংবাদিক মাহমুদ কামাল বলেন, ‘দেশের যে সংকট, তার স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নেই। স্বর্গ থেকে কেউ নেমে এসে কেউ ইন্টারফেয়ার করে তাহলে হবে বা নিবর্তনমূলক কিছু হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে হবে। কীভাবে কমানো যায়, তা আপনারা ঠিক করবেন।’ এ সময় দলীয় পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে—বলেও জানান তিনি।

সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার বলেন, ‘মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তা না হলে, যত সংস্কারই করা হোক, তা কাজে আসবে না।’ দুনীতি দমনে দুদককে সক্রিয় করার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

লিখিত প্রবন্ধে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘আগে রাষ্ট্র সংস্কার, না নির্বাচন—এই বিতর্কে না গিয়ে সংস্কার ও নির্বাচন ভাবনাকে কয়েকটি ধাপে ভাবা যেতে পারে। প্রথমত, সংস্কার কমিশনগুলোর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ। দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক অংশীজনদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনাক্রমে সংস্কারের ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ। তৃতীয়ত, কোন সংস্কারগুলো অন্তর্বর্তী সরকার করবে এবং কোন সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকার করবে তা নির্ধারণ। চতুর্থত, অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারভুক্ত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি। পঞ্চমত, নির্বাচিত সরকার কর্তৃক কোন সংস্কারগুলোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর—যাতে যে দল সরকার গঠন করবে তারা যেন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় এবং বিরোধী দলগুলোও যেন তাতে সমর্থন দিতে বাধ্য থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগে যেমন সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনের পরেও তা চলমান রাখতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত