ফারুক ছিদ্দিক, ঢাকা
সারা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে জুলাই-আগস্টে রক্ত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের। কিন্তু এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এখনো ফেরেনি ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হলেও নানা কারণে সে ধারাবাহিকতা আর জারি থাকেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মিছিল, সমাবেশ, আলোচনা সভা, আড্ডায় ছাত্র সংসদ নিয়ে আলাপ তুলতে দেখা যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে। এখনই ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির এই অঙ্গসংগঠনটির দাবি, আগে তাদেরকে যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দিতে হবে। তারপর ডাকসুসহ সব ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় আওয়ামীপন্থীদের উপস্থিতি রুখে দিতে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদলের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে ডাকসু নির্বাচনের এখন কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না নেওয়ার দাবি জানায় ছাত্রদল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এর জেরে সেদিন রাতে ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র’ রুখে দেওয়ার দাবিতে মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা।
ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সবার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ করতে চাই। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি রয়েছে, বৈধ নেতৃত্ব সৃষ্টি হলে তা কেটে যাবে। আমরা একটা কমিটি করেছি। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’
৩২ বছর ধরে অকার্যকর দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)। ৪ মাস ধরে জাকসুর নির্বাচন দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এমনকি গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে এসেছেন জাবির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ ডিসেম্বর জাকসুর রোডম্যাপ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোডম্যাপ অনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর জাকসুর জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে প্রকাশিত রোডম্যাপ অনুসারে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ১০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ জানুয়ারি। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন করা হবে ২৫ জানুয়ারি এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে ১ ফেব্রুয়ারি।
জাকসুর রোডম্যাপ প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন স্বাগত জানিয়েছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা এ রোডম্যাপের ওপর আস্থা রাখতে চান। তবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে। এখনই জাকসু নির্বাচন চায় না জাবি ছাত্রদল। সংস্কারের পর জাকসু নির্বাচন চান বলে নিশ্চিত করেছেন জাবি ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্রনেতা তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। তবে সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে ১৪তম নির্বাচনের পর আর রাকসু নির্বাচন হয়নি। ফলে সিনেটে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার মতো কোনো প্রতিনিধি নেই দীর্ঘ ৩৪ বছর। রাবিতেও এখন নতুন করে আলোচনায় রাকসু নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘ক্যাম্পাসের রাজনীতি কোন পথে চলবে, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, রাকসুর রোডম্যাপও খুব দ্রুতই ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) নীতিমালা সিন্ডিকেটে গৃহীত হয়েছে। সেটি এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘২ জানুয়ারি সিন্ডিকেটে জকসুর নীতিমালা গৃহীত হয়েছে। এখন আমরা দেখব, কোন কোন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে অনুমোদনের জন্য। নীতিমালা অনুমোদন হয়ে এলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা যাবে। তবে আমরা এর আগেও রোডম্যাপ দিয়ে দিতে পারি।’
প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছর পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবেই ৩ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৮০ এবং ১৯৮১ সালে পরপর আবার দুবার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। নির্বাচনের প্রায় ১১ মাস পর ছাত্রনেতা ফারুকুজ্জামান হত্যার শিকার হলে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসু বন্ধ করে দেয়। এরপর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেখেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন চাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ করছে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় চাকসু নির্বাচনের অনুমোদন নিয়ে আবারও ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চাকসু নির্বাচনের নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
ছাত্রলীগের (বর্তমানে) নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত ২৮ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। বন্ধ হওয়া রাজনীতি চালুসহ অধিকার নিশ্চিতে অচিরেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। তবে প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
১৯৯৮ সালের পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচন হয়নি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ছাত্ররাজনীতির যে ইতিহাস, সেটি সাধারণ ছাত্ররা গ্রহণ করেননি। তাই তাঁদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে বাকৃবিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হয়। ছাত্ররাজনীতি চালু হলে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন যদি আমাদের কাছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে আসে, তাহলে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজসহ সারা দেশের প্রাচীন কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছাত্র সংসদ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার, দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম। ’২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনে আমূল পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার বিকল্প নেই।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। কোনো দলীয় সংগঠন ছাত্র সংসদের বিকল্প হতে পারে না। তবে আগে আমাদেরকে একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। ন্যাচারাল জাস্টিস অনুসারেও এ সুযোগ পাওয়া আমাদের ন্যায্য দাবি। তারপর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক।’
তবে ঘটা করে সব ক্যাম্পাসে একসঙ্গে নির্বাচন না দিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রধান ক্যাম্পাসগুলোতে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেন ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ছিবগাতুল্লাহ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। তবে একসঙ্গে সবগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার চেয়ে প্রাথমিকভাবে প্রধান ক্যাম্পাসগুলোতে নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধাপে ধাপে নির্বাচন দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসগুলোতে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ডাকসুসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, অবিলম্বে ডাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কলেজেও ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা]
সারা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে জুলাই-আগস্টে রক্ত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের। কিন্তু এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এখনো ফেরেনি ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হলেও নানা কারণে সে ধারাবাহিকতা আর জারি থাকেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মিছিল, সমাবেশ, আলোচনা সভা, আড্ডায় ছাত্র সংসদ নিয়ে আলাপ তুলতে দেখা যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে। এখনই ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির এই অঙ্গসংগঠনটির দাবি, আগে তাদেরকে যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দিতে হবে। তারপর ডাকসুসহ সব ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় আওয়ামীপন্থীদের উপস্থিতি রুখে দিতে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদলের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে ডাকসু নির্বাচনের এখন কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না নেওয়ার দাবি জানায় ছাত্রদল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এর জেরে সেদিন রাতে ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র’ রুখে দেওয়ার দাবিতে মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা।
ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সবার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ করতে চাই। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি রয়েছে, বৈধ নেতৃত্ব সৃষ্টি হলে তা কেটে যাবে। আমরা একটা কমিটি করেছি। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’
৩২ বছর ধরে অকার্যকর দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)। ৪ মাস ধরে জাকসুর নির্বাচন দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এমনকি গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে এসেছেন জাবির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ ডিসেম্বর জাকসুর রোডম্যাপ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোডম্যাপ অনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর জাকসুর জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে প্রকাশিত রোডম্যাপ অনুসারে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ১০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ জানুয়ারি। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন করা হবে ২৫ জানুয়ারি এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে ১ ফেব্রুয়ারি।
জাকসুর রোডম্যাপ প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন স্বাগত জানিয়েছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা এ রোডম্যাপের ওপর আস্থা রাখতে চান। তবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে। এখনই জাকসু নির্বাচন চায় না জাবি ছাত্রদল। সংস্কারের পর জাকসু নির্বাচন চান বলে নিশ্চিত করেছেন জাবি ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্রনেতা তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। তবে সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে ১৪তম নির্বাচনের পর আর রাকসু নির্বাচন হয়নি। ফলে সিনেটে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার মতো কোনো প্রতিনিধি নেই দীর্ঘ ৩৪ বছর। রাবিতেও এখন নতুন করে আলোচনায় রাকসু নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘ক্যাম্পাসের রাজনীতি কোন পথে চলবে, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, রাকসুর রোডম্যাপও খুব দ্রুতই ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) নীতিমালা সিন্ডিকেটে গৃহীত হয়েছে। সেটি এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘২ জানুয়ারি সিন্ডিকেটে জকসুর নীতিমালা গৃহীত হয়েছে। এখন আমরা দেখব, কোন কোন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে অনুমোদনের জন্য। নীতিমালা অনুমোদন হয়ে এলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা যাবে। তবে আমরা এর আগেও রোডম্যাপ দিয়ে দিতে পারি।’
প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছর পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবেই ৩ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৮০ এবং ১৯৮১ সালে পরপর আবার দুবার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। নির্বাচনের প্রায় ১১ মাস পর ছাত্রনেতা ফারুকুজ্জামান হত্যার শিকার হলে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসু বন্ধ করে দেয়। এরপর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেখেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন চাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ করছে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় চাকসু নির্বাচনের অনুমোদন নিয়ে আবারও ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চাকসু নির্বাচনের নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
ছাত্রলীগের (বর্তমানে) নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত ২৮ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। বন্ধ হওয়া রাজনীতি চালুসহ অধিকার নিশ্চিতে অচিরেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। তবে প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
১৯৯৮ সালের পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচন হয়নি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ছাত্ররাজনীতির যে ইতিহাস, সেটি সাধারণ ছাত্ররা গ্রহণ করেননি। তাই তাঁদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে বাকৃবিতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হয়। ছাত্ররাজনীতি চালু হলে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন যদি আমাদের কাছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে আসে, তাহলে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজসহ সারা দেশের প্রাচীন কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছাত্র সংসদ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার, দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম। ’২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনে আমূল পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার বিকল্প নেই।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। কোনো দলীয় সংগঠন ছাত্র সংসদের বিকল্প হতে পারে না। তবে আগে আমাদেরকে একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। ন্যাচারাল জাস্টিস অনুসারেও এ সুযোগ পাওয়া আমাদের ন্যায্য দাবি। তারপর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক।’
তবে ঘটা করে সব ক্যাম্পাসে একসঙ্গে নির্বাচন না দিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রধান ক্যাম্পাসগুলোতে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেন ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ছিবগাতুল্লাহ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। তবে একসঙ্গে সবগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার চেয়ে প্রাথমিকভাবে প্রধান ক্যাম্পাসগুলোতে নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধাপে ধাপে নির্বাচন দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসগুলোতে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ডাকসুসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, অবিলম্বে ডাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কলেজেও ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা]
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচল নতুন শহরে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ ও ‘ক্ষমতার’ অপব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
২ ঘণ্টা আগেজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মাসুদ রানাকে সচিব নিয়োগ দিয়ে আজ বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২ ঘণ্টা আগেপাঠ্যপুস্তকে ‘সামান্য ভুল’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গত ৫০ বছরে বিভিন্ন সময় দেশের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কখনো কোনো গণমাধ্যমে সম্পাদকীয়...
২ ঘণ্টা আগেজিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিলের শুনানি চলছে। আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল...
৩ ঘণ্টা আগে