Ajker Patrika

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ থাকলেও পদক্ষেপ নেই: মার্কিন প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ থাকলেও পদক্ষেপ নেই: মার্কিন প্রতিবেদন

বাংলাদেশে মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ থাকলেও এগুলো বন্ধে তেমন পদক্ষেপ নেই। কতিপয় ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্ত হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাজা কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপেই সীমিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২১ সালের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবা ওয়াশিংটন থেকে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের প্রথম নয় মাসে অন্তত ১৮ ব্যক্তি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের দ্বারা গুম ও অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা থামানো এবং জড়িত ব্যক্তিদের সাজা নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। 

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি সংস্থার দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, যথেচ্ছ গ্রেপ্তার ও অমানবিক নির্যাতন সারা বছরই চলেছে। বহু গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনি বিধি-বিধান মানা হয়নি। আইনের নির্দিষ্ট সীমা লঙ্ঘন করে অনেককে দিনের পর দিন আটক রাখা হয়েছে। কখনো তথ্য সংগ্রহের নামে, আবার কখনো ঘুষ আদায়ের জন্য আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করা হয়েছে। পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বহু ক্ষেত্রে অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

তবে মার্কিন এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বুধবার বলেছেন, ‘এ প্রতিবেদনে গুম-খুনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তাতে তথ্যবিভ্রাট আছে। অনেকেই ব্যবসায়িক বা অন্য কারণে আত্মগোপন করেছে, সেগুলোকে গুম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদের অনেককেই আমরা উদ্ধার করেছি। কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ বা হত্যাকাণ্ড ঘটলে সেগুলো আইন ও বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

প্রতিবেদনে আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা, আইনের শিথিল প্রয়োগ ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এসব কারণে মানুষের কারাবাস দীর্ঘায়িত হয়েছে। স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা, আইনি বাধ্যবাধকতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চর্চার অভাব এবং দুর্নীতির বিস্তারের ফলে ভুক্তভোগীরা সুবিচার পায়নি। 

সংবিধান ও আইনে স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকার কথা বলা হলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সরকারের অনীহা, দুর্নীতিসহ নানা কারণে এ স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারাধীন ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয়, সরকারের সমালোচনা করা ও নির্বিচারে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বিবেচনা করে মামলাভুক্ত করা অনেকের সুবিচার পাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে আছে। 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এই মানবাধিকার প্রতিবেদনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত থাকা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠানে নানা নিয়ন্ত্রণ আরোপ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের সহিংস কর্মকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকদের অনেকে। সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সরকারের সমালোচনামূলক অনেক বক্তব্যকে উসকানিমূলক, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করে সংশ্লিষ্টদের হয়রানি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অনেকের সেলফ-সেন্সরশিপ ও রাজনৈতিক পক্ষপাত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিওসহ বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের কর্মকাণ্ড, তহবিল গঠন ও সংগ্রহের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর যৌন হয়রানি, শিশুনির্যাতন এবং ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের কারণেও নির্যাতন অব্যাহত ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত