মুখোশ পরে বাড়ি বাড়ি হামলা হচ্ছে, পুলিশ কিছুই করছে না: আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০: ২৯

এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে, দেশে সব মানুষ উদ্বিগ্ন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুখোশধারীদের হামলা হচ্ছে, পুলিশ কিছুই করছে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) পান্থপথের দৃক পাঠ ভবনে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘আবারও সাজানো নির্বাচন: নাগরিক উৎকণ্ঠা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল মানুষই উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। বর্তমানে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে মুখোশ পড়ে বাড়ি বাড়ি হামলা করা হচ্ছে, পুলিশ কিছু করছে না, কোনো মামলা হচ্ছে না। ২৮ অক্টোবর-এর পর সকল শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে আগের থেকেই ধাপে ধাপে পরিকল্পিত ছিল যাতে কেউ কোনো কথা না বলতে পারে।’

সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার সব সময় বলছে, তারা খুবই জনপ্রিয় এবং জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। তাহলে তাদের এমন একটি অবস্থা তৈরি করা উচিত যাতে জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারে, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়, আদালত–বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ভূমিকা রাখতে পারে। মিথ্যাচার ও প্রতারণা না করে সরকার যদি নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলে কারও কোনো অসুবিধা থাকবে না।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা দায়ের, বিচারিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাজা প্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার দুটি লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে। এক, নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় বিএনপির অংশগ্রহণের সুযোগ রুদ্ধ করা। দুই, সাজানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের শক্তিকে ধূলিসাৎ করা। এ কাজে পুলিশ, জনপ্রশাসন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে সরকার। নির্বাচনের এই আয়োজন এমনকি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের চেয়েও নগ্ন, বেপরোয়া ও উদ্ধত। এই নির্বাচনের সমর্থনকারী দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে আরও বেশি অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পাবে।’

এ সময় ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার আমাদের মনঃপূত না হলেও, নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের উচিত হবে, অনৈতিক ও অযৌক্তিকভাবে যাদের রাজবন্দী হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দেওয়া, যাতে করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে।’

নির্বাচনের তফসিল পুনর্নির্ধারণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,  ‘এর কারণ পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। বর্তমানে যেই পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। গণতন্ত্র মানে আলোচনা এবং আলোচনার সুযোগ দিতে হবে, সুসংগঠিত হয়ে সকলকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।’  

নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক বলেন, ‘আমরা পুরো দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, নির্বাচন তার একটি ছোট অংশ। সরকারের সংলাপ নিয়ে ধারাবাহিক উপসর্গ দেখে বোঝা যায় একতরফা নির্বাচনের মানসিকতা তাদের অনেক আগে থেকেই ছিল। তাদের এই পরিকল্পনা দেখে আমরা ভীত, আমাদের তরুণ সমাজ হতাশাগ্রস্ত। আমাদের বুঝতে হবে দেশটা আসলে কারা চালাবে— হেলমেট বাহিনী? নাকি যারা কোটা আন্দোলনে লড়াই করেছে? এ প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের বোধে আনতে হবে জালিয়াতির মাধ্যমে আসা বর্তমান সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ সালে আমাদের মাথায় আসেনি। তখন সংবিধান সংশোধনের মধ্যে দিয়ে যে সরকার এসেছে তা এখনো টিকে আছে এবং এটা অসাংবিধানিক। এখন যে নির্বাচনের পরিকল্পনা হচ্ছে তা শুধু নিয়ন্ত্রিত বা সাজানো নির্বাচন নয়, একতরফা নির্বাচন। সঠিক, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ভোটার, বেছে নেওয়ার সুযোগ, যথার্থ বিকল্প ও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দরকার।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত