Ajker Patrika

ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ডিসেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে উচ্চপর্যায়ের এই কূটনৈতিক আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় স্থান পাবে। এর মধ্যে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি বৈঠকের অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয় হতে পারে। ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলার কার্যক্রম শুরু করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাসিনাকে দেশে ফেরাতে প্রত্যর্পণ চুক্তি কার্যকর করার প্রস্তুতি দেখা গেলেও ভারতের আনুষ্ঠানিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন ও ভারতের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি নেতৃত্ব দেবেন। আলোচনায় বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর মতো বিষয় স্থান পাবে। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনৈতিক শাখার মহাপরিচালক (ডিজি) তৌফিক হাসান টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে বৈঠকের কাঠামো এমন যে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট ঢাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। নজিরবিহীন সেই সহিংসতায় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে হাসিনা ভারতে যান। সেখানে নয়াদিল্লির একটি সুরক্ষিত বিশাল বাড়িতে তিনি থাকছেন বলে ভারতের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো গুরুতর এবং তাঁকে দেশে ফিরিয়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অপর দিকে, ভারত শেখ হাসিনাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে এবং বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. সি আর আবরার বলেন, ‘ভারতের জন্য এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। শেখ হাসিনা ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র ছিলেন। তাঁর সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশেষত সীমান্ত নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। কিন্তু এখন তাঁকে ফিরিয়ে দিলে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারে। হাসিনার প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং মানবাধিকার ইস্যুগুলোর ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে এটিকে ভারতের সামনে ‘গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন ভারতীয় কূটনৈতিক বিশ্লেষক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। ঢাকায় ভারতের সাবেক এই হাইকমিশনার বলেন, হাসিনাকে ফিরিয়ে দিলে তা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি ভারতের সমর্থনের ইঙ্গিত দেবে। তবে চুক্তির ‘রাজনৈতিক অপরাধ’ শর্ত অনুযায়ী, ভারত এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যানও করতে পারে।

ভারতের জন্য এটি একধরনের কূটনৈতিক পরীক্ষা। হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হলে ভারতের নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শিত হবে। তবে এতে ভারতকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার সমর্থকদের উভয়ের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হতে পারে।

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল মনে করেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রকৃত তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। যদি প্রমাণ মেলে, তবে তাঁর বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘তবে যদি এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী বিষয়টি ভারতীয় আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

তখন অন্য একটা সংগঠন করতাম, এখন বলতে লজ্জা হয়: জামায়াতের আমির

বাংলাদেশে-ভারত সম্পর্কের অবনতিতে দায়ী মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা: কংগ্রেস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত