বিমানের দণ্ডিত অপরাধীরাও ফেরত চান চাকরি

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ২৬
Thumbnail image

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নানা স্তরের কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে মিশে এবার তৎপর হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত বৈমানিক ও কেবিন ক্রুরাও, যাঁরা মূলত স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা কারবার, দায়িত্বে গাফিলতিসহ নানা অভিযোগে দণ্ডিত হয়ে চাকরি হারিয়েছিলেন। ১১ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে চাকরি ফিরে পেতে 

আবেদন করেন বৈমানিক আনোয়ার পারভেজ আকাশ। ২০১৯ সালের ৮ মে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে দুর্ঘটনায় পর বিমানের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজের কো-পাইলট ছিলেন তিনি। ওই দুর্ঘটনায় ৩৪ জন আহত হন। দুর্ঘটনায় পুরো উড়োজাহাজই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন নজরুল ইসলাম শামীম। পরবর্তী সময়ে দুই বৈমানিককেই চাকরিচ্যুত করে বিমান কর্তৃপক্ষ।

ইয়াঙ্গুনের ওই দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, বৈমানিকদের ভুলেই উড়োজাহাজটি সে সময় দুর্ঘটনায় পড়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈমানিক অবতরণের সময়ে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেননি। উড়োজাহাজটি প্রথমে একবারে অবতরণ করতে না পেরে গো অ্যারাউন্ড (অবতরণ করতে না পেরে আবার উড্ডয়ন) করে। পরবর্তীকালে যখন অবতরণ করা হয়, তখন উড়োজাহাজের গতি ছিল অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজটি রানওয়ের নির্ধারিত জায়গা থেকে আরও বেশি দূরে চলে এসে বেশি গতিতে অবতরণ করে। এ ক্ষেত্রে বৈমানিকেরা উড়োজাহাজের ম্যানুয়াল এবং অবতরণের কোনো মানদণ্ডই অনুসরণ করেননি।

তবে বরখাস্ত আনোয়ার পারভেজ আকাশ চাকরি ফেরত চেয়ে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘মাত্র ৪০০ ঘণ্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি ইতিপূর্বে কোনো প্রতিকূল অবস্থার শিকার হইনি। সেই দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ক্যাপ্টেনের নির্দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে ফ্লাইট পরিচালনার চেষ্টা করেছি।’

আনোয়ার পারভেজ আকাশের চাকরি ফেরত চেয়ে করা আবেদনে সুপারিশ করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) ক্যাপ্টেন মো. সিদ্দিকুর রহমান। সুপারিশে তিনি লিখেছেন, ‘আমি জোরালোভাবে বৈমানিক আনোয়ারকে পুনরায় নিয়োগের সুপারিশ করছি।’

চাকরি ফেরত পেতে আবেদন করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু জিয়াউল হাসানও। গত বছরের (২০২৩) জুনে ৭ পিস সোনার বারসহ জেদ্দা বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আটক করেন। পরবর্তী সময়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ জিয়াউলকে দেশে ফেরত পাঠালে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই তাঁকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনার পর জিয়াউল হাসানকে চাকরিচ্যুত করে বিমান কর্তৃপক্ষ। তিনি ৯ বছর ধরে বিমানে ফ্লাইট স্টুয়ার্ড (কেবিন ক্রু) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকরিতে থাকাকালীন তিনি ডিউটি রোস্টার নীতিমালা ভঙ্গ করে শিডিউল শাখার সহযোগিতায় জেদ্দা, রিয়াদ ও শারজাহর মতো স্বর্ণ চোরাচালানের রুটে দাপটের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিলেন।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে জেদ্দা বিমানবন্দরে অবৈধ স্বর্ণ, মুদ্রাসহ আটক হন বিমানের কেবিন ক্রু রুহুল আমিন (শুভ)। জেদ্দা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় রুহুল আমিন শুভর লাগেজে স্বর্ণসহ অবৈধ পণ্যের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তাঁকে আটক করে জেদ্দার পুলিশ। এ ঘটনার পর তাঁকে চাকরিচ্যুত করে বিমান কর্তৃপক্ষ। তিনিও চলতি মাসে চাকরি ফেরত পেতে আবেদন করেছেন।

মানবিক বিবেচনায় চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেছেন ফ্লাইট স্টুয়ার্ড (কেবিন ক্রু) তৌহিদা কেয়া ও আসাদুজ্জামান শুভ। তাঁরা দুজন ঢাকায় ইয়াবাসহ পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তীকালে বিমান কর্তৃপক্ষ তাঁদের চাকরিচ্যুত করে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অতীতেও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকা ক্রুদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বর্ণসহ ধরা পড়লে সাময়িক বরখাস্তের পর পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বর্তমানে বিমানে চাকরি করছেন।

জানা গেছে, ১২ আগস্ট বিমানের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাহিদুল ইসলাম ভূঞা। সেখানে বৈমানিকসহ সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চলমান মামলা, চাকরিসংক্রান্ত আবেদন, বিবিধ অভিযোগসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, চাকরি ফেরত চেয়ে যেসব আবেদন এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে পদ্ধতি মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আবেদন করলেই যে চাকরি ফেরত পাবেন, বিষয়টি এমন নয়। প্রতিটি আবেদনের ক্ষেত্রেই দেখা হবে বিমানের আইন ও চাকরিবিধিতে কী আছে। সে অনুযায়ী প্রযোজ্য হলে কারও আবেদন বিবেচ্য হবে, কারওটি হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত