আজকের পত্রিকা ডেস্ক
পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের বিভিন্ন স্পটে চাঁদা দিতে হয় মালিক-শ্রমিকদের। বিভিন্ন নদীবন্দর ও রুট থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রায় অর্ধশত স্থানে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির শিকার হয় নৌযানগুলো। বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা আদায় করে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী চক্র ও কুখ্যাত ডাকাতেরা।
ভুক্তভোগী মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নৌপথের অন্তত ছয়টি স্পটে চাঁদা দিতে হয় মালিকপক্ষকে। প্রতিমাসে এ রুটে এ ধরনের ৫-৬টি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জাহাজের কর্মী ও শ্রমিকেরা নির্যাতনেরও শিকার হন।
জাহাজ এমভি মহাজন শাহর মাস্টার মোস্তাক শেখ বলেন, মল্লিকপুরে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। নদী পেরোতে হলে স্থানীয়রা চাঁদা নেয়। ভাসানচরে দিনের বেলায়ও ডাকাতি হয়।
অপর একটি কার্গো জাহাজের মাঝি জামাল মিয়া বলেন, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের সংঘবদ্ধ চক্র চাঁদাবাজি করে।
বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক আ. মতিন তালুকদার বলেন, বরিশাল-ঢাকা রুটের অন্তত সাতটি স্পটে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এগুলো হচ্ছে বরিশালের মল্লিকপুর, লতারচর, ভাসানচর, উলানিয়া, কালীগঞ্জ, ইলিশা ও চর গজারিয়া।
হিজলা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা সাধারণত মেঘনার সীমান্তে হয়; বিশেষ করে হিজলার গৌরবদীর হাইমচর, ভাসানচরের বামনির চর ডাকাতির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ।
নৌ পুলিশের বরিশালের পুলিশ সুপার মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, যেসব স্পট ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোতে দরকার হলে আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
লক্ষ্মীপুর রুটে অন্তত ১০ স্পট
লক্ষ্মীপুর-ভোলা ও বরিশাল নৌ-রুটে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নৌযান মালিক ও শ্রমিকেরা। স্পিডবোট থেকে শুরু করে লঞ্চ পর্যন্ত সবাইকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি রামগতির চর গজারিয়ায়। সেখানে নৌ ডাকাত খোকন, ফখরুল ইসলাম ও জমির উদ্দিনের নেতৃত্বে এসব চাঁদাবাজি হয়। তবে তাঁদের পক্ষ হয়ে এসব টাকা তোলেন কাশেম নামের এক ব্যক্তি।
এ ছাড়া মজুচৌধুরীর হাট, চর গজারিয়া, মতিরহাটের মোহনাসহ এসব নৌ-রুটের অন্তত ১০টি জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। গত ৬ মাসে চর গজারিয়া থেকে চর মেঘা পর্যন্ত ১০টি কার্গো জাহাজে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার মজুচৌধুরীর হাটে তিনটি মালবাহী লাইটার জাহাজের মালিক, শ্রমিকসহ পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডাকাত খোকনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ভাই নৌ ডাকাত জমির উদ্দিন বলেন, ‘আগে নৌপথে চাঁদাবাজি হলেও এখন নেই। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়।’
মজুচৌধুরীর হাটে নৌ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আল-আমিন বলেন, এখন নৌপথে চাঁদাবাজি নেই বললেই চলে। চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নৌ পুলিশ।
কোস্ট গার্ডের দক্ষিণ জোনের মিডিয়া উইং মো. রায়হান বলেন, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের মেঘনা নদীতে নিরাপত্তায় নিরলসভাবে কাজ করছে কোস্ট গার্ড।
চাঁদপুর রুটে ৫ স্থানে চাঁদাবাজি
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার নৌ সীমানার বেশ কয়েকটি এলাকায় ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এগুলোর মধ্যে হাইমচর, মাঝেরচর, আলুবাজার, মোহনপুর ও ষাটনল—এই পাঁচ এলাকায় বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে। চাঁদাবাজির শিকার নৌযান মালিক-শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হয়। হাইমচর উপজেলার কাটখালী, সদরের হরিণা ফেরিঘাট এলাকার নৌযান শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী এমভি রাব্বানা-২ লাইটার জাহাজের মাস্টার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা নৌ-রুটের বেশ কয়েকটি স্থানে চাঁদা দিতে হয়। এগুলোর মধ্যে চাঁদপুরের হাইমচর, মাঝেরচর ও মতলবের ষাটনল এলাকায় চাঁদাবাজি বেশি হয়।
খোঁজ নিয়ে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকায় নৌযানে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দেন রিপন সরকার ও তাঁর ভাই নয়ন সরকার। তাঁদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায়। তবে চাঁদপুরের মতলব উত্তর এলাকায় তাঁরা নিজস্ব বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন।
মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১ ডিসেম্বর নৌযানে ডাকাতির সময় মেঘনা নদীর চর উমেদ থেকে ৩ চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি এ কে এম এস ইকবাল বলেন, ‘নৌপথের নিরাপত্তার জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত আছে।’
কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশনের টহল সদস্যরা মেঘনা নদীর মতলব উত্তরে অভিযান চালিয়ে স্পিডবোটে থাকা ডাকাতির সরঞ্জাম জব্দ করেন। তবে চাঁদাবাজেরা পালিয়ে যায়।
কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফজলুল হক বলেন, নৌপথে টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাবনার ১০ পয়েন্টে ৩০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি
পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নদীবন্দরে প্রতিদিন নোঙর করে ১০-১২টি জাহাজ। নদীপথে যেতে যেতে ১০টি পয়েন্টে জাহাজপ্রতি চাঁদা দিতে হয় ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা। সব পয়েন্ট মিলিয়ে একেকটি জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাতে চাঁদা গুনতে হয় কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা। আর এসব পয়েন্টে প্রতিদিন ১৫০টি জাহাজ থেকে চাঁদা আদায় হয় অন্তত ৩০ লাখ টাকা। এসব চাঁদার টাকা যায় বিভিন্ন স্থানের নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের হাতে। পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দরে ভুক্তভোগী জাহাজচালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
যেসব পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, চাঁদপুর টাওয়ার, চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাট, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর রুটে মাঝের চর, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের সাহারা বিকন, কালীগঞ্জ, মল্লিকপুর, দড়ির চর, হিজলা এবং ভোলার তুলাতলী।
পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘নগরবাড়ী নৌবন্দরে কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে সব সময় তৎপর রয়েছি।’
মোংলা-বাঘাবাড়ী পথে ৮ স্পট
ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকলভুক্ত লাইটার জাহাজ এমভি ইদ্রিস আলী-১-এর চালক রেজাউল করিম বলেন, ‘মোংলা-বাঘাবাড়ী নৌপথে মোংলা ও মোরেলগঞ্জ আমরা নিরাপদে অতিক্রম করি। এরপর ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর, মল্লিকপুর, মাঝেরচর, কাচিকাটার মুখে, হরিণা ফেরিঘাটের নিচে, সুরেশ্বর, মাওয়া এলাকায় চাঁদাবাজ ও ডাকাতের কবলে পড়ি।’
মোংলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার মধ্যে কোনো নৌযানে চাঁদাবাজি বা ডাকাতির অভিযোগ আসেনি। তারপরও তৎপর রয়েছি।’
নারায়ণগঞ্জ রুটের ৫ পয়েন্টে চাঁদাবাজি
নারায়ণগঞ্জের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও মেঘনায় চাঁদাবাজির বিষয়ে বাংলাদেশ জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর মুক্তারপুর এবং ফতুল্লার মুখে চাঁদাবাজি হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর চর ধলেশ্বরী এবং সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকায় চাঁদাবাজেরা চাঁদা আদায় করে। মেঘনা নদীর বৈদ্যের বাজারেও চাঁদাবাজদের উপদ্রব রয়েছে।
সবুজ শিকদার জানান, এক হাজার টাকার নিচে কোনো চাঁদা নেই। সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ওসি আমিনুল হক বলেন, ‘চাঁদাবাজি হচ্ছে না এমনটা বলব না। আমরা স্পেসিফিক অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই নিব। তবে যত দূর জানি, চাঁদপুর ও মেঘনার হোমনা এলাকার কিছু চাঁদাবাজ নারায়ণগঞ্জ রুটে ঢুকে চাঁদাবাজি করে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন খান রফিক, বরিশাল; আব্বাছ হোসেন, লক্ষ্মীপুর; মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর; শাহীন রহমান, পাবনা; সাবিত আল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ; সুমেল সরাফত, মোংলা (বাগেরহাট)]
পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের বিভিন্ন স্পটে চাঁদা দিতে হয় মালিক-শ্রমিকদের। বিভিন্ন নদীবন্দর ও রুট থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রায় অর্ধশত স্থানে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির শিকার হয় নৌযানগুলো। বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা আদায় করে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী চক্র ও কুখ্যাত ডাকাতেরা।
ভুক্তভোগী মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নৌপথের অন্তত ছয়টি স্পটে চাঁদা দিতে হয় মালিকপক্ষকে। প্রতিমাসে এ রুটে এ ধরনের ৫-৬টি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জাহাজের কর্মী ও শ্রমিকেরা নির্যাতনেরও শিকার হন।
জাহাজ এমভি মহাজন শাহর মাস্টার মোস্তাক শেখ বলেন, মল্লিকপুরে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। নদী পেরোতে হলে স্থানীয়রা চাঁদা নেয়। ভাসানচরে দিনের বেলায়ও ডাকাতি হয়।
অপর একটি কার্গো জাহাজের মাঝি জামাল মিয়া বলেন, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের সংঘবদ্ধ চক্র চাঁদাবাজি করে।
বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক আ. মতিন তালুকদার বলেন, বরিশাল-ঢাকা রুটের অন্তত সাতটি স্পটে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এগুলো হচ্ছে বরিশালের মল্লিকপুর, লতারচর, ভাসানচর, উলানিয়া, কালীগঞ্জ, ইলিশা ও চর গজারিয়া।
হিজলা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা সাধারণত মেঘনার সীমান্তে হয়; বিশেষ করে হিজলার গৌরবদীর হাইমচর, ভাসানচরের বামনির চর ডাকাতির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ।
নৌ পুলিশের বরিশালের পুলিশ সুপার মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, যেসব স্পট ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোতে দরকার হলে আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
লক্ষ্মীপুর রুটে অন্তত ১০ স্পট
লক্ষ্মীপুর-ভোলা ও বরিশাল নৌ-রুটে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নৌযান মালিক ও শ্রমিকেরা। স্পিডবোট থেকে শুরু করে লঞ্চ পর্যন্ত সবাইকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি রামগতির চর গজারিয়ায়। সেখানে নৌ ডাকাত খোকন, ফখরুল ইসলাম ও জমির উদ্দিনের নেতৃত্বে এসব চাঁদাবাজি হয়। তবে তাঁদের পক্ষ হয়ে এসব টাকা তোলেন কাশেম নামের এক ব্যক্তি।
এ ছাড়া মজুচৌধুরীর হাট, চর গজারিয়া, মতিরহাটের মোহনাসহ এসব নৌ-রুটের অন্তত ১০টি জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। গত ৬ মাসে চর গজারিয়া থেকে চর মেঘা পর্যন্ত ১০টি কার্গো জাহাজে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার মজুচৌধুরীর হাটে তিনটি মালবাহী লাইটার জাহাজের মালিক, শ্রমিকসহ পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডাকাত খোকনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ভাই নৌ ডাকাত জমির উদ্দিন বলেন, ‘আগে নৌপথে চাঁদাবাজি হলেও এখন নেই। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়।’
মজুচৌধুরীর হাটে নৌ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আল-আমিন বলেন, এখন নৌপথে চাঁদাবাজি নেই বললেই চলে। চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নৌ পুলিশ।
কোস্ট গার্ডের দক্ষিণ জোনের মিডিয়া উইং মো. রায়হান বলেন, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের মেঘনা নদীতে নিরাপত্তায় নিরলসভাবে কাজ করছে কোস্ট গার্ড।
চাঁদপুর রুটে ৫ স্থানে চাঁদাবাজি
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার নৌ সীমানার বেশ কয়েকটি এলাকায় ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এগুলোর মধ্যে হাইমচর, মাঝেরচর, আলুবাজার, মোহনপুর ও ষাটনল—এই পাঁচ এলাকায় বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে। চাঁদাবাজির শিকার নৌযান মালিক-শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হয়। হাইমচর উপজেলার কাটখালী, সদরের হরিণা ফেরিঘাট এলাকার নৌযান শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী এমভি রাব্বানা-২ লাইটার জাহাজের মাস্টার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা নৌ-রুটের বেশ কয়েকটি স্থানে চাঁদা দিতে হয়। এগুলোর মধ্যে চাঁদপুরের হাইমচর, মাঝেরচর ও মতলবের ষাটনল এলাকায় চাঁদাবাজি বেশি হয়।
খোঁজ নিয়ে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকায় নৌযানে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দেন রিপন সরকার ও তাঁর ভাই নয়ন সরকার। তাঁদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায়। তবে চাঁদপুরের মতলব উত্তর এলাকায় তাঁরা নিজস্ব বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন।
মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১ ডিসেম্বর নৌযানে ডাকাতির সময় মেঘনা নদীর চর উমেদ থেকে ৩ চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি এ কে এম এস ইকবাল বলেন, ‘নৌপথের নিরাপত্তার জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত আছে।’
কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশনের টহল সদস্যরা মেঘনা নদীর মতলব উত্তরে অভিযান চালিয়ে স্পিডবোটে থাকা ডাকাতির সরঞ্জাম জব্দ করেন। তবে চাঁদাবাজেরা পালিয়ে যায়।
কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফজলুল হক বলেন, নৌপথে টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাবনার ১০ পয়েন্টে ৩০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি
পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নদীবন্দরে প্রতিদিন নোঙর করে ১০-১২টি জাহাজ। নদীপথে যেতে যেতে ১০টি পয়েন্টে জাহাজপ্রতি চাঁদা দিতে হয় ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা। সব পয়েন্ট মিলিয়ে একেকটি জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাতে চাঁদা গুনতে হয় কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা। আর এসব পয়েন্টে প্রতিদিন ১৫০টি জাহাজ থেকে চাঁদা আদায় হয় অন্তত ৩০ লাখ টাকা। এসব চাঁদার টাকা যায় বিভিন্ন স্থানের নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের হাতে। পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দরে ভুক্তভোগী জাহাজচালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
যেসব পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, চাঁদপুর টাওয়ার, চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাট, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর রুটে মাঝের চর, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের সাহারা বিকন, কালীগঞ্জ, মল্লিকপুর, দড়ির চর, হিজলা এবং ভোলার তুলাতলী।
পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘নগরবাড়ী নৌবন্দরে কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে সব সময় তৎপর রয়েছি।’
মোংলা-বাঘাবাড়ী পথে ৮ স্পট
ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকলভুক্ত লাইটার জাহাজ এমভি ইদ্রিস আলী-১-এর চালক রেজাউল করিম বলেন, ‘মোংলা-বাঘাবাড়ী নৌপথে মোংলা ও মোরেলগঞ্জ আমরা নিরাপদে অতিক্রম করি। এরপর ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর, মল্লিকপুর, মাঝেরচর, কাচিকাটার মুখে, হরিণা ফেরিঘাটের নিচে, সুরেশ্বর, মাওয়া এলাকায় চাঁদাবাজ ও ডাকাতের কবলে পড়ি।’
মোংলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার মধ্যে কোনো নৌযানে চাঁদাবাজি বা ডাকাতির অভিযোগ আসেনি। তারপরও তৎপর রয়েছি।’
নারায়ণগঞ্জ রুটের ৫ পয়েন্টে চাঁদাবাজি
নারায়ণগঞ্জের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও মেঘনায় চাঁদাবাজির বিষয়ে বাংলাদেশ জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর মুক্তারপুর এবং ফতুল্লার মুখে চাঁদাবাজি হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর চর ধলেশ্বরী এবং সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকায় চাঁদাবাজেরা চাঁদা আদায় করে। মেঘনা নদীর বৈদ্যের বাজারেও চাঁদাবাজদের উপদ্রব রয়েছে।
সবুজ শিকদার জানান, এক হাজার টাকার নিচে কোনো চাঁদা নেই। সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ওসি আমিনুল হক বলেন, ‘চাঁদাবাজি হচ্ছে না এমনটা বলব না। আমরা স্পেসিফিক অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই নিব। তবে যত দূর জানি, চাঁদপুর ও মেঘনার হোমনা এলাকার কিছু চাঁদাবাজ নারায়ণগঞ্জ রুটে ঢুকে চাঁদাবাজি করে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন খান রফিক, বরিশাল; আব্বাছ হোসেন, লক্ষ্মীপুর; মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর; শাহীন রহমান, পাবনা; সাবিত আল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ; সুমেল সরাফত, মোংলা (বাগেরহাট)]
চলতি বছর হজযাত্রী পায়নি প্রায় ৬৩ শতাংশ হজ এজেন্সি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী বছর একেকটি এজেন্সিকে কমপক্ষে ২ হাজার হজযাত্রী বহন করতে হবে। এতে হজযাত্রী পাঠানোর বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও সংকুচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা...
২ ঘণ্টা আগেপুলিশ বাহিনীর ৪০তম ক্যাডেট উপপরিদর্শকদের (এসআই) ১২ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে পাসিং আউট প্যারেড হওয়ার কথা থাকলেও ১৪ মাসে তা হয়নি। এরই মধ্যে এই ব্যাচের সব মিলিয়ে ৩২১ জন ক্যাডেট এসআইকে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে অব্যাহতি দেওয়া...
২ ঘণ্টা আগেরাজধানীর পূর্বাঞ্চলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্লটের নথিপত্র যাচাইয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুপুরে এই অভিযান চালানো হয়।
২ ঘণ্টা আগেনির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ বৃহস্পতিবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর কোনো দাবি, আপত্তি ও সংশোধন থাকলে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে।
২ ঘণ্টা আগে