হত্যাকারীরা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪৩
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০: ২৩

রেললাইনে নাশকতায় বিএনপি জড়িত থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা এ রকম জঘন্য কাজ করতে পারে, রেল যাবে সেখানে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা করতে পারে—এরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে কোন মুখে? হত্যাকারীরা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না। এটা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে। 

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

গতকাল বুধবার গাজীপুরে দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে রাখায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় এক যাত্রী নিহত হন। এরপর আজ নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিশপ্লেট ক্লিপ খুলে নাশকতার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। তবে স্থানীয়দের প্রতিরোধে তারা পালিয়ে যায়।

দুর্বৃত্তরা যেখানে বাস, রেলে নাশকতার চেষ্টা করবে সেখানে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণ মাঠে নামলে এরা হালে পানি পাবে না। জনগণকে আহ্বান জানাব, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। এরা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। মানুষ খুন করতে জানে, মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে জানে না। মানুষের সর্বনাশ করতে পারে, কিন্তু জীবনটা উন্নত করতে পারে না। কাজেই তাদের থেকে সাবধান। আর কোথাও যেন এ ধরনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলা, আগুন দিতে না পারে। যখনই করতে যাবে, তাকে ধরতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা জ্বালাও-পোড়াও করে, রেললাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলে, এরা তো পরাজিত শক্তির দালাল। মনে রাখতে হবে—এরা পরাজিত শক্তির দোসর, কাজেই এদের না বলুন। এদের বাংলাদেশে রাজনীতি করারই কোনো অধিকার নাই। কারণ খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ—এদের বাংলাদেশে কোনো স্থান নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে। তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে, তারা শান্তিতে বাস করবে। উন্নত জীবন পাবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

সারা দেশে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আন্দোলন কী? বলছে—অবরোধ, হরতাল। কিন্তু তাদের দেখা নাই। কয়েকটা গাড়ি পোড়ানো, মানুষ পোড়ানো, রেললাইন কেটে দেওয়া, বাস পোড়ানো—এটাই হচ্ছে তাদের হরতাল-আন্দোলন। 

তিনি বলেন, ‘তারা নাকি গণতন্ত্র উদ্ধারে আন্দোলন করবে। আরে গণতন্ত্র বানান করতে পারে? গণতন্ত্র ওরা শিখেছে? ওর (তারেক রহমান) বাপ কি গণতন্ত্র দিয়েছিল? ওইটা তো কারফিউ গণতন্ত্র। সারা রাত থাকত কারফিউ। কারফিউ দিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসেছিল। হত্যাকাণ্ড চালিয়ে লাশের ওপর ক্ষমতায় বসেছিল ওর বাপ। আর ওর মা এসে যত যুদ্ধাপরাধীদের গদিতে বসিয়েছিল। তার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে, জনগণ বারবার তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছে। আর সে এখন দূরে বসে হুকুম দেয় আর মানুষ পোড়ায়, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারার পরিকল্পনা করে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা এখন মানুষ মারার পরিকল্পনা করে। যারা মানুষ হত্যা করার পরিকল্পনা করে, তারা কোন গণতন্ত্র দেবে? আমি জিজ্ঞাসা করি। এটা কি বাংলাদেশের মানুষ বোঝে না? নিশ্চয় বাংলাদেশের মানুষ এটা বুঝতে পারে। এই জন্য তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয় না। তাদের কয়েকজন মুষ্টিমেয় আছে। তারাই সঙ্গে নাচে। সেই সঙ্গে আমাদের কিছু অতি বামপন্থীরাও এখন তাদের সঙ্গে নেমে পড়েছে। কী রকম অদ্ভুত তাদের আদর্শের বিকৃতি। একদিকে জামায়াত-শিবির, আরেক দিকে এই খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আমাদের আদর্শবাদীরা। আমি জানি না তাদের আদর্শ কোথায়?’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নাকি একেবারে শেষ হয়ে গেছে। কোথায় শেষটা হলো আমি জিজ্ঞাসা করি। আওয়ামী লীগ থাকলে এ দেশের মানুষ সেবা পায়। তাহলে ক্ষতিটা কোথায় হলো? আজকে ছিন্ন কাপড় পরে, ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে মানুষ আসে না। এখন মানুষের সকল মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। বিদেশে গেলে উন্নয়ন রোল মডেল হিসাবে সম্মান পায় বাংলাদেশের মানুষ। এ সম্মানটা দিতে পারে না আমাদের দেশের কিছু কুলাঙ্গার। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর দোসর যারা ছিল, এরাই তাদের প্রেতাত্মা হয়ে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে এবং হত্যার পরিকল্পনা করছে।’ 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকা ষড়যন্ত্র করছে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তাদের নানা রকম চক্রান্তও শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটা নির্বাচনের আগেই চক্রান্ত হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের শক্তি হচ্ছে বড় শক্তি, আমি যেটা বিশ্বাস করি। সেই শক্তি আছে বলেই আমরা পরপর একটানা তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। ১৯৯৬ সালে পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। আর ওই একই শক্তির চক্রান্তে ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারেনি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পরে আমরা সরকারে (২০০৮) আসতে পেরেছি।’

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংসদে বসালেন। আর ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। খুনিদের যখন সংসদে বসিয়েছেন, ওই সংসদে খালেদা জিয়া বেশি দিন বসতে পারে নাই। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন আর ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। এই কথাটা বিএনপির নেতাদের মনে রাখা উচিত। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া বিদায় নিয়েছিল। একবার না দুই-দুইবার।’

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান নুজহাত চৌধুরী, সম্মিলিত সংস্কৃতি জোটের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত