গত ৩ নির্বাচনে ইসি কর্মকর্তাদের কথা শোনেনি পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ১৬
ফাইল ছবি

বিগত তিনটি (দশম, একাদশ, দ্বাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কোনো কথা শোনেননি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের কলকবজা অন্য জায়গা থেকে নাড়ানো হয়েছে।

জাতীয় সংসদে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে গতকাল সোমবার বৈঠকে এমনটাই দাবি করেছেন বিগত তিন সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, তিন নির্বাচনের সময় রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কমবেশি ৩০ জন কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংসদে জেলা প্রশাসক (ডিসি) রিটার্নিং এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বৈঠকে উপস্থিত হওয়া সবাই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ওই সব নির্বাচনে তাঁদের তেমন কিছু করার ছিল না। কলকবজা অন্য জায়গা থেকে নাড়ানো হয়েছে। এক অর্থে বলতে গেলে তাঁরা অসহায় ছিলেন।

কমিশনের প্রধান আরও বলেন, নিচের দিকের কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা এটিও বলেছেন, দেশ একটি পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল; যার কারণে এমন নির্বাচন হয়েছে এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের কোনো কথা শোনেনি। কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাঁদেরও জীবন-জীবিকা আছে, তাই ওই সময় তাঁদের একমাত্র পথ ছিল পদত্যাগ করা। প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ ছিল না। প্রতিবাদ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এর কোনো বিকল্প নেই।

বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং শাসনপ্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন বলেন, বৈঠকে মনোনয়ন-বাণিজ্য কমানো, প্রার্থীর যোগ্যতা, প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই-বাছায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, হলফনামা আরও ভালোভাবে যাচাই করা যাবে, তবে এর সঙ্গে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে।

তৃণমূলে যাবে সংস্কার কমিশন

কমিশনের সামনের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। আরও অনেকের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। আমরা মাঠেও যাব। ১২ ডিসেম্বর আমরা খুলনায় যাব। আমাদের আকাঙ্ক্ষা আছে সব বিভাগে গিয়ে তৃণমূলের সব শ্রেণির মানুষের কথা শোনার।’ নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশন নিজেদের সুপারিশ জমা দেবে বলে জানান তিনি।

বদিউল আলম মজুমদার আরও জানান, ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে বিবিএসকে দিয়ে একটি জরিপ করার চেষ্টা করছি। আমরা প্রশ্নপত্র তৈরি করছি। আমরা আশা করি এটি শুরু করতে পারব। শুধু তা-ই নয়, আমরা নিজেরাও অনলাইনে একটি জরিপ করব কি না, চিন্তাভাবনা করছি।’

পোস্টাল ব্যালট অথবা ই-ভোটিং বা কোনো একটি মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটারের বিষয়টি শুরু করা হবে জানিয়ে বদিউল আলম বলেন, ‘বহুদিন থেকে এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, পরিকল্পনা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে এটি এখনো দিনের আলো দেখেনি। এটি আমাদের ওপর নির্ভর না করলেও আমরা চেষ্টা করব যাতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আমরা অনলাইনে প্রবাসীদের সঙ্গে একটি মিটিং করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত