এবারও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হওয়া হতাশাজনক: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০: ১৬
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ৩৭

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরের পরিস্থিতি বিবেচনায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, তা এবারও হবে না, যা চরম হতাশাজনক।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি আরও বলেছে, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেশে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য। 

বিবৃতিতে জানানো হয়, টিআইবির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৪৫ সদস্যের সংস্থার বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় সদস্যরা দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস, হয়রানি, হামলা-মামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধসহ স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টার উল্লেখ করে ক্ষোভ জানান। 

জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে জাতীয় সংসদের প্রত্যাশিত কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের সম্ভাবনা ক্রমাগত দূরীভূত হতে যাচ্ছে বলেও জানান টিআইবির সদস্যরা।  

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন টিআইবির সাধারণ পর্ষদে সদস্যদের নির্বাচিত প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুল হক। 

জনগণের ভোটের অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে দেশে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে মত দেন টিআইবি সদস্যরা। 

বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে জাতীয় ঐকমত্যভিত্তিক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের আহ্বান জানান তাঁরা। 

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতিতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করায় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ম্লান হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার প্রয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি মহামারির রূপ নিয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত অর্থ পাচার ও ঋণখেলাপির সংস্কৃতি এতটাই প্রকট যে, প্রতিবছর নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ঘটনা রোধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না, উল্টো দেশে একধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। 

দুর্নীতির এজাতীয় সর্বগ্রাসী ভয়াল থাবা থেকে পরিত্রাণ পেতে সব ধরনের করুণা, অনুকম্পা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সবার কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানান সদস্যরা। 

যে সুনির্দিষ্ট অভীষ্ট নিয়ে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, একাধিক আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুদকের ক্ষমতা হ্রাস করে তা অর্জনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা হয়েছে বলে গভীর হতাশা প্রকাশ করেন টিআইবির সদস্যবৃন্দ। 

সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮; মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২; আয়কর আইন, ২০২৩-এর যেসব ধারা দুদকের ক্ষমতাকে খর্ব করেছে, তা অবিলম্বে সংশোধন করার জোর দাবি জানান তাঁরা। 

টিআইবির সদস্যগণ মনে করেন, সরকারের দায়িত্ব হলো, অর্পিত ভূমিকা পালনে গণমাধ্যম যেন বাধার মুখে না পড়ে এমন উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময়ে দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যাগত তথ্য উপস্থাপন করে অন্তঃসারশূন্য আত্মতৃপ্তি লাভের চেষ্টা করতে দেখা যায়। অথচ নানা পন্থায় গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানি, হামলা ও মামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধসহ স্বাধীন মত ও চিন্তা প্রকাশের চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত