আইনের খসড়া
সৌগত বসু, ঢাকা
মেট্রোরেল চালায় যারা, সেই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। আইন সংশোধন করে এখন আধুনিক নগর পরিবহনটির নিয়ন্ত্রণ থেকে সেই কর্তৃপক্ষকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি পরিচালনা কোম্পানি ডিএমটিসিএলের হাতেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় মেট্রোরেলে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরক দিয়ে ক্ষতি করা, যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, ভাঙচুর, অশালীন কাজ করা, ভিক্ষা করা এবং অনুমতি ছাড়া শুটিং করার মতো বিভিন্ন অপরাধের জন্য অর্থদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয় ধরনের সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাত্রী ও ট্রেনের বিমাবিষয়ক ধারা বাতিলেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডিএমটিসিএলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে কার্যত একমত হলেও সম্ভাব্য অনিয়ম ও অঘটনের ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের দায়মুক্তির প্রস্তাবে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
যাত্রী পরিবহন সেবা চালুর দুই বছর পূর্তির আগেই মেট্রোরেল পরিচালনায় এই বড় পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে ডিএমটিসিএল। গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে ২০১৫ সালের মেট্রোরেল আইন সংশোধন করে তৈরি করা ‘মেট্রোরেল নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আইন, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করার সভা হয়। এতে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক, ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। এরপর মেট্রোরেল আইন প্রণয়ন করা হয় ২০১৫ সালে। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের প্রথম লাইনে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। শুরু থেকে মেট্রোরেল পরিচালনা করে আসছিল ডিএমটিসিএল। ডিটিসিএ আইন, ২০১২ অনুযায়ী এই সংস্থাই মেট্রোরেলের প্রধান কর্তৃপক্ষ। নতুন আইনে ডিটিসিএকে বাদ দিয়ে সব দায়িত্ব নিতে চাইছে ডিএমটিসিএল। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালকই মেট্রোরেলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন আইনের খসড়ায় সেই ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে।
যাত্রীসেবার কিছু ধারার বিলুপ্তি মেট্রোরেল পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে (লাইসেন্সি) বাধ্যতামূলকভাবে মেট্রোরেল ও যাত্রীর জন্য বিমা করার নির্দেশনা রয়েছে বর্তমান আইনে। মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় পড়ে কোনো ব্যক্তি বা স্থাপনার ক্ষতি হলে ৯০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে। নতুন আইনে এ-সংক্রান্ত ধারা বিলুপ্ত করতে চায় ডিএমটিসিএল। এ ছাড়া মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল লাইসেন্সিকে। কোনো আহত ব্যক্তি লাইসেন্সির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিতে না চাইলেও তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যয়ভার পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই আইনে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ নতুন আইনে এ ধারা বিলুপ্ত করতে চাইছে।
মেট্রোরেল আইনে ‘লাইসেন্সি’ বলতে এ পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বোঝানো হতো। নতুন আইনের খসড়ায় সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। মেট্রোরেল লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে এর আগে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না থাকলেও ডিএমটিসিএল এখন সেই কর্তৃত্ব চাইছে।
বিভিন্ন অপরাধে সাজার বিধান
মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে এক বছর জেল অথবা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে শুধু জরিমানা ছিল। যাত্রী মদ্যপ বা মাতাল অবস্থায় থাকলে, ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে অথবা অশালীন কাজ বা গালিগালাজ করলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে এটি ছিল না। মেট্রোরেলে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক সামগ্রী বহন করলে ২০ হাজার টাকা অথবা এক বছর কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
মেট্রোরেলের কোনো কর্মচারীকে কর্তব্যরত অবস্থায় যদি নেশাগ্রস্ত পাওয়া যায়, তবে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
খসড়ায় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে মেট্রোরেলের সম্পত্তির (রেললাইন, বক্স-কাঠামো, স্টেশন ভবন এবং বিভিন্ন যন্ত্র ও অবকাঠামো) ক্ষতি করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মেট্রোরেলে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন, পোস্টার লাগালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড হবে। মেট্রোরেলের ভেতরে পণ্য বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক বছর কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড হবে। অনুমতি ছাড়া শুটিং করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হবে। মেট্রোরেলে ভিক্ষা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৩ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড থাকবে। এসব বিধান আগের আইনে ছিল না।
বাড়ির ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল লাইন (এমআরটি টানেল বা পাতালরেল) নির্মাণের সময় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যেন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তবে নির্মাণকাজ চলার সময় কারও ভবনের কোনো ক্ষতি হলে মালিকপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে জমির মালিক কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। এমআরটি পিলার বা টানেল নির্মাণের সময় পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নানা পরিষেবা অপসারণ বা স্থানান্তরের যৌক্তিক ব্যয় বহন করা হবে।
মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কেউ বাধা দিলে তার সাজা ছিল দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। এই জরিমানার অঙ্ক ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করতে চায় ডিএমটিসিএল।
চিত্র থেকে বাদ পড়ছে ডিটিসিএ
ডিটিসিএ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তারা মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও নতুন আইনের খসড়া তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। ভাড়া নির্ধারণের জন্য এখন ডিটিসিএর প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। খসড়ায় ডিটিসিএর প্রধান নির্বাহীকে বাদ দিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এর প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে চায় ডিএমটিসিএল।
সংশোধিত আইনের খসড়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের নতুন আইনটি এখনো সরকারের বিবেচনার অপেক্ষায়। মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত সব কর্তৃপক্ষকে নিয়েই এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে আইনটিতে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গতকাল ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে গিয়ে আগের আইনটি পাওয়া যায়নি।
মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাপানের জাইকার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে কিছু ধারা পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। তবে সেগুলো সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হবে, তারপর আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে পর্যালোচনার জন্য। এই আইন নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করার বৈঠকে সভাপতিত্বকারী আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাফিউল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নতুন আইনে ডিটিসিএকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম শামছুল হক বলেন, ‘ডিটিসিএ মূলত সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেলের শুরুর দিকে তাদের মাদার অর্গানাইজেশন করা হয়েছিল; কারণ, তখন স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এসপিভি) আইনের সুবিধা ডিএমটিসিএলের ছিল না। এখন তা আছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল পরিচালনা-সম্পর্কিত সব দায়দায়িত্ব এখন ডিএমটিসিএল পালন করছে। মাদার অর্গানাইজেশন হিসেবে তাদেরই থাকা উচিত।’
‘দায়মুক্তির’ ধারায় ক্ষোভ
আইনের খসড়ায় মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের’ সুরক্ষার বিধান রেখে বলা হয়েছে, সরকার, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করলে তার বিরুদ্ধে মেট্রোরেলের নতুন আইন এবং আইনের ধারা অনুযায়ী কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
খসড়ায় সম্ভাব্য অনিয়ম বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের দায়মুক্তির সুপারিশে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক এম শামছুল হক। তিনি বলেন, ‘ভুলটা হয়েছিল মেট্রোরেলের সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের আমলে। তিনি তাঁর পছন্দমতো অভিজ্ঞতাহীন কিছু লোককে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মেট্রোরেল পরিচালনায় যখন তাঁদের নানা ব্যর্থতা সামনে আসছে, তখন তাঁরা নিজেদের অপরাধ ও দুর্বলতা ঢাকতে এখন দায়মুক্তির বিধান করতে চাইছেন।’ মেট্রোরেল ও যাত্রীর জন্য বিমার বিধান বাতিল করা হলে ডিএমটিসিএল যাত্রী হারাতে শুরু করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মেট্রোরেল চালায় যারা, সেই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। আইন সংশোধন করে এখন আধুনিক নগর পরিবহনটির নিয়ন্ত্রণ থেকে সেই কর্তৃপক্ষকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি পরিচালনা কোম্পানি ডিএমটিসিএলের হাতেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় মেট্রোরেলে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরক দিয়ে ক্ষতি করা, যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, ভাঙচুর, অশালীন কাজ করা, ভিক্ষা করা এবং অনুমতি ছাড়া শুটিং করার মতো বিভিন্ন অপরাধের জন্য অর্থদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয় ধরনের সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাত্রী ও ট্রেনের বিমাবিষয়ক ধারা বাতিলেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডিএমটিসিএলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে কার্যত একমত হলেও সম্ভাব্য অনিয়ম ও অঘটনের ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের দায়মুক্তির প্রস্তাবে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
যাত্রী পরিবহন সেবা চালুর দুই বছর পূর্তির আগেই মেট্রোরেল পরিচালনায় এই বড় পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে ডিএমটিসিএল। গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে ২০১৫ সালের মেট্রোরেল আইন সংশোধন করে তৈরি করা ‘মেট্রোরেল নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আইন, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করার সভা হয়। এতে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক, ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। এরপর মেট্রোরেল আইন প্রণয়ন করা হয় ২০১৫ সালে। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের প্রথম লাইনে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। শুরু থেকে মেট্রোরেল পরিচালনা করে আসছিল ডিএমটিসিএল। ডিটিসিএ আইন, ২০১২ অনুযায়ী এই সংস্থাই মেট্রোরেলের প্রধান কর্তৃপক্ষ। নতুন আইনে ডিটিসিএকে বাদ দিয়ে সব দায়িত্ব নিতে চাইছে ডিএমটিসিএল। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালকই মেট্রোরেলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন আইনের খসড়ায় সেই ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে।
যাত্রীসেবার কিছু ধারার বিলুপ্তি মেট্রোরেল পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে (লাইসেন্সি) বাধ্যতামূলকভাবে মেট্রোরেল ও যাত্রীর জন্য বিমা করার নির্দেশনা রয়েছে বর্তমান আইনে। মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় পড়ে কোনো ব্যক্তি বা স্থাপনার ক্ষতি হলে ৯০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে। নতুন আইনে এ-সংক্রান্ত ধারা বিলুপ্ত করতে চায় ডিএমটিসিএল। এ ছাড়া মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল লাইসেন্সিকে। কোনো আহত ব্যক্তি লাইসেন্সির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিতে না চাইলেও তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যয়ভার পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই আইনে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ নতুন আইনে এ ধারা বিলুপ্ত করতে চাইছে।
মেট্রোরেল আইনে ‘লাইসেন্সি’ বলতে এ পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বোঝানো হতো। নতুন আইনের খসড়ায় সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। মেট্রোরেল লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে এর আগে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না থাকলেও ডিএমটিসিএল এখন সেই কর্তৃত্ব চাইছে।
বিভিন্ন অপরাধে সাজার বিধান
মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে এক বছর জেল অথবা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে শুধু জরিমানা ছিল। যাত্রী মদ্যপ বা মাতাল অবস্থায় থাকলে, ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে অথবা অশালীন কাজ বা গালিগালাজ করলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে এটি ছিল না। মেট্রোরেলে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক সামগ্রী বহন করলে ২০ হাজার টাকা অথবা এক বছর কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
মেট্রোরেলের কোনো কর্মচারীকে কর্তব্যরত অবস্থায় যদি নেশাগ্রস্ত পাওয়া যায়, তবে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
খসড়ায় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে মেট্রোরেলের সম্পত্তির (রেললাইন, বক্স-কাঠামো, স্টেশন ভবন এবং বিভিন্ন যন্ত্র ও অবকাঠামো) ক্ষতি করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মেট্রোরেলে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন, পোস্টার লাগালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড হবে। মেট্রোরেলের ভেতরে পণ্য বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক বছর কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড হবে। অনুমতি ছাড়া শুটিং করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হবে। মেট্রোরেলে ভিক্ষা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৩ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড থাকবে। এসব বিধান আগের আইনে ছিল না।
বাড়ির ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল লাইন (এমআরটি টানেল বা পাতালরেল) নির্মাণের সময় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যেন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তবে নির্মাণকাজ চলার সময় কারও ভবনের কোনো ক্ষতি হলে মালিকপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে জমির মালিক কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। এমআরটি পিলার বা টানেল নির্মাণের সময় পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নানা পরিষেবা অপসারণ বা স্থানান্তরের যৌক্তিক ব্যয় বহন করা হবে।
মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কেউ বাধা দিলে তার সাজা ছিল দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। এই জরিমানার অঙ্ক ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করতে চায় ডিএমটিসিএল।
চিত্র থেকে বাদ পড়ছে ডিটিসিএ
ডিটিসিএ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তারা মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও নতুন আইনের খসড়া তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। ভাড়া নির্ধারণের জন্য এখন ডিটিসিএর প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। খসড়ায় ডিটিসিএর প্রধান নির্বাহীকে বাদ দিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এর প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে চায় ডিএমটিসিএল।
সংশোধিত আইনের খসড়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের নতুন আইনটি এখনো সরকারের বিবেচনার অপেক্ষায়। মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত সব কর্তৃপক্ষকে নিয়েই এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে আইনটিতে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গতকাল ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে গিয়ে আগের আইনটি পাওয়া যায়নি।
মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাপানের জাইকার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে কিছু ধারা পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। তবে সেগুলো সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হবে, তারপর আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে পর্যালোচনার জন্য। এই আইন নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করার বৈঠকে সভাপতিত্বকারী আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাফিউল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নতুন আইনে ডিটিসিএকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম শামছুল হক বলেন, ‘ডিটিসিএ মূলত সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেলের শুরুর দিকে তাদের মাদার অর্গানাইজেশন করা হয়েছিল; কারণ, তখন স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এসপিভি) আইনের সুবিধা ডিএমটিসিএলের ছিল না। এখন তা আছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল পরিচালনা-সম্পর্কিত সব দায়দায়িত্ব এখন ডিএমটিসিএল পালন করছে। মাদার অর্গানাইজেশন হিসেবে তাদেরই থাকা উচিত।’
‘দায়মুক্তির’ ধারায় ক্ষোভ
আইনের খসড়ায় মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের’ সুরক্ষার বিধান রেখে বলা হয়েছে, সরকার, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করলে তার বিরুদ্ধে মেট্রোরেলের নতুন আইন এবং আইনের ধারা অনুযায়ী কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
খসড়ায় সম্ভাব্য অনিয়ম বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের দায়মুক্তির সুপারিশে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক এম শামছুল হক। তিনি বলেন, ‘ভুলটা হয়েছিল মেট্রোরেলের সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের আমলে। তিনি তাঁর পছন্দমতো অভিজ্ঞতাহীন কিছু লোককে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মেট্রোরেল পরিচালনায় যখন তাঁদের নানা ব্যর্থতা সামনে আসছে, তখন তাঁরা নিজেদের অপরাধ ও দুর্বলতা ঢাকতে এখন দায়মুক্তির বিধান করতে চাইছেন।’ মেট্রোরেল ও যাত্রীর জন্য বিমার বিধান বাতিল করা হলে ডিএমটিসিএল যাত্রী হারাতে শুরু করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভুয়া এলসির বিপরীতে জনতা ব্যাংকের ৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৬ টাকা আত্মসাতের মামলায় হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে জামিন দেননি আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে তাঁর জামিন আবেদনের শুনানি তিন মাসের জন্য মুলতবি করা হয়েছে...
১৫ মিনিট আগেপ্রায় ১৩ বছরের অপেক্ষার পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অবশেষে পেশাগত কাজে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেলেন। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহারের নীতিমালা অনুমোদন করেছে। তবে গুলি করার ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম মেনে চলতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে...
৩১ মিনিট আগেপ্রধানমন্ত্রী হলে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়া, ৫১ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় ভোট গ্রহণ এবং দেশের সব জাতিসত্তার স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন বিধান সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। গতকাল বুধবার সংবিধান সংস্কার কমিশনের সঙ্গে অংশীজনদের মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে এসেছে। মতবিনিময় সভায় বিচারপতি ইমান
১১ ঘণ্টা আগেব্যক্তির অপরাধের জন্য দলের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা ঠিক নয় বলে মনে করেন ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি বলেছেন, ‘কোনো অপরাধীর জন্য কোনো সংগঠন বা কোনো দল কিংবা কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আঙুল দেখানো ঠিক হবে না।’
১২ ঘণ্টা আগে