Ajker Patrika

রেলের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩: ০১
Thumbnail image
রেলের রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়া নিয়ে রেলপথ উপদেষ্টার বাসায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে রেলপথ
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসায় বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

রাত আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমাদের সমস্যা আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে সমাধান করবেন উপদেষ্টা মহোদয়। আমরা জনদুর্ভোগ চাই না। দুঃখ প্রকাশ করছি। এখন থেকে ধর্মঘট বাদ দিচ্ছি। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম। মিডিয়ার মাধ্যমে কর্মী ভাইদের বলতে চাই এটা। উপদেষ্টা বলেছেন, আগের মতো আমরা যা পেয়ে আসছি তা পাব।

এর আগে রাত সোয়া ২টার দিকে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার। শ্রমিক নেতাদের সাথে নিয়ে আমরা রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমস্যার সমাধান করতে রেল উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছি। এ বিষয়ে প্রেস কনফারেন্স রাত ২টা ৩০ মিনিটে।

বৈঠক শেষে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির এক নেতা আজকের পত্রিকা জানান, সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপন ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর দেওয়া হয়েছিল সেটি নিয়েই রানিং স্টাফদের আন্দোলন। সেটির জন্য রেল মন্ত্রণালয় থেকে আবার নতুন করে চিঠি দেবে যে, রানিং স্টাফরা যে সুযোগ সুবিধা এখন পর্যন্ত পেয়ে আসছেন তা বহাল থাকবে। এটা রেল মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হবে।

এর আগে স্টাফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ব্যর্থ হয়। মঙ্গলবার রাতে উপদেষ্টার বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতা শিমুল বিশ্বাস, রেল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান এবং সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

উল্লেখ্য, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। কর্মবিরতির অংশ হিসেবে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর শিডিউলে থাকা ট্রেনগুলোতে ওঠেননি রানিং স্টাফরা। ফলে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। ফলে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। রানিং স্টাফের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকার পদধারীরা।

যেসব দাবিতে রানিং স্টাফদের আন্দোলন

নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।

মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাইলে সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানায়, '২০২২ সালের ২১ আগস্ট অর্থ বিভাগের ৯১নং স্মারকে জারীকৃত পত্রের (খ) অনুচ্ছেদটি অপরিবর্তিত রাখা হলো এবং (ক) অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপে সংশোধন করা হলো।'

সংশোধনে বলা হয়, 'রানিং স্টাফ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভ্রমণ ভাতা বা দৈনিক ভাতার পরিবর্তে রেলওয়ে এস্টাবিলিস্টমেন্ট কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং এলাউন্স প্রাপ্য হবেন। চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং এলাউন্স ছাড়া অন্য কোন ভাতা প্রাপ্য হবেন না এবং মাসিক রানিং এলাইন্সের পরিমাণ প্রাপ্য মূলবেতনের চেয়ে বেশি হবে না।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই মত জানার পর আরও ফুঁসে ওঠেন রানিং স্টাফরা। তারা বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ৮ ঘন্টা বেশি আমরা কাজ করবো। আমরা তো সবাই টাকার জন্যই কাজ করি। ৮ ঘন্টার বেশি কাজ করলে যদি টাকাই না দেয়, তাহলে আমরা কাজ করবো কেন?

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি জানিয়েছে, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

কর্মচারী সমিতি আরও জানিয়েছে, ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১১ জুন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই বছর ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়। ফলে রানিং স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত