সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছাড়া র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই: মার্কিন রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ২১: ৫৭

সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহি ছাড়া র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। 

তিনি বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি র‍্যাব চাই, যারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যেমন কঠোর থাকবে, তেমনি কঠোর থাকবে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে।’ বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেবে না বলেও উল্লেখ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ইউনাইটেড স্টেটস রিলেশনস: মুভিং টুয়ার্ডস এনহ্যান্সড কোঅপারেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপ’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।

আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির ও তারেক এ করিম। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। 

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীরে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত তিনটি ক্ষেত্র হচ্ছে— নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক। আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারি।’

নিরাপত্তায় সম্পর্ক জোরদারে দুটি মৌলিক চুক্তিতে যেতে পারে দুই দেশ জানিয়ে পিটার হাস বলেন, ‘একটি হলো, জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট, আরেকটি হলো অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিং অ্যাগ্রিমেন্ট। এ দুটি চুক্তি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। এগুলো কারিগরি চুক্তি। এগুলো জোট বা সামরিক চুক্তি নয়। কিংবা এগুলো কোনো বিস্তৃত ও অস্পষ্ট প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিও নয়— যেমনটি ২০০২ সালে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছিল।’

পিটার হাস বলেন, ‘র‍্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা জোরদার আইন প্রয়োগ বিষয়ে আমাদের এরই মধ্যে স্থাপিত শক্তিশালী নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারব না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব।’

সম্পর্কের আরেকটি ক্ষেত্র মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেখানে আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্র নিখুঁত নয়। আমরা আমাদের নিজেদের গণতান্ত্রিক নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এই যাত্রার মধ্যে রয়েছে পুলিশের জবাবদিহি বিষয়ে আমাদের নিজস্ব সমস্যা নিরসন এবং নির্বাচনের দিনে সমস্ত আমেরিকান যেন ভোট দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে আমরা সারা বিশ্বের দেশগুলোকেও তাদের গণতন্ত্রকে জোরদার করতে একই ধরনের অঙ্গীকার গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানোয় সন্তোষ প্রকাশ করে পিটার হাস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচনের দিন ভোটদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এরই মধ্যে নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আবশ্যক হলো নাগরিকদের মতামত প্রকাশ, সাংবাদিকদের ভীতিহীন অনুসন্ধান এবং সুশীল সমাজের ব্যাপক পরিসরে জনমত গঠনের সুযোগ নিশ্চিত করা।’

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ বেছে নেবে না। আমরা শুধু এমন একটি প্রক্রিয়ার প্রত্যাশা করি যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কে দেশ চালাবে।’ এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে এ আইন সংস্কারে আইনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। 

অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য মেধাস্বত্ব অধিকার, সরবরাহ ব্যবস্থার সক্ষমতা, মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসা পরিবেশের মতো বিষয়গুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ যেভাবে ইন্টারনেট কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে সেটি বিদেশি বিনিয়োগ ও বিভিন্ন কোম্পানির বাংলাদেশে ব্যবসা করার আগ্রহকেও প্রভাবিত করবে।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য অনুযায়ী র‍্যাব বাংলাদেশের এফবিআই। তাদের জবাবদিহির বিষয়ে আমি একমত। তবে এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোতেও স্থিতিশীলতা এনেছে।’

মুক্ত আলোচনায় র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে র‍্যাব হেলিকপ্টার ছাড়াও অনেক সরঞ্জাম পেয়েছে। এ ছাড়া অনেক প্রশিক্ষণও পেয়েছে। জবাবদিহি নিশ্চিতে ২০১১ সালে র‍্যাবের সদর দপ্তরে অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেলও মার্কিন দূতাবাসের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা হয়। এগুলোর সহযোগিতায় আমরা জঙ্গিবাদ, মানবপাচার ও মাদক পাচার দমনে সক্ষম হয়েছি। নিরাপদ ‍ও সুরক্ষিত সমাজের জন্য র‍্যাব যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে চায়। র‍্যাব ভবিষ্যতে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে চায়।’

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরীর বলেন, ‘পশ্চিম থেকে আমরা সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করলে শুরুতে সেটিকে অনেক দামি মনে হলেও এ সরঞ্জামগুলোর জীবনচক্র বেশি হয়। অন্য স্থান থেকে সামরিক সরঞ্জাম কম দামের হলেও তার জীবনচক্র খুবই সীমিত হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত