পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৭৮ বিডিআর জওয়ানের কারামুক্তিতে বাধা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদরে বিডিআর জওয়ানরা বিদ্রোহ করে। ওই ঘটনায় বাহিনীর মহাপরিচালক ও সেনা কর্মকর্তাসহ ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহিত

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কারাগারে আটক ১৭৮ জন বিডিআর জওয়ানের কারামুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই। আজ মঙ্গলবার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার চিফ প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

এর আগে গত রোববার এই মামলায় ওই ১৭৮ জনকে জামিন দেন ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া।

অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন বলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচারে এই আসামিরা নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা আসামিদের বিস্ফোরক মামলায় জামিন হওয়ায় তাঁদের কারাগার থেকে মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা নেই।

গত রোববার শুনানি শেষে জামিন দেওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুই শতাধিক বিডিআর জওয়ানের জামিন দেওয়া হয়েছে। পরে দেখা গেছে, ১৭৮ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন।

মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।

সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলা হয়। পরে অভিযোগপত্রে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা পৃথক হয়।

এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।

যেকোনো হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে অনুমোদনের জন্য আসে। পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাঁরা খালাস পেয়েছেন এবং যাঁদের সাজা কমেছে, এমন ৮৩ জন আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত