� কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন
� পাঁচ মন্ত্রণালয়-বিভাগের নথিসহ সব পুড়ে ছাই
� উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক, তদন্ত কমিটি
� নাশকতার ইঙ্গিত, মুখ খুলতে চান না কেউ
� ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু
অনলাইন ডেস্ক
গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাতে গিয়ে সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন সোয়ানুর জামান নয়ন নামের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। তবে ভয়াবহ এই আগুনের কারণ রহস্যঘেরা; যার কিনারা গতকাল রাত পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ এটিকে নাশকতা বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে কারও দিকে ইঙ্গিত করেননি কেউ। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকেও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো দেখেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, আগুনে নয়তলাবিশিষ্ট ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। এসব তলায় কিছুই অক্ষত নেই। কোথাও কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা, সিঁড়ির ঢালাই খসে পড়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে গত বুধবার সাধারণ ছুটি থাকায় সচিবালয়ও বন্ধ ছিল। প্রশাসনের এই প্রাণকেন্দ্র সুরক্ষিত। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পায়। দ্রুত ছয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে আরও ১৩টি ইউনিট যোগ দেয়। কিন্তু আগুন একপর্যায়ে ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আংশিক কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পুরো কার্যালয় রয়েছে। তবে ভবনটির পঞ্চম তলা থেকে নিচের দিকে আগুন ছড়ায়নি।
আগুনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের কার্যালয় বনানীর সেতু ভবনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।
সকাল থেকে সচিবালয়ে ঘুরে দেখা যায়, ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরো। ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। আটতলায় একটি মৃত কুকুর পাওয়া গেছে। ভবনের চারটি প্রবেশপথে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। চারজন উপদেষ্টা ছাড়া কাউকেই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ভবনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে চারটি ফ্লোর পুরো পুড়ে গেছে। শুধু তিনটি সিঁড়ির স্থান দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কারণে ওই অংশগুলো আগুনের চিহ্ন ধারণ করে কালো হয়ে আছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে তাদের করিডরে কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ইন্টেরিয়র করেছে। ফলে আগুন দ্রুত পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ আগুন জ্বলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাইরে বের হওয়ার পর আগুন লাগার বিষয়টি বোঝা যায়। আগুন নেভাতে কেন এত সময় লাগল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেক কর্মকর্তা।
বিকেলে সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার যে অবস্থা, তাতে তাঁরা কেউই নিরাপদ নন।
সচিবালয়ের প্রতিটি স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায়। ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর থেকে ওই ভবনের সব সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সিসি ক্যামেরা সচল করতে আলাদা কেব্ল স্থাপনের কাজ চলছিল।
সচিবালয়ে বিভিন্ন ভবনের যেসব ফ্লোরে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবদের দপ্তর, সেখানে ফ্লোরের এক পাশে মন্ত্রী এবং আরেক পাশে সচিবের দপ্তর। বাইরে থেকে দেখলে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবের দপ্তরেই শুধু আগুন লেগেছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে পুড়েছে পুরো ফ্লোর।
বিকেল ৫টার দিকেও পোড়া ফ্লোরগুলো থেকে উৎকট গন্ধ আসছিল। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি বিকেলেও ভবনের বিভিন্ন স্থান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলোয় যেসব কর্মকর্তার দপ্তর, তাঁরা সচিবালয়ে ঢুকে আক্ষেপ করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পুড়ে যাওয়ায় অনেকের মন খারাপ ছিল। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নথির সঙ্গে কক্ষে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসের সবই পুড়ে গেছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কম্পিউটারে তাঁর ব্যক্তিগত ও খুব প্রয়োজনীয় ডেটা ছিল, সবই শেষ।
গতকাল সচিবালয়ের চিত্র ছিল একেবারে অচেনা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টার মধ্যে সচিবালয়ের সামনে আসার আগেই প্রবেশের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুধু ৫ নম্বর ফটক খুলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। ঢোকার পর অনেকে ৭ নম্বর ভবনের সামনে ভিড় করেন। কোনো গাড়ি সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আগুনের কারণে ৭ নম্বর ভবন বিদ্যুৎহীন হওয়ার জেরে আরও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় সেসব ভবনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়।
কাজ না থাকায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটান। বেলা ১টার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে সচিবালয় থেকে বের হতে থাকেন। অফিস ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করেছেন।
সচিবালয়ে কোনো সাংবাদিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য কড়াকড়ি শুরুর আগে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. হামিদুর রহমান খান রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৭ নম্বর ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যালয় রয়েছে, আগামী রোববার থেকে সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের করা বিকল্প ব্যবস্থায় অফিস করবেন। এখন ভবনটি নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে রয়েছে। সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেলে ভবনটি আর ব্যবহার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা সচিবালয়ে খালি জায়গা খুঁজছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভবনটি পরিদর্শন করেন। আসিফ মাহমুদ এ সময় সাখাওয়াত হোসেনকে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’ সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
ঘটনাটি নাশকতা কি না, পরিদর্শনের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের আগে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কী হয়েছে, তা আমরা দেখব। পুরোটা তল্লাশির পর কিছু পাওয়া যায় কি না জানাব।’
৫ আগস্টের পর পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণ জানা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের গঠন করা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বড়দিনের ছুটির দিন রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে এরূপ নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত থাকতে পারে। তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় ঘটনাটি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কী কী নথি পুড়েছে
আগুনে ওই চার ফ্লোরের কাগজের সব নথিই পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এখন ই-নথিতে কাজ হয়। ফলে কম্পিউটার পুড়ে গেলেও এসব নথি সার্ভারে রয়েছে। তবে ই-নথি শুরুর আগে ম্যানুয়ালি যেসব কাজ হয়েছে, সেসব তথ্য-উপাত্ত পুড়েছে। সেগুলো আর পাওয়া যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কী পরিমাণ নথি সেসব ফ্লোরে ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোর মূল কপিও পুড়ে গেছে। কিছু কিছু নকশাও পুড়ে গেছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি কার্যক্রম অনলাইনে থাকায় আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারব। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের পুরোটাই অ্যানালগভাবে হয়। তাই যে শাখাগুলোর নথি পুড়েছে, সেগুলোর কতটা উদ্ধার করা যাবে, তা নিরূপণে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করে প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা
আগুনের ঘটনায় বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে জরুরি সভা করে উপদেষ্টা পরিষদ। পরে সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জরুরি বৈঠকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনাটি সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ, এটা আমাদের সবার নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে।’
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আগুন আরও আগে নেভানো যেত কি না, আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে কি না, কমিটির প্রতিবেদন না পেলে আমরা এগুলোর উত্তর দিতে পারব না। এ ঘটনার অবশ্যই একটা সুষ্ঠু এবং বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিত। আগুনের উৎসের বিষয়ে তদন্ত কমিটিই সঠিক বলতে পারবে। প্রাথমিক তথ্যের বিষয়টি সবাই জেনে গেছেন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন করে এসপি ও এএসপি এবং ৫৬০ জনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তে যত কমিটি
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত ও ইয়াসির আরাফাতকে সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পর এটি বাতিল করা হয়।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয় দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ একটি কমিটি করেছে।
গভীর রাতের আগুনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাতে গিয়ে সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন সোয়ানুর জামান নয়ন নামের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। তবে ভয়াবহ এই আগুনের কারণ রহস্যঘেরা; যার কিনারা গতকাল রাত পর্যন্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ এটিকে নাশকতা বলেও অভিযোগ করেছেন। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে কারও দিকে ইঙ্গিত করেননি কেউ। ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকেও ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো দেখেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, আগুনে নয়তলাবিশিষ্ট ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। এসব তলায় কিছুই অক্ষত নেই। কোথাও কোথাও দেয়ালের পলেস্তারা, সিঁড়ির ঢালাই খসে পড়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে গত বুধবার সাধারণ ছুটি থাকায় সচিবালয়ও বন্ধ ছিল। প্রশাসনের এই প্রাণকেন্দ্র সুরক্ষিত। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পায়। দ্রুত ছয়টি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে আরও ১৩টি ইউনিট যোগ দেয়। কিন্তু আগুন একপর্যায়ে ভবনের ষষ্ঠ তলা থেকে নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আংশিক কার্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পুরো কার্যালয় রয়েছে। তবে ভবনটির পঞ্চম তলা থেকে নিচের দিকে আগুন ছড়ায়নি।
আগুনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের কার্যালয় বনানীর সেতু ভবনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ।
সকাল থেকে সচিবালয়ে ঘুরে দেখা যায়, ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরো। ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। আটতলায় একটি মৃত কুকুর পাওয়া গেছে। ভবনের চারটি প্রবেশপথে পাহারায় রয়েছে পুলিশ। চারজন উপদেষ্টা ছাড়া কাউকেই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ভবনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে চারটি ফ্লোর পুরো পুড়ে গেছে। শুধু তিনটি সিঁড়ির স্থান দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কারণে ওই অংশগুলো আগুনের চিহ্ন ধারণ করে কালো হয়ে আছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে তাদের করিডরে কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ইন্টেরিয়র করেছে। ফলে আগুন দ্রুত পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ আগুন জ্বলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাইরে বের হওয়ার পর আগুন লাগার বিষয়টি বোঝা যায়। আগুন নেভাতে কেন এত সময় লাগল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেক কর্মকর্তা।
বিকেলে সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার যে অবস্থা, তাতে তাঁরা কেউই নিরাপদ নন।
সচিবালয়ের প্রতিটি স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায়। ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর থেকে ওই ভবনের সব সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সিসি ক্যামেরা সচল করতে আলাদা কেব্ল স্থাপনের কাজ চলছিল।
সচিবালয়ে বিভিন্ন ভবনের যেসব ফ্লোরে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবদের দপ্তর, সেখানে ফ্লোরের এক পাশে মন্ত্রী এবং আরেক পাশে সচিবের দপ্তর। বাইরে থেকে দেখলে উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও সচিবের দপ্তরেই শুধু আগুন লেগেছে বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে পুড়েছে পুরো ফ্লোর।
বিকেল ৫টার দিকেও পোড়া ফ্লোরগুলো থেকে উৎকট গন্ধ আসছিল। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি বিকেলেও ভবনের বিভিন্ন স্থান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলোয় যেসব কর্মকর্তার দপ্তর, তাঁরা সচিবালয়ে ঢুকে আক্ষেপ করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পুড়ে যাওয়ায় অনেকের মন খারাপ ছিল। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নথির সঙ্গে কক্ষে থাকা তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসের সবই পুড়ে গেছে। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কম্পিউটারে তাঁর ব্যক্তিগত ও খুব প্রয়োজনীয় ডেটা ছিল, সবই শেষ।
গতকাল সচিবালয়ের চিত্র ছিল একেবারে অচেনা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টার মধ্যে সচিবালয়ের সামনে আসার আগেই প্রবেশের সব ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুধু ৫ নম্বর ফটক খুলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। ঢোকার পর অনেকে ৭ নম্বর ভবনের সামনে ভিড় করেন। কোনো গাড়ি সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আগুনের কারণে ৭ নম্বর ভবন বিদ্যুৎহীন হওয়ার জেরে আরও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় সেসব ভবনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়।
কাজ না থাকায় বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটান। বেলা ১টার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে সচিবালয় থেকে বের হতে থাকেন। অফিস ছুটির নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করেছেন।
সচিবালয়ে কোনো সাংবাদিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশ্য কড়াকড়ি শুরুর আগে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. হামিদুর রহমান খান রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৭ নম্বর ভবনে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যালয় রয়েছে, আগামী রোববার থেকে সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়ের করা বিকল্প ব্যবস্থায় অফিস করবেন। এখন ভবনটি নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে রয়েছে। সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেলে ভবনটি আর ব্যবহার উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা সচিবালয়ে খালি জায়গা খুঁজছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভবনটি পরিদর্শন করেন। আসিফ মাহমুদ এ সময় সাখাওয়াত হোসেনকে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’ সাখাওয়াত হোসেন তাঁকে সান্ত্বনা দেন।
ঘটনাটি নাশকতা কি না, পরিদর্শনের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তের আগে এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কী হয়েছে, তা আমরা দেখব। পুরোটা তল্লাশির পর কিছু পাওয়া যায় কি না জানাব।’
৫ আগস্টের পর পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণ জানা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের গঠন করা উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, বড়দিনের ছুটির দিন রাতে জনমানবহীন অবস্থায় সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে এরূপ নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত থাকতে পারে। তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় ঘটনাটি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কী কী নথি পুড়েছে
আগুনে ওই চার ফ্লোরের কাগজের সব নথিই পুড়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এখন ই-নথিতে কাজ হয়। ফলে কম্পিউটার পুড়ে গেলেও এসব নথি সার্ভারে রয়েছে। তবে ই-নথি শুরুর আগে ম্যানুয়ালি যেসব কাজ হয়েছে, সেসব তথ্য-উপাত্ত পুড়েছে। সেগুলো আর পাওয়া যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কী পরিমাণ নথি সেসব ফ্লোরে ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোর মূল কপিও পুড়ে গেছে। কিছু কিছু নকশাও পুড়ে গেছে।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি কার্যক্রম অনলাইনে থাকায় আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারব। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের পুরোটাই অ্যানালগভাবে হয়। তাই যে শাখাগুলোর নথি পুড়েছে, সেগুলোর কতটা উদ্ধার করা যাবে, তা নিরূপণে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করে প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা
আগুনের ঘটনায় বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে জরুরি সভা করে উপদেষ্টা পরিষদ। পরে সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জরুরি বৈঠকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনাটি সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ, এটা আমাদের সবার নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে।’
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আগুন আরও আগে নেভানো যেত কি না, আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে কি না, কমিটির প্রতিবেদন না পেলে আমরা এগুলোর উত্তর দিতে পারব না। এ ঘটনার অবশ্যই একটা সুষ্ঠু এবং বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিত। আগুনের উৎসের বিষয়ে তদন্ত কমিটিই সঠিক বলতে পারবে। প্রাথমিক তথ্যের বিষয়টি সবাই জেনে গেছেন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন করে এসপি ও এএসপি এবং ৫৬০ জনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তে যত কমিটি
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত ও ইয়াসির আরাফাতকে সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের পর এটি বাতিল করা হয়।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয় দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ একটি কমিটি করেছে।
রাজধানীর গেন্ডারিয়ার শিশুরক্ষা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড না থাকায় ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর মামলা চলেছে। কিছুদিন আগে মামলার রায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুকূলে এলেও জমিটি এখনো বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে...
৭ ঘণ্টা আগেমিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি জেলেদের মূর্তিমান আতঙ্ক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। পাঁচ মাসে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে ১৩টি ঘটনায় আরাকান আর্মি ও সে দেশের নৌবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের ১০৬ জন অপহৃত হন। গতকাল মঙ্গলবারও সেন্ট মার্টিনের অদূরে সাগরে মাছ ধরার সময় দুটি ট্রলারসহ ১১ জেলেকে ধরে...
৭ ঘণ্টা আগেবিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘এখন আর সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট, অর্থাৎ সেরা মানুষেরা টিকে থাকবে—এই নীতি নয়; বরং যারা সবচেয়ে ভালো আলোচনা বা চুক্তি করতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে।’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ
৮ ঘণ্টা আগেসিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে খুলনায় ৩১, সিলেটে ১৮ এবং গাজীপুরে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
৮ ঘণ্টা আগে