Ajker Patrika

মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তারা দুর্নীতির ব্যারেজ খুলে রেখেছে: দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুন ২০২৪, ২২: ২৫
মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তারা দুর্নীতির ব্যারেজ খুলে রেখেছে: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘কোনো মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিধিতে দুর্নীতি দমনের কোনো কথা বলা নেই। মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সব মন্ত্রণালয় যেন দুর্নীতির ব্যারেজ খুলে রেখেছে! মন্ত্রণালয়গুলোর আইনে দুর্নীতিবিরোধী ধারা থাকতে হবে।’ 

 
আজ সোমবার দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড–২০২০, ২০২১–এর বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র‍্যাক) সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। 
 
এদিন ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক, মোছা. আছিয়া খাতুন, দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।  

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে যদি ব্যারেজ হিসেবে তুলনা করি, সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে রাখবেন, ব্যারেজ যে রেগুলেট করবে, ব্যারেজের সমস্ত দরজাগুলো উড়ে চলে যাবে, যদি আমি সমস্ত পয়েন্ট খুলে রাখি।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই দুর্নীতির সমস্ত পয়েন্ট সমস্ত মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে বসে আছে, আর আপনারা বলেন—দুর্নীতি দমন কমিশন কিছুই করছে না। এটা আপনাদের চিন্তা করার জন্য বলছি, আপনারা সমাজের বিবেক, আপনারা দুর্নীতি নিয়ে লিখেন।’ 

মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না উল্লেখ করে সাবেক সিনিয়র সচিব মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই যে বিভিন্ন দপ্তর প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হয় এটা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, তাদের কী কোনো দায়–দায়িত্ব নেই? দুর্নীতির তদন্ত করতে, অদক্ষতা, বিচক্ষণতার অভাব সেগুলোর তদন্ত করা। যদি কোনো দপ্তরের মধ্যম সারির কেউ দুর্নীতি করল, তার সুপারভাইজিং অফিসার, তার ওপরের অফিসার তা সুপারভাইজড করার কথা ছিল না? দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত কেন আসতে হলো? তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’ 

এসব বিষয় গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যদি আপনারা তুলে ধরেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের লোড (চাপ) যদি কিছু কমে আপনাদের কাঙ্ক্ষিত . যেটা আপনারা চান তার পুরোটা না করতে পারলেও কাছাকাছি যেতে পারব। কিন্তু সবাই ছেড়ে দিয়ে বসে আছে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন কী করে!’ 

শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা কঠিন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে দুর্নীতিতে নিজেকে যারা সম্পৃক্ত করে ফেলেছে তাদের ফিরিয়ে আনাটা একটু কষ্টকর। তাদের শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা কঠিন, কিন্তু যারা আগামীতে বিভিন্ন পেশায় যাবে তাদের টার্গেট করা উচিত, যে তারা যেন দুর্নীতিতে না যায়। এ জন্য আমাদের দুর্নীতির প্রতিরোধমূলক কাজ করতে হবে।’ 
 
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। দুদকের একার পক্ষে সব ধরনের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা ব্যবস্থা নিলে এত অভিযোগ দুদকে আসত না। তাদের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুদকে অভিযোগ কম আসবে—দুদক এটাই চায়। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি যেন না হয় তার জন্য প্রতিরোধ করা জরুরি। সাংবাদিকেরা যে কাজ করে, আর দুদক যে কাজ করে—এসব কাজ একে অপরের পরিপূরক।’  

এ সময় দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, ‘সমাজে যাদের ক্ষমতা আছে, তারাই দুর্নীতি করে। আপনারা সিআইপি, ভিআইপি—যাদের সম্মান দিয়ে এগিয়ে আনতে যান, তাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।’  
 
তিনি বলেন, ‘আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে তাঁদের মুখ উন্মোচন করতে হবে। সামাজিকভাবে তাঁদের বয়কট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের ভয় পেলে চলবে না। কালোকে সর্বদা কালো বলতে হবে, লেখনীতে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে।’  
 
দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘প্রতিযোগিতার জন্য জমা হওয়া প্রতিবেদনগুলোতে দুর্নীতির অনেক তথ্য–উপাত্ত এসেছে, সেগুলো দুদক আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালালে দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কে থাকবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবেন।’  
 
২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজয়ী ১২ জন সাংবাদিক দুদক চেয়ারম্যানের হাত থেকে ক্রেস্ট, সনদ ও আর্থিক সম্মানী গ্রহণ করেন।  
 
বিজয়ীরা হলেন:  
 ২০২০:  প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার সানাউল্লাহ সাকিব, দ্বিতীয় দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং তৃতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল।  
 
একই বছর ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুব কবীর চপল, দ্বিতীয় মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি কাওসার সোহেলী এবং তৃতীয় ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের মুহাম্মদ আরাফাতুল মোমেন।  
 
 ২০২১:  প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র রিপোর্টার আদনান রহমান, দ্বিতীয় আমাদের সময়ের সিনিয়র রিপোর্টার জিয়াদুল ইসলাম এবং জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল হক পাটওয়ারী। আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মো. আবদুল্লাহ আল রাফি, দ্বিতীয় মাছরাঙা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন এবং তৃতীয় মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি নূর সিদ্দিকী। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম ছেলে বিয়ে করে পরিবারহারা, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে ঢাকায় এসে ধর্ষণের শিকার

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

মাদারীপুরে ৩ খুন: ঘটনার পেছনে পা ভাঙার প্রতিশোধসহ ৩ কারণ

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুর ছবি-পরিচয় প্রকাশ করলেই আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত