ঋণের জালে দাস হয়ে পড়বেন ৩০ হাজার বাংলাদেশি, মালয়েশিয়া সরকারকে বিবেচনার অনুরোধ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ২৩: ০৩

ভিসা ও অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানো নিয়ে দেশটির সরকারকে সতর্ক করেছেন একজন অধিকারকর্মী। তিনি মালয়েশিয়া সরকারকে বলেছেন, এসব শ্রমিক মালয়েশিয়ায় পৌঁছাতে না পারলে তাঁরা ঋণের চাপে ‘আধুনিক দাসত্বের’ কবলে পড়বেন।

সংবাদমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

ঢাকা সূত্রের বরাত দিয়ে অ্যান্ডি হল নামের ওই অধিকারকর্মী বলেছেন, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য শ্রমিকেরা ধার করে এজেন্টদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। এখন তাঁরা মালয়েশিয়ায় আসতে না পারলে চরম বিপদে পড়বেন। তাঁরা তীব্র ঋণের চাপে আধুনিক দাসত্বের শিকার হবেন।

ব্রিটিশ নাগরিক অ্যান্ডি হল শ্রমিক অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি মূলত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন। ২০১৩ সালে ফিনওয়াচে সস্তা শ্রম ও শ্রমিক শোষণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর থাইল্যান্ডের ফলের বৃহৎ পাইকারি বিক্রেতা ন্যাচারাল ফ্রুট কোম্পানি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি আলোচনায় আসেন।

ফিনওয়াচ হলো ফিনল্যান্ডভিত্তিক একটি নাগরিক সংগঠন, যারা মূলত বিশ্বব্যাপী করপোরেট দায় নিয়ে কাজ করে।

অ্যান্ডি হল আশা করছেন, মালয়েশিয়া সরকার এই আটকা পড়া শ্রমিকদের দুর্দশার কথা বিবেচনা করবে এবং তাঁদের একটি সুযোগ দেবে। যাতে তাঁরা পরিকল্পনা অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় আসতে সক্ষম হন। একই সঙ্গে আগমনের সময় মানব পাচার-সম্পর্কিত তদন্ত করা যেতে পারে।

ওই অধিকারকর্মী বলেছেন, কয়েক দিন ধরে ঢাকা থেকে প্রায় ৫ হাজার কর্মী কুয়ালালামপুরে পৌঁছেছেন। তাঁদের অনেককে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রেও থাকার জায়গা দেওয়া হয়নি। যখন কর্মীদের এজেন্টরা নিয়োগকর্তাদের সন্ধান করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফ্লাইট সংকট এবং কয়েক দিন আগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১০-৩০ হাজার অনুমোদিত শ্রমিক বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কুয়ালালামপুরে পৌঁছাতে পারছেন না। তিন দিন ধরে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (কেএলআইএ) টার্মিনাল-১ এবং ২ এ উপচে পড়া ভিড়ই তার প্রমাণ। তাঁদের মধ্যে অনেকে নিয়োগকর্তার হদিস না পাওয়া টার্মিনালে আটকে আছেন। 

অ্যান্ডি হল আরও বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতারিত এবং কাজ ছাড়াই কুয়ালালামপুর অবতরণ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে। ঢাকায় নানা সিন্ডিকেট শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় নিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে। 

অ্যান্ডি হল কেএলআইএ ইমিগ্রেশন অফিসারের একটি চিঠিও দেখেছেন, ওই চিঠিতে দেশটির সরকার সময়সীমা বাড়ায়নি, যার অর্থ আগামীকাল যারা আসবে, তাঁদের আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে; কারণ, তাঁদের পারমিটের মেয়াদ শেষ বলে বিবেচিত হবে। আগামীকাল শনিবার থেকে ঢাকা-কুয়ালালামপুর ফ্লাইটে শ্রমিক ভিসাধারীদের উঠতে না দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সব এয়ারলাইনসকে নির্দেশও দিয়েছে। কারণ, তাঁদের ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে। এতে ১০ থেকে ৩০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক চরম সংকটে পড়বেন। 

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের ডিরেক্টর-জেনারেল রুসলিন জুসোহ বলেছেন, নিয়োগকর্তারা সময়সীমার মধ্যেই শ্রমিকদের মালয়েশিয়ার আনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কেএলআইএতে উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। 

এর আগে, গত ১ মার্চ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, বিদেশি কর্মীদের জন্য অব্যবহৃত কোটা ১ জুন বাতিল করা হবে। কারণ, দেশটি বিদেশি কর্মী নিয়োগের কোটা বাতিল করতে চায়; যা গত বছরের মার্চ মাসে স্থগিত করা হয়েছিল।

টার্মিনালে বিপুলসংখ্যক বিদেশি কর্মীদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে মালয়েশিয়ায়। এত ভিড়ের জন্য রুসলিন নিয়োগকর্তাদের দায়ী করে বলেছেন, সময়সীমা অতিক্রম করার জন্য তাঁরা ‘শেষ মুহূর্তে’ বিদেশি শ্রমিক নিয়ে আসেন। 

২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৪ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেছেন। এটি মালয়েশিয়ার ৫ লাখ কর্মী নেওয়ার প্রকল্পের অংশ।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় প্রতারিত বাংলাদেশিদের দুর্দশার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এর পরপরই মালয়েশিয়ার সরকার এই সময়সীমা বেঁধে দেয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত