Ajker Patrika

সরকারি কর্মচারীদের মূল্যায়নে আসছে সফটওয়্যারভিত্তিক গ্রেডিং পদ্ধতি

শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১: ৪৯
সরকারি কর্মচারীদের মূল্যায়নে আসছে সফটওয়্যারভিত্তিক গ্রেডিং পদ্ধতি

সরকারি কর্মচারীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বদল আসছে। বিদ্যমান বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) বাদ দিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন (এপিএআর) পদ্ধতি প্রণয়নে অনুশাসনমালার খসড়া করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এটি চালু হলে নবম থেকে দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মচারীদের পাঁচটি গ্রেডে মূল্যায়ন করা হবে। ভালো গ্রেডপ্রাপ্তদের দেওয়া হবে প্রণোদনা। আর খারাপ গ্রেড পেলে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ, বই বা জার্নাল পড়া এবং অন্য কর্মচারীর অধীনে কাজ করতে হবে।

বিদ্যমান এসিআর পদ্ধতিতে ঊর্ধ্বতনেরা অধীনস্থ কর্মচারীদের শুধু পেশাগত মূল্যায়ন করেন। তবে কে কত নম্বর পান, তা জানার কোনো সুযোগ নেই। এপিএআর চালু হলে কর্মচারীদের কাজের জন্য ৬০ নম্বর থাকবে, আর বাকি ৪০ নম্বর ব্যক্তিগত ও পেশাগত মূল্যায়ন করা হবে। অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে এপিএআর করা হবে। এ জন্য কে কী করবেন, কমপক্ষে এমন ১২টি কাজের তালিকা জুন মাসে দিতে হবে। 

এপিএআরের খসড়া অনুশাসনমালায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মস্থলে টানা তিন মাস দায়িত্ব পালন করলে এপিএআর দাখিল করতে হবে। তবে গ্রেড-১ ও তদূর্ধ্ব কর্মচারী, চুক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত, শিক্ষানবিশ এবং যাঁদের চাকরি স্থায়ী হয়নি, তাঁদের এপিএআর দিতে হবে না। 

সরকার বলছে, স্বচ্ছ, আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি ব্যবহার করে কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা বাড়াতে এপিএআর করা হচ্ছে। অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এপিএআর পরিচালিত হবে। এপিএআরে ৯৬-১০০ নম্বর পেলে ‘এ প্লাস’, ৮৫-৯৫ নম্বরে ‘এ’, ৭৫-৮৪ নম্বরে ‘বি’, ৬৬-৭৪ নম্বরে ‘সি’ এবং ৬৫ বা কম নম্বর পেলে আইআর (ইমপ্রুভমেন্ট রিকুইয়ার্ড) গ্রেড দেওয়া হবে। কোনো কর্মচারী যে দপ্তরে কর্মরত, সেই কর্মস্থলের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে পাওয়া নম্বর নির্ধারিত অনুপাতে সমন্বয়ের পর প্রণোদনা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য নম্বর সংযোজন বা বিয়োজনের পর চূড়ান্ত বার্ষিক এপিএআর নম্বর নির্ধারণ করা হবে। 

এপিএআরে ‘এ প্লাস’ ও ‘এ’ গ্রেডপ্রাপ্তদের প্রণোদনা দেবে সরকার। বিদেশ সফর ও বিদেশে প্রশিক্ষণে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ‘এ প্লাস’ গ্রেডধারীদের মন্ত্রী-সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে প্রশংসাপত্র, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ওয়েবসাইটে ছবি প্রকাশ এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে মতবিনিময়ের জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। আর ‘এ’ গ্রেডধারীদের প্রশংসাপত্র দেওয়ার সঙ্গে তাদের ছবি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। 

খসড়ায় বলা হয়েছে, যারা ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘আইআর’ গ্রেড পাবেন তাঁদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনার পাশাপাশি কোনো দপ্তর বা কারও অধীনে সংযুক্তিতে থাকতে হবে। এই তিনটি শ্রেণিতে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর দুটি করে বিষয়ে প্রতিকারের পরামর্শ পাবেন তাঁরা। 

প্রতিকার হিসেবে ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘আইআর’ গ্রেডপ্রাপ্তদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাবলিক পলিসি, পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা, জেনারেল ফাইন্যান্সিয়াল রুলস, স্থানীয় সরকার, উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া নিজ উদ্যোগে তথ্যপ্রযুক্তি, বিদেশি ভাষা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, চ্যালেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট বা লিডারশিপ কোর্স উদ্বুদ্ধকরণ এবং আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। 

নির্ধারিত তালিকা থেকে ‘আইআর’ গ্রেডপ্রাপ্তদের সর্বোচ্চ তিনটি, ‘সি’ গ্রেডপ্রাপ্তদের দুটি এবং ‘বি’ গ্রেডপ্রাপ্তদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। ‘আইআর’ গ্রেডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই মাস, ‘সি’ গ্রেডের দেড় মাস এবং ‘বি’ গ্রেডের প্রশিক্ষণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে এক মাস। 

এ ছাড়া সরকারি দায়িত্ব পালনে দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত বই ও জার্নাল পাঠের পরামর্শ দেওয়া যাবে। ‘আইআর’ গ্রেডপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এক হাজার পৃষ্ঠার সর্বোচ্চ তিনটি, ‘সি’ গ্রেডপ্রাপ্তদের ৬০০ পৃষ্ঠার দুটি, ‘বি’ গ্রেডপ্রাপ্তদের ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বই বা জার্নাল পাঠের পরামর্শ দেওয়া যাবে। যেসব বাই বা জার্নাল পড়ার পরামর্শ দেওয়া হবে সরকার সেই তালিকা করে সেগুলোর ফটোকপি সিস্টেমে আপলোড করবে।

এর বাইরে কোনো কর্মচারীকে কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কোনো ইউনিট, প্রকল্প, কার্যক্রমের সঙ্গে অথবা কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মচারীর অধীনে সর্বোচ্চ ১০ দিনের জন্য সংযুক্তির পরামর্শ দেওয়া যাবে। এই সময়সীমা সংযুক্তি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে বাড়াতে পারবে, তবে তা তিন মাসের বেশি হবে না। গ্রেড ২, গ্রেড ৩-এর কর্মচারীদের সংযুক্তির পরামর্শ দেওয়া যাবে না। 

প্রতিকারের পরামর্শ পাওয়ার পর থেকে ‘আইআর’ গ্রেডপ্রাপ্ত কর্মচারীদের এক বছর, ‘সি’ গ্রেডপ্রাপ্তদের নয় মাস এবং ‘বি’ গ্রেডপ্রাপ্তদের ছয় মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আগের মতোই কর্মচারীদের পদোন্নতিতে এপিএআর বিবেচনায় নেওয়া হবে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সহিদউল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূল্যায়ন শেষে ভালো করলে পুরস্কার দেওয়া হবে আর কেউ খারাপ করলে তাদের পরামর্শ দেওয়া হবে। কারণ কাউকে পানিশমেন্ট দেওয়ার জন্য এটা করা হচ্ছে না। আমরা চাই সবাই যাতে ইম্প্রুভ করতে পারে।’

মো. সহিদউল্যাহ বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনলাইনের মাধ্যমে এপিএআর করা হবে। বিদ্যমান এসিআর পদ্ধতিতে শুধু পেশাগত মূল্যায়ন করা হয়, কর্মচারীদের কর্মকে মূল্যায়নে আনা হয় না। এখন থেকে ৬০ নম্বরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হবে। বাকি ২০ নম্বর ব্যক্তিগত ও ২০ নম্বর পেশাগত মূল্যায়ন করা হবে। কাজের জন্য মূল্যায়ন করে ৬০ নম্বর কর্মচারী নিজে নিজেই দেবেন, সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত আপলোড করবেন। অনুস্বাক্ষরকারীর আপত্তি থাকলেও তারা আলোচনা করে নম্বর ঠিক করবেন। কাজের মূল্যায়নে কে কত নম্বর পেলেন তা জানতে পারবেন।’ 

একজন কর্মচারীকে এক বছরের জন্য ন্যূনতম ১২টি কাজের পরিকল্পনা দিতে হবে জানিয়ে সহিদউল্যাহ বলেন, ‘কেউ চাইলে বেশি কাজের পরিকল্পনা দিতে পারবেন। কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করে তা অনুমোদন করবে। পরিকল্পনা রিভিউয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। কারণ কোনো সময়ে সরকারের মনে হতে পারে কোনো একটি প্রকল্প বা কাজ বাস্তবায়নের দরকার নেই।’

এসিআর নিয়ে অনেক জটিলতা ও ভোগান্তি ছিল জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব সহিদউল্যাহ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সিস্টেমে এপিএআর দাখিল করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা অনুস্বাক্ষরকারীর কাছে চলে যাবে। অনুস্বাক্ষরকারী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুমোদন না করলে তার এপিএআর থেকে নম্বর কাটা যাবে। ফলে সবার মধ্যে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে। কেউ ভালো কাজ করলে তাকে কম নম্বর দেওয়ার সুযোগ নেই।’

এপিএআর বাস্তবায়ন হলে কোনো দপ্তরে যখন যে ধরনের কর্মচারীর প্রয়োজন হবে মুহূর্তের মধ্যেই তা পাওয়া যাবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এটা বের করে দেবে। প্রত্যেক কর্মচারীর আলাদা প্রোফাইল তৈরি হবে। সেখানে ‍তিনি এখন কী করছেন, আগে কী কী করেছেন, কোন কোন বিষয়ে তিনি বেশি পারদর্শী, সেসব বিষয়ের উল্লেখ থাকবে।

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত