Ajker Patrika

তরুণ প্রজন্ম ঘুণে ধরা সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হতে চায়: প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ২৩
নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও সহঅধিনায়কের হাতে একুশে পদক তুলে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: আজকের পত্রিকা
নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও সহঅধিনায়কের হাতে একুশে পদক তুলে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের তরুণ প্রজন্ম ঘুণে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৫ সালের একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ বছর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নারী ফুটবল দলকে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি শক্তিশালী, উদ্যমী এবং সৃজনশীল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যে কোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চাইতে দুঃসাহসী।’

তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায় মন্তব্য করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তারা একই আত্মবিশ্বাসে নতুন পৃথিবীর সৃষ্টি করতে চায়। নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে তারা নেতৃত্ব দিতে চায়। সে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত। ছেলেরাও প্রস্তুত, মেয়েরাও প্রস্তুত।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা (তরুণ প্রজন্ম) ঘুণে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়। যে সভ্যতার মূল লক্ষ্য থাকবে পৃথিবীর সকল সম্পদের ওপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন দেখার এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সকল সুযোগ নিশ্চিত করা। মানুষের জীবনযাত্রাকে এমনভাবে গড়ে তোলা, যাতে করে পৃথিবীর অস্তিত্ব কোনো রকম বিঘ্নিত না হয় এবং পৃথিবীর ওপর বসবাসরত সকল প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকা কোনোক্রমেই বিঘ্নিত না হয়।’

একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের স্বাধিকার চেতনার প্রাণপ্রবাহ একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের পক্ষ থেকে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও সহ অধিনায়ক মারিয়া মান্দা পদক গ্রহণ করেন। পরে নারী ফুটবল দলের সব সদস্য মঞ্চে ওঠেন। পদক গ্রহণ শেষে পদকপ্রাপ্ত ও পরিবারের সদস্যরা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্তরা হলেন—চলচ্চিত্রে আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), সংগীতে ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) ও ফেরদৌস আরা, আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুন ও চিত্রকলায় রোকেয়া সুলতানা। সাংবাদিকতায় মাহ্ফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর), গবেষণায় মঈদুল হাসান, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান।

এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহদী হাসান খান (দলনেতা), রিফাত নবী (দলগত), মো. তানবিন ইসলাম সিয়াম (দলগত) ও শাবাব মুস্তাফা (দলগত)। সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) ও শহীদুল জহির (মো. শহিদুল হক) (মরণোত্তর)। সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে মাহমুদুর রহমান, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহিদুল আলম এবং ক্রীড়ায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।

প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজের পক্ষে তাঁর বড়ভাই দুলাল আবদুল হাফিজ পদক গ্রহণ করেন। পরে অনুভূতি ব্যক্ত করে দুলাল আবদুল হাফিজ বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা প্রাপ্তি যে কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য একদিকে যেমন গৌরব ও আনন্দের অনুভূতি, তেমনি মরণোত্তর পদক ও সম্মাননা গৌরব এবং আনন্দের পাশাপাশি অনেকটা বেদনাবিধুর অনুভূতিও বটে।’ ছোট ভাইয়ের পদক গ্রহণে বেদনাবিধুর পরিস্থিতির শিকার বলে মনে করে তিনি।

উন্নত দেশে মরণোত্তর সম্মাননা বিরল উল্লেখ করে আবদুল হাফিজ বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে এ সংস্কৃতি বেশ চালু রয়েছে, যা থেকে আশু নিষ্কৃতির প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

তিনি মরণোত্তর সম্মাননার বিকল্প চিন্তা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্মোহ ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন, গুণীজনের জীবদ্দশায় বাধ্যতামূলক করা যায় কি না!’

পদক প্রদান অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন—মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। বক্তব্য রাখেন- সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত