Ajker Patrika

ঘুষ বলে দেয় মৃত্যুর কারণ

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

ঘুষ-দুর্নীতির যে শিকড় এ দেশে গজিয়েছে তা এতটাই বিস্তৃত, সরকারের অদল-বদল কিংবা আইনশৃঙ্খলার কঠোরতাকে থোড়াই পাত্তা দেয়! কিছুতেই যেন এই অপরাধের তাণ্ডবনৃত্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই খবর—টাকার বিনিময়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিরুদ্ধে। দুদক অভিযান চালিয়ে পেয়েছে প্রাথমিক প্রমাণ। এই ঘটনা নিয়ে ২৭ জানুয়ারির আজকের পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

ময়নাতদন্ত পরিবর্তনের এই খবর পড়ে নিশ্চয়ই অনেক জ্যেষ্ঠ পাঠক মনে করতে পারেন ১৯৭৮ সালের একটি হত্যাকাণ্ডের কথা। সে সময়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল সালেহা হত্যাকাণ্ড। চিকিৎসক স্বামী ইকবালের পরকীয়ার বলি হতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু নিজ কর্মস্থলে স্ত্রীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত পরিচিতজনের হাতে করিয়ে নিজের হাতেই তদন্তের প্রতিবেদন তুলে নেন ইকবাল। অবশ্যই সেই প্রতিবেদন ছিল বানোয়াট! দ্বিতীয় দফায় আবারও তদন্ত হয়, আবারও প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় সালেহা আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তৃতীয়বার সালেহার পরিবার তাদের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে অন্য জায়গায় ময়নাতদন্ত করালে সত্যটা বেরিয়ে আসে—মাথায় আঘাতের পর ধারালো ব্লেড দিয়ে কাটা হয়েছিল সালেহার গলা। প্রমাণিত হয় এই কাজটি করেছিলেন তাঁরই স্বামী। ফাঁসি হয় ইকবালের।

একটি হত্যাকাণ্ডে শুধু একটি স্বচ্ছ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন যে একজন অপরাধীকে শনাক্ত করতে কতটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে, এই ঘটনাটি তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটে এবং তা ঘটে লজ্জাজনকভাবে—ঘুষের বিনিময়ে!

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ও গাজীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয় মিলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে অভিযান চালিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। অভিযানের সময় এই টিম ছদ্মবেশে ময়নাতদন্তের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা টাকার বিনিময়ে প্রতিবেদন বদলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া এ-সম্পর্কিত কথোপকথনের কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়, যেখানে ঘুষ লেনদেনের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়।

যাঁরা ঘুষ নিয়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ বদলে ফেলেন, তাঁরা কি একবারও ভেবে দেখেছেন, যে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করবেন সেই নিথর দেহটা হতে পারত আপনার বন্ধু কিংবা স্বজনের? তাঁদের প্রতি হওয়া অন্যায়কে কি অর্থের বিনিময়ে বিকিয়ে দিতে পারতেন?

আসলে যাঁরা নিজেদের নীতি আর বিবেক বিকিয়ে চলেন, তাঁদের কাছে সততার আশা করাটাও হয়তো সময়ের অপচয়! হয়তো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তনের এ রকম আরও ঘটনা সম্পর্কে আমরা অজ্ঞাত রয়ে গেছি। হয়তো অনেক হন্তারক আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। হয়তো অনেক অপরাধের সত্য আড়ালে রয়ে গেছে। এগুলোর কোনোটিই কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা সব সময় চাই—অপরাধী ধরা পড়ুক, আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হোক। নয়তো নির্মমতার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে।

তাজউদ্দীন হাসপাতালের ঘটনাতেও প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ুক—যারা ঘুষ নেয় এবং যারা ঘুষ দেয়—কোনো পক্ষেরই যেন সহজ সাজা না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত