দেশে গণতন্ত্র-আইনের শাসন না থাকলে মানবাধিকার থাকে না: নুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭: ৪৮

দেশে গণতন্ত্র-আইনের শাসন না থাকলে মানবাধিকার থাকে না। দেশে মানবাধিকার নাই, তাই মানবাধিকার দিবসে আজকে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে — বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। 

গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় ভিন্নমতের মানুষকে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ। আজ রোববার বিজয়নগর পানিরট্যাংকির সামনে সমাবেশ শেষে র‍্যালি বের করে পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়ের কদম ফোয়ারা, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক ও নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে পানিরট্যাংকির মোড়ে এসে শেষ হয়। 

নুর বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র-আইনের শাসন না থাকলে মানবাধিকার থাকে না। দেশে মানবাধিকার নাই, তাই মানবাধিকার দিবসে আজকে আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমরা একটা স্বাধীন ভূখণ্ড পেলেও স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য; রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তি অর্জন করতে পারিনি। এদেশের নির্বাচনে কারা সরকার গঠন করবে, কারা বিরোধী দল হবে, কারা এমপি হবে সেটা ঠিক করে দিচ্ছে পাশের দেশ। আওয়ামী লীগ ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশটাকে ধ্বংস করছে। সরকার দেশের নিজস্ব কাঁচামাল পাট, চিনি, চামড়া শিল্প ধ্বংস করেছে। এখন ভারতীয় ষড়যন্ত্রে রপ্তানি খাতের “সোনার ডিম পাড়া হাস” গার্মেন্টসকেও ধ্বংসের দিকে নিচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ হয়েছে গার্মেন্টস শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে পারে।’

নুর বলেন, ‘পুলিশ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে হয়রানি করছে, মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে। গতরাতে আমাদের নারায়ণগঞ্জের এক নেতাকে না পেয়ে তার ভাইকে গ্রেপ্তার করেছিল। যাকে আটক করে সে একজন অসুস্থ মানুষ, আজকে তার অপারেশন। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তারপর ছাড়ছে। এর আগে হাতিরঝিল থানায় আমাদের উজ্জ্বলকে আটক করে, আমি ফোন দিলে ওসি বলে ভাই আপনারা মিছিল মিটিং করেন, ছবি তুলে, ভিডিও করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠান। আমাদেরও কিছু করে ওপরে দেখাতে হয়। এভাবে প্রত্যেক থানায় গ্রেপ্তারের টার্গেট দেওয়া হয়, মামলার টার্গেট দেওয়া হয়। পুলিশ মৃত মানুষকে দৌড়াতে দেখে, মৃত মানুষকে মামলার আসামি করে। পুলিশ যে এভাবে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, হয়রানি করছে সেটা পরিষ্কার।’ 

বিরোধী দল দমনের বিষয়ে নুর বলেন, ‘বিরোধী দল দমনে পুলিশ এখন রক্ষী বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ আওয়ামী সরকারের গোলামি করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এভাবে চলতে থাকলে র‍্যাবের মতো পুলিশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসবে।’ 

এই আন্দোলন শুধু বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদের আন্দোলন নয় মন্তব্য করে নুর বলেন, ‘এটা গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সকলকে এই আন্দোলনে শরিক হতে হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনকে প্রতিহত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি এলাকায় গণপ্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে।’ 

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণ রাজপথে নেমেছে। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, আজকে বিএনপি-জামায়াত নাশকতা করবে। কিন্তু কোথাও নাশকতা হয়নি। বরং সকালে জামায়াতের মানববন্ধনে লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সর্বত্র সরকার জামায়াত জুজু সৃষ্টি করেছে। অথচ ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল।’ 

রাশেদ বলেন, ‘এই গণবিরোধী সরকারের আমলে প্রতিটা নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দুই স্বৈরাচার মিলে নির্বাচনের নামে তামাশা করছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে এই দুই স্বৈরাচার, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার হরণকারী আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বয়কট ঘোষণা করা হলো। পুলিশও চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। মৃত ব্যক্তিদের দৌড়ে পালাতে দেখছে। চট্টগ্রামের এক ওসি মাসে দেড় কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে বলে নিউজ হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নামে বাণিজ্য করছে। এভাবেই রাষ্ট্রের প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে সরকার। এই রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্যই রাজপথে নেমেছি আমরা।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত