রেজা করিম, ঢাকা
সমমনাদের নিয়ে বিএনপির সরকার পতনের জমানো আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে ২০২৩ সালের শেষভাগে। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগেই বিদায়ী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। এর ফলে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার অপেক্ষা দীর্ঘতর হতে থাকে। ক্ষমতায় ফিরতে বিএনপিকে অন্তত আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে— নেতা-কর্মীদের মনে এ ধারণা প্রায় পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর আগেই কোটা সংস্কারের আন্দোলন দলটির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কোটার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে বিদায়ী বছরে বিএনপিতে স্বস্তি ফিরেছে; প্রশস্ত হয়েছে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা স্বস্তির আকাশে কালো মেঘ হিসেবে দেখা দিয়েছে। পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই দলটি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত কোনো স্বস্তিই ‘বিশেষ কিছু নয়’ বলে মনে করছেন নেতারা।
এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখন মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, বিদায়ী বছরে আমাদের প্রাপ্তি এটাই। তবে চারিদিকে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, এত এত মানুষ প্রাণ দিয়েছে, আত্মত্যাগ করেছে, তার মূল্য দিতে হবে। আমরা চাই নতুন বছরে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।’
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় বিএনপির। পট পরিবর্তনের পরের দিনই (৬ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশে কারামুক্ত হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর একে একে কারামুক্ত হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান নেওয়া দলটির নেতা-কর্মীরাও দেশে ফিরতে থাকেন। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন দলটির পছন্দের লোকেরা।
বিগত সময়ের চেয়ে সভা ও সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়েছে কয়েক গুণ। দল গোছানোর পাশাপাশি ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে দেশব্যাপী কাজ করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপি জনগণের ভোট বিজয়ী হবে বলে বিশ্বাস করেন তাঁরা। বলা চলে, ক্ষমতা ও বিএনপির মাঝে এখন শুধুই নির্বাচন। দলের বাইরেও আছে এই আলোচনা। কিন্তু সেই নির্বাচনকে সামনে রেখেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে দলটিকে। এরই মধ্যে নীতি নির্ধারকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রায় ৫ মাস মাস হতে চললেও রোডম্যাপ না দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই ঘোষণায় অনেকটাই হতাশ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে’ টালবাহানা হিসেবে দেখছে দলটির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, সংস্কারে আপত্তি নেই, কিন্তু গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচিত সরকার না থাকলে নানা ষড়যন্ত্র হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার বলেছেন, সংস্কারের জন্য নির্বাচন বন্ধ থাকতে পারে না।
নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিএনপির জন্য বিপদ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগবিহীন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপির সমকক্ষ কোনো দল নেই। তাদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থেকে নির্যাতিত হিসেবে দলটির প্রতি ভোটারদের একধরণের সহানুভূতিও আছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে তারাই ভাল করবে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু নির্বাচন বিলম্বিত হলে তা দলটির জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভিতরে তো চাপ আছেই। অন্যদিকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী মাঠ দখলের চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে প্রভাবশালী জায়গাগুলোতে দলটি (জামায়াত) তাদের অবস্থান সুসংহত করতে পেরেছে। অন্যদিকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলাপও আছে। সব মিলিয়ে এসব বিষয় বিএনপির জন্য অবশ্যই ভাবনার। এ অবস্থায় নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিএনপির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, পটপরিবর্তনের পর এরই মধ্যে সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দখল-চাদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে, যা দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে নেতা-কর্মীদের অপকর্ম আরও বেড়ে যাবে। তাতে করে জনসমর্থন কমার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অন্যদিকে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা নিয়েও কথা বলছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পরিবর্তিত সময়ে শুধু শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে আস্থায় নেওয়া কঠিন। জনগণ যাতে বিশ্বাস করে যে, ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি সত্যি সত্যি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে, সেভাবে কৌশল ঠিক করতে হবে। এটাও বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অস্বস্তির মধ্যেও বিএনপির জন্য স্বস্তিদায়ক ব্যাপার হলো— পট পরিবর্তনের পর নতুন রূপে দেখা যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন বক্তৃতায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে পরিপক্ক রাজনীতিকের পরিচয় এনে দিয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তারেক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষ নেই— এটি ভাবা যাবে না। অতীতের যে কোনো নির্বাচনের থেকে এই নির্বাচন হবে অনেক-অনেক কঠিন। তাই নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দল। আগামী নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তাবনা ও দলীয় নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। এবারের নির্বাচনে সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় নামতে হতে পারে বিএনপিকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলকে নিয়ে ইসলামী ফ্রন্ট এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-তরুণদের সম্ভাব্য নতুন দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটিকে।
একই সঙ্গে বিএনপিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে হবে দেশকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশের সামরিক-বেসামরিক শক্তি ও সুশীল সমাজের সমর্থন আদায়ও করতে হবে। সঙ্গে রয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ।
নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করতে পারাকে ২০২৪ এর বড় অর্জন হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে গণতন্ত্র পুঃনপ্রতিষ্ঠায় নতুন বছরে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে চায় বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
গত দেড় দশক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকে কারাগাভোগ ও আত্মগোপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২০২৪। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ৭ জানুয়ারীর ডামি নির্বাচনের ভোট বর্জনে সফল হয় বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে শরীক দল ও সংগঠনে ভাঙনের চেষ্টা বিফল করে দেওয়া আরেকটি বড় অর্জন বলে মনে করে দলটি।
সমমনাদের নিয়ে বিএনপির সরকার পতনের জমানো আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে ২০২৩ সালের শেষভাগে। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগেই বিদায়ী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। এর ফলে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার অপেক্ষা দীর্ঘতর হতে থাকে। ক্ষমতায় ফিরতে বিএনপিকে অন্তত আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে— নেতা-কর্মীদের মনে এ ধারণা প্রায় পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর আগেই কোটা সংস্কারের আন্দোলন দলটির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কোটার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে বিদায়ী বছরে বিএনপিতে স্বস্তি ফিরেছে; প্রশস্ত হয়েছে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা স্বস্তির আকাশে কালো মেঘ হিসেবে দেখা দিয়েছে। পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই দলটি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত কোনো স্বস্তিই ‘বিশেষ কিছু নয়’ বলে মনে করছেন নেতারা।
এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখন মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, বিদায়ী বছরে আমাদের প্রাপ্তি এটাই। তবে চারিদিকে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, এত এত মানুষ প্রাণ দিয়েছে, আত্মত্যাগ করেছে, তার মূল্য দিতে হবে। আমরা চাই নতুন বছরে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।’
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় বিএনপির। পট পরিবর্তনের পরের দিনই (৬ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশে কারামুক্ত হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর একে একে কারামুক্ত হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান নেওয়া দলটির নেতা-কর্মীরাও দেশে ফিরতে থাকেন। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন দলটির পছন্দের লোকেরা।
বিগত সময়ের চেয়ে সভা ও সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়েছে কয়েক গুণ। দল গোছানোর পাশাপাশি ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে দেশব্যাপী কাজ করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপি জনগণের ভোট বিজয়ী হবে বলে বিশ্বাস করেন তাঁরা। বলা চলে, ক্ষমতা ও বিএনপির মাঝে এখন শুধুই নির্বাচন। দলের বাইরেও আছে এই আলোচনা। কিন্তু সেই নির্বাচনকে সামনে রেখেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে দলটিকে। এরই মধ্যে নীতি নির্ধারকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রায় ৫ মাস মাস হতে চললেও রোডম্যাপ না দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই ঘোষণায় অনেকটাই হতাশ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে’ টালবাহানা হিসেবে দেখছে দলটির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, সংস্কারে আপত্তি নেই, কিন্তু গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচিত সরকার না থাকলে নানা ষড়যন্ত্র হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার বলেছেন, সংস্কারের জন্য নির্বাচন বন্ধ থাকতে পারে না।
নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিএনপির জন্য বিপদ হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগবিহীন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপির সমকক্ষ কোনো দল নেই। তাদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থেকে নির্যাতিত হিসেবে দলটির প্রতি ভোটারদের একধরণের সহানুভূতিও আছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে তারাই ভাল করবে এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু নির্বাচন বিলম্বিত হলে তা দলটির জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভিতরে তো চাপ আছেই। অন্যদিকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী মাঠ দখলের চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে প্রভাবশালী জায়গাগুলোতে দলটি (জামায়াত) তাদের অবস্থান সুসংহত করতে পেরেছে। অন্যদিকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলাপও আছে। সব মিলিয়ে এসব বিষয় বিএনপির জন্য অবশ্যই ভাবনার। এ অবস্থায় নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিএনপির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, পটপরিবর্তনের পর এরই মধ্যে সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দখল-চাদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে, যা দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে নেতা-কর্মীদের অপকর্ম আরও বেড়ে যাবে। তাতে করে জনসমর্থন কমার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অন্যদিকে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা নিয়েও কথা বলছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পরিবর্তিত সময়ে শুধু শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে আস্থায় নেওয়া কঠিন। জনগণ যাতে বিশ্বাস করে যে, ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি সত্যি সত্যি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে, সেভাবে কৌশল ঠিক করতে হবে। এটাও বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অস্বস্তির মধ্যেও বিএনপির জন্য স্বস্তিদায়ক ব্যাপার হলো— পট পরিবর্তনের পর নতুন রূপে দেখা যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন বক্তৃতায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে পরিপক্ক রাজনীতিকের পরিচয় এনে দিয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তারেক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষ নেই— এটি ভাবা যাবে না। অতীতের যে কোনো নির্বাচনের থেকে এই নির্বাচন হবে অনেক-অনেক কঠিন। তাই নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দল। আগামী নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তাবনা ও দলীয় নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। এবারের নির্বাচনে সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় নামতে হতে পারে বিএনপিকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলকে নিয়ে ইসলামী ফ্রন্ট এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-তরুণদের সম্ভাব্য নতুন দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটিকে।
একই সঙ্গে বিএনপিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে হবে দেশকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশের সামরিক-বেসামরিক শক্তি ও সুশীল সমাজের সমর্থন আদায়ও করতে হবে। সঙ্গে রয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ।
নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করতে পারাকে ২০২৪ এর বড় অর্জন হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে গণতন্ত্র পুঃনপ্রতিষ্ঠায় নতুন বছরে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে চায় বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
গত দেড় দশক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকে কারাগাভোগ ও আত্মগোপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২০২৪। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ৭ জানুয়ারীর ডামি নির্বাচনের ভোট বর্জনে সফল হয় বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে শরীক দল ও সংগঠনে ভাঙনের চেষ্টা বিফল করে দেওয়া আরেকটি বড় অর্জন বলে মনে করে দলটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর ৫ বছর ধরে কোনো নির্বাচন নেই। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর ডাকসু নির্বাচনের দাবি উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্রশিবির, বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোও
৭ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা একঝাঁক তরুণ জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সঙ্গে যুক্ত হবেন অভিজ্ঞ রাজনীতিকেরাও। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে গঠিত হবে নতুন রাজনৈতিক দল। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রত্যয়ে আগামী মাসেই নতুন এই দল আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
৭ ঘণ্টা আগেবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের বাসায় গেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় মঈন খানের নৈশভোজের আমন্ত্রণে চীনা রাষ্ট্রদূত তাঁর বাসায় যান। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানিয়েছেন
৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও শ্রমিক নেতা শহীদুল্লাহ চৌধুরী মারা গেছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নিজ বাসভবনে মারা যান তিনি। আগামীকাল শনিবার বেলা ১১টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। তাঁর মৃত্যুতে দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শো
১০ ঘণ্টা আগে