যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিএনপি। লুর আসার খবরে বিএনপি চাঙা হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এমন দাবি তোলা হলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না দলটির নেতারা। লুর এই সফরের চেয়েও সীমান্তের সমস্যাকে বিএনপি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। 

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে এটা (ডোনাল্ড লুর সফর) অতটা গুরুত্বপূর্ণ না, যতটা গুরুত্বপূর্ণ কুকি-চিনের আক্রমণ—যেটা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। ডোনাল্ড লু তো অনেক দূরের মানুষ। আমরা শঙ্কিত আমাদের নিজের দেশের অবস্থা নিয়ে।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

এর আগে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা। বৈঠকে নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান অংশ নেন।

দুই দিনের সরকারি সফরে আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। নির্বাচনের পরে লুর এই সফর নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে লুর সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এসব নিয়ে আমরা আগ্রহী না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের ওপরই আমাদের ভরসা, আমাদের পুরো আস্থা, সেই আস্থার ওপরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। রাজনীতিও আমাদের জনগণকে নিয়ে।’ 

যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির চিন্তা
 
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে আজ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির নেতারা। 

বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে কীভাবে আগামী দিনে অগ্রসর হতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করার চিন্তা করছি। আমাদের জোটগুলো তারা নিজেরা বসবে, আলোচনা করবে। নিজেরা আলোচনা করে আবার আমাদের সঙ্গে বসবে। আমরা অনেক জোট ও দলের সঙ্গে আলোচনা করছি। সেই আলোচনার প্রেক্ষিতে আগামী দিনের কর্মসূচি ঠিক হবে।’

বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। যারা মানুষের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন করতে চায়, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর কেউ বিরোধিতা করলে আমরা তার নিন্দা জানাই।’ 

আন্দোলনের নামে বিএনপি আবারও সহিংসতার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে—ক্ষমতাসীনেদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি সহিংসতায় বিশ্বাস করে না, বিএনপির সমমনারাও সহিংসতা করে না। সহিংসতা সরকার করেছে এবং সেটার দায় আমাদের ওপর চাপিয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আগামী দিনেও হয়তো তারা এ রকম কোনো ষড়যন্ত্র করছে। যে কারণে সেটা আগেই বলার চেষ্টা করছে। তবে আমরা এতে ভীত নই। মানুষের সমস্যা সমাধানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়েছি এবং চালাব।’ 

বৈঠকে সমমনা জোটের নেতাদের মধ্যে এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কারি মো. আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম অংশ নেন।