বিএনপি অফিসের সামনের সড়ক বন্ধ, চেকপোস্টে তৎপর পুলিশ

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১১: ১২
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ১২

কাকরাইল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ের মুখে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেল থেকেই এই সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চেকপোস্ট দুটিতে কঠোর অবস্থান নিয়ে পুলিশ সদস্যরা অফিসগামীদের আইডি কার্ড দেখে, ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় তল্লাশি শেষে তবেই এই সড়ক ধরে হেঁটে যাতায়াতের অনুমতি দিচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। 

নয়াপল্টনের বিএনপি অফিসের সামনের ভিআইপি রোডের আশপাশের মহল্লাগুলোর প্রবেশগেটে তালা লাগিয়েছে পুলিশ। এসব এলাকার মানুষ মূল সড়কে উঠতে পারছে না, অফিসসহ অন্যান্য কাজে যেতে না পারায় পুলিশের সঙ্গে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তর্ক করতেও দেখা গেছে। 

অফিসের সময় রাস্তার এমন পরিস্থিতিকে হয়রানি বলছে সাধারণ মানুষ। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তার জন্য তারা এই চেকপোস্ট বসিয়েছে। যদিও এই চেকপোস্ট কবে নাগাদ উঠবে তা ঠিক করে কেউ বলতে পারেননি। 

 আশপাশের পাড়া-মহল্লার গেটও বন্ধ করে রেখেছেন পুলিশ সদস্যরাবৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কাকরাইল মোড়ের হোটেল বিজয়নগরের সামনে সাঁজোয়া যানের উপস্থিতি দেখা যায়। একটু সামনেই বড় চেকপোস্টে মানুষের জটলা। বিভিন্ন অফিসগামী মানুষ সড়ক বেয়ে ফকিরাপুলের দিকে যাওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়েছেন। এমন একজন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকির হোসেন। অফিসে যাওয়ার জন্য এই সড়কের মুখে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তিনি। তাঁর ব্যাগ ও আইডি কার্ড দেখে তারপর যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। আজকের পত্রিকাকে জাকির হোসেন বলেন, ‘অফিস সময়ে এমন ঘটনায় বিরক্ত হয়েছি। এমন ব্যারিকেড বা তল্লাশি থাকবে, এগুলো আগে জানানো উচিত ছিল।’ 

ব্যারিকেড পেরিয়ে সড়কে ঢুকলে দেখা যায়, এই সড়কের দুই পাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা। হাতেগোনা কয়েকজন অফিসগামী, ছাত্র ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য চলাচল করছেন। বিএনপি কার্যালয়ের মূল দরজা ভেতর থেকে তালা দেওয়া। ভেতরে দুজন নিরাপত্তারক্ষী। তাঁরা রাত থেকেই এখানে আছেন। সামনে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ আর কিছু গণমাধ্যমকর্মী। 

 ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন পুলিশ সদস্যরানাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড়ে যেতে বিএনপি কার্যালয় পার হয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে মহল্লা থেকে বেড় হয়ে মূল সড়কে ওঠার গেটগুলো তালা দেওয়া। রাস্তার পাশে পুলিশের অবস্থান আর ওপাশে মহল্লাবাসীর। মহল্লাবাসীর মধ্যে কেউ অফিসগামী, আবার কেউ কেউ সকালের বাজারসদাই করতে বের হয়েছেন। এক ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়ে বাজার করতে গিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম। ফেরার পথে এসে দেখেন গেট বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ দায়িত্বরত পুলিশদের অনুরোধ করেও ভেতরে ঢুকতে না পেরে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটা একধরনের হয়রানি। আমার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমি ঢুকতে পারব না!’ 

অপর পাশেই জোনাকী সিনেমা হল। এই হলের সঙ্গে লাগোয়া আরেকটি মহল্লার গেটে অন্তত ১০০ মানুষকে আইডি কার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে সকাল ১০টায়। তারা অফিসে যাবেন, কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। অনেকেই অনুনয়-বিনয় করেও গেট পার হয়ে সড়কে ওঠার অনুমতি পাননি। তবে আইডি কার্ড দেখে কয়েকজন ব্যাংকারকে ছাড়লেও সাধারণ চাকরিজীবীরা এই গেট দিয়ে বের হতে পারেননি। 

 পুলিশ সদস্যকে আইডি কার্ড দেখিয়ে গেট খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন একজনসড়ক ধরে একটু সামনে এগোলেই ফকিরাপুল মোড়। বিশাল ব্যারিকেডের এপাশে শতাধিক পুলিশ আর ওপাশে অন্তত ৩০০ সাধারণ মানুষ। আইডি কার্ড দেখে দেখে তাঁদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক মানুষকেই সড়কে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছিল দায়িত্বরত পুলিশ। 

বুধবার বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির অনির্ধারিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিএনপি এক কর্মী নিহত হন। তারপর থেকেই এই সড়ক ও কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। রাত থেকে অন্তত ৫০০ পুলিশ এখানে মোতায়েন আছে। কত দিন এভাবে পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হবে, সেটা জানা যায়নি পুলিশের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। 

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এনামুল হক মিঠু বলেন, ‘নিরাপত্তার কারণে ভিআইপি রোডে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে যারা সরকারি দপ্তর, ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে বের হয়েছে, তাদের আমরা চেক করে পায়ে হেঁটে ঢুকতে দিচ্ছি। এ ছাড়া আজ এই এলাকার মার্কেটগুলো সাপ্তাহিক বন্ধ।’ 

এর আগে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে মকবুল নামে বিএনপির একজন কর্মী পুলিশের গুলিতে মারা যান। এ ছাড়া সাংবাদিক, পুলিশ ও বিএনপির কর্মীসহ অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

বিএনপি অফিসের পাশেই দেখা মিলেছে সাজোয়া যানেরএ ঘটনায় বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কার্যালয় থেকে হাতবোমা, ককটেল, ১৬০ বস্তা চাল, কার্টন কার্টন তেল, খাওয়ার পানি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। 

ডিএমপির ডিবি পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করলাম। সেখানে দেখলাম অবিস্ফোরিত ককটেল রয়েছে। সেখানে অবিস্ফোরিত ১৫টি হাতবোমা, ২ লাখেরও অধিক টাকা পেলাম। লক্ষ লক্ষ পানির বোতল, খিচুড়ি, ১৬০ বস্তা চাল এবং খিচুড়ি রান্না করা দেখেছি।’

নয়পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সংঘর্ষের আরও সংবাদ পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত