ছলচাতুরী করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না: খন্দকার মোশাররফ

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯: ০১
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯: ৪৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘ছলচাতুরী করে আর দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না। তাই বিএনপি কখনো এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।’

আজ শুক্রবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত পদযাত্রার শুরুতে রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্‌দীনে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। এরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। 

পদযাত্রা বিএনপির হলেও দাবি জনগণের উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের বিল দিতে পারছে না বলেই জনগণ বিএনপির কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। জনসমাবেশ বানচালের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।’ 

এ সময় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘সরকার জনগণকে ধোঁকা দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে বানচাল করে দিয়েছে। এই সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। জনগণের উন্নয়ন নয়, আওয়ামী লীগ নিজেদের উন্নয়ন করেছে। জনগণের অধিকার হরণ করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে মানুষের কণ্ঠরোধ করেছে। জনগণের ভোটে এই দেশের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করবে বিএনপি।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। পায়ে পাড়া দিয়ে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ।’ 

এর আগে উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকায় জুমার নামাজের পর থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে আয়োজিত পদযাত্রায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দিতে শুরু করেন। পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উত্তরার মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নেয়। এ ছাড়া সাদাপোশাকে নজরদারি করেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা। 

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উত্তরার মোড়ে অবস্থান নেয় অতিরিক্ত পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকাট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট অপু সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজলক্ষ্মীসংলগ্ন এলাকার মহাসড়কে অবস্থান করছেন। যার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কাওলা থেকে রাজলক্ষ্মী পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।’ 

অপর দিকে উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. বদরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করেছে। এ ছাড়া পদযাত্রা থেকে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তারও করা হয়নি। পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য বিপুল পরিমাণ পুলিশ নিয়োজিত ছিল।’ 

বিএনপির ১০ দফা দাবিগুলো হলো—

১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। 

২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮খ, গ ও ঘ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। 

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ওই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা। 

৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করা। 

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা। 

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল। 

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা। 

৮. বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। 

৯. গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা। 

১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত