সাইমন্ডসের পাগলামির সঙ্গে যেভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম 

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২২, ১২: ৪১
আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ১৯: ৩৮

জীবনকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করাদের তালিকায় বেশ ওপরেই থাকবে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের নাম। সেই উপভোগে আনন্দ যেমন, তেমনি মাঝে মাঝে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারও ছিল। গাড়ি দুর্ঘটনায় সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান তারকার মৃত্যুতে আজ থেকে সবই স্মৃতির পাতায় জায়গা করে নেবে। 

১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাইমন্ডসের পথচলার শুরু। ক্যারিয়ারজুড়ে বিতর্ক আর পাগলামির সঙ্গে হাত ধরাধরি করে হেঁটেছেন। তাঁর এই পাগলামির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও। মোহাম্মদ আশরাফুলের কল্যাণে বাংলাদেশের জন্য জাদুকরী মুহূর্তে রূপ নেওয়া ২০০৫ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ম্যাচটা যেমন। কার্ডিফে সেদিন রিকি পণ্টিংদের চোখেমুখে অবিশ্বাস ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। 

ম্যাচের আগে খবরের শিরোনাম হন সাইমন্ডস। সময় যেটাই হোক, উপভোগের মন্ত্রে বিশ্বাসী সাইমন্ডস ম্যাচের আগে মদ পান করেন। ফল যা হওয়ার তাই হয়, সেই ম্যাচে বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। ম্যাচের আগে শৃঙ্খলার ব্যাপারে এক বিন্দু ছাড় না দেওয়ার এমন বহু উদাহরণ আছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে। এক ম্যাচের অলিখিত শাস্তি শেষে পরের ম্যাচে একাদশে ফেরেন সাইমন্ডস। 

ফেরাটাও কেমন, মাঠে সাইমন্ডসের রাজকীয় উপস্থিতির ঢঙেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ৮১ বলে ৭৩ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে তাঁর হাতে। পরের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে আবার ম্যাচসেরা। এবার দৃশ্যপটে সাইমন্ডসের বোলিং সত্তা। ১৮ রানে ৫ উইকেট  নিয়ে দলের জয় সহজ করে দেন। বাংলাদেশ আর সাইমন্ডস আরেকবার মিলে যায় ২০০৮ সালে। প্রথমবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, সেবার অস্ট্রেলিয়ায় যায় বাংলাদেশ। 

আগস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজের এক মাস পর ভারত সফরে যাবে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ সিরিজটাকে তাই একপ্রকার প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছিল অজিরা। সাইমন্ডসের জন্য বাংলাদেশ সিরিজটা ছিল দলের প্রতি নিবেদনের প্রমাণ দেখানোর। সেটা হলেই ভারত সফরের সার্টিফিকেট মিলত তাঁর। ছন্নছাড়া জীবন যাঁর ধর্ম, তাঁকে থামানোর সাধ্য কার? সাইমন্ডসকে থামানো যায়নি। প্রথম ওয়ানডের আগে দলের টিম মিটিংয়ে না থেকে মাছ শিকারকে বেছে নেন তিনি। 

সিরিজ শুরুর আগের দিন তাই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাইমন্ডসকে। সেই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এবং দলে সাইমডন্সের সবচেয়ে কাছের বন্ধু মাইকেল ক্লাক বলছিলেন, ‘আমরা সবাই তাকে ভালোবাসি। সে জন্যই আমরা তাকে স্কোয়াডে চেয়েছিলাম।’ কিন্তু দলের লিডারশিপ গ্রুপের সিদ্ধান্ত, দলের প্রতি বিন্দুমাত্র নিবেদন ঘাটতিতেও ছাড় দেওয়া হবে না। বন্ধু সাইমন্ডসকে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন ক্লাক। পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সাইমন্ডসের শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা নেহাতই কম নয়। শৃঙ্খলার ঘাটতির সঙ্গে অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি অসময়ে তাঁর ক্যারিয়ারে ‘ফুল স্টপ’ বসিয়ে দেয়।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের সফল অধিনায়কদের একজন এবং সাইমন্ডসের সতীর্থ পন্টিং তো আর এমনি এমনি বলেননি, ‘ওকে (সাইমন্ডসকে) সামলানো সবচেয়ে কঠিন।’ সামলানো কঠিন সেই সাইমন্ডসকে নীরবই বানিয়ে দিল গাড়ি দুর্ঘটনা। ডিন জোন্স, রডনি মার্শ, শেন ওয়ার্নের পর মৃত্যুপথে এবারের যাত্রী সাইমন্ডস। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে শোকের রাস্তাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে।

 

 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত