Ajker Patrika

গোলপোস্টের নিচে আরও দুর্ভেদ্য লিভাকোভিচ

ক্রীড়া ডেস্ক
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬: ৩৭
গোলপোস্টের নিচে আরও দুর্ভেদ্য লিভাকোভিচ

ফুটবলে খুব কম সময়ই দেখা যায় গোলরক্ষকদের নায়ক হতে। সাধারণত গোলের এই খেলায় স্ট্রাইকাররাই সব সময় হিরো হন। তবে এবারের বিশ্বকাপে স্ট্রাইকাররা নন, গোলরক্ষকেরাই নায়ক হচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বেশ কয়েকজন গোলরক্ষক ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন—বেলজিয়ামের থিবো কোর্তোয়া, পোল্যান্ডের ভয়চেক সেজনি, নেদারল্যান্ডসের আন্দ্রিস নোপের্ট, মরক্কোর ইয়াসিন বুনু, ক্রোয়েশিয়ার ডমিনিক লিভাকোভিচ ও আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। তবে পারফরম্যান্সে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন লিভাকোভিচ। তাঁর বিশ্বস্ত হাতেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ক্রোয়েশিয়া।

রাশিয়া বিশ্বকাপের খেলাই যেন এবারের বিশ্বকাপেও খেলছে ক্রোয়েশিয়া। নকআউট পর্বের ম্যাচগুলোকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের কৌশল ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়ে। আর পেনাল্টি শুটআউটে জয় নিশ্চিত করছেন লিভাকোভিচ নামের দুর্দান্ত এক দেয়ালে। গত বিশ্বকাপে যেমনটি করে নায়ক বনেছিলেন দলটির সাবেক গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচ।

 ২০১৮ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সুবাসিচের সঙ্গে ছিলেন লিভাকোভিচও। ওই বিশ্বকাপে ডাগআউটে থেকে দেখেছিলেন আদর্শ মানা পূর্বসূরির কীর্তিগুলো। এবার সুযোগ পেয়ে সুবাসিচকেই যেন ফিরিয়ে আনলেন তিনি। পূর্বসূরির এক রেকর্ডের পাশে তো বসেছেনই, সঙ্গে তাঁকে ছাড়িয়েও গিয়েছেন দিনামো জাগরেবের এই গোলরক্ষক। এবারের বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার গোলপোস্টের নিচে নিজেকে আরও দুর্ভেদ্য হিসেবে তৈরি করেছেন তিনি।

ব্রাজিলের বিপক্ষে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ১-১ গোলে ড্র করে ক্রোয়েশিয়া। শেষ মুহূর্তে দলকে সমতাসূচক গোলটি ব্রুনো পেতাকোভিচ এনে দিলেও ড্রয়ে লিভাকোভিচের অবদান ছিল অনন্য। ম্যাচটিতে ১১ সেভ দিয়েছেন তিনি। এতে করে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ সেভের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১৫ সেভ দিয়ে সবার ওপরে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক টিম হাওয়ার্ড।

পরে পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ গোলের জয়েও অবদান রেখেছেন লিভাকোভিচ। ব্রাজিলের হয়ে প্রথম পেনাল্টি নেওয়া রদ্রিগোর শটটি ঠেকিয়ে দেন তিনি। এই শট প্রতিহত করে একটি রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন ক্রোয়েট গোলরক্ষক। তাঁর আগে বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে ৪টি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেওয়ার রেকর্ড ছিল স্বদেশি সুবাসিচ ও আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সের্হিও গয়কোচিয়ার। ২০১৮ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে সুবাসিচ রেকর্ড গড়ার আগে ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো এমন রেকর্ড গড়েছিলেন আর্জেন্টিনার সাবেক এই গোলরক্ষক। আর গতকালের সঙ্গে শেষ ষোলোর ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে তিনটি টাইব্রেকার প্রতিহত করেন লিভাকোভিচ।

অথচ ফুটবলারই হওয়ার কথা ছিল না লিভাকোভিচের। কূটনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্নে কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিদ্যায় পড়াশোনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ফুটবলের প্রতি আগ্রহ থাকায় শৈশবে যোগ দেন স্থানীয় ক্লাব জাদারে। এরপর ২০১২ সালে সেখান থেকে যোগ দেন জাগরেবে।

 ২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার স্বনামধন্য ক্লাব দিনামো জাগরেবে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নিজেকে চেনাতে শুরু করেন লিভাকোভিচ। পরে ধীরে ধীরে পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে সুযোগ পান ২০১৭ সালে। গত বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি আদর্শ মানা সুবাসিচের কারণে। এবার সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চেনালেন বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার ‘নায়ক’ লিভাকোভিচ। গত বিশ্বকাপের রানার্সআপরা এবার হয়তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে ক্রোয়েট গোলরক্ষকের সৌজন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত