স্বর্গে বসে এখন যা যা করবেন পেলে-ম্যারাডোনা

উপল বড়ুয়া, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮: ২৫
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮: ৫১

ফুটবলে এমন দিন আসবে, বছর দুয়েক আগেও হয়তো অনেকে কল্পনা করেননি। কতই তো আনন্দ-উচ্ছলে ভরে ছিল ফুটবলের সবুজ অঙ্গন। স্বভাবসুলভ চরিত্রে দিব্যি নেচেগেয়ে বেড়াচ্ছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। হাস্যোজ্জ্বল মুখে পেলে যাচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। কেউ জোর করলে অটোগ্রাফের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ দিচ্ছেন।

ভক্তরাও ম্যারাডোনা নাকি পেলে সেরা, এ বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন চায়ের পেয়ালা হাতে। কিন্তু সময় এমন এক ব্ল্যাকহোল, ঘূর্ণিতে তার পেটে টেনে নিয়ে যায় অনেক কিছু। দুই বছর আগে এমন একদিন এল, থমকে দাঁড়াল পৃথিবী। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বরের শীতরাত। ম্যারাডোনার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে গেল ফুটবল বিশ্ব। ৬০ বছর বয়সে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে চলে যান ‘ফুটবল ঈশ্বর’।

দুই বছর পর স্বর্গে বসে কাতারে সাবেক শিষ্য লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয় দেখেছেন ম্যারাডোনা। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টাইনদের হাসতে দেখেছেন তিনি। বুয়েনস এইরেস থেকে রোজারিও যখন উৎসবে ভাসছে, তখন অন্য প্রান্তে শোকে নীরব ব্রাজিল। হেক্সা অপূর্ণ থাকার কষ্ট তো আছেই, তার সঙ্গে সেলেসাওরা যে হারিয়ে ফেলেছে পেলেকে। কেবল ব্রাজিল নয়, বিশ্ব ফুটবল হারাল তাদের রাজাকে।

দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন পেলে। সেই লড়াইয়ের চূড়ান্ত সমাপ্তি হলো গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে, সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে। বিশ্ববাসী পুরোনো বছরকে বিদায় দেওয়ার আগে বিদায় দিল ফুটবলসম্রাটকেও।

ম্যারাডোনাকে হারিয়ে পেলে বলেছিলেন, ‘একদিন স্বর্গে, আমরা দুজনে একই দলের হয়ে খেলব।’ প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে একই জার্সিতে খেলতে যেন তর সইল না তাঁর। এখন হয়তো স্বর্গে বসে দুই মহাতারকা হাততালি দেবেন বল নিয়ে মেসির সাপের মতো এঁকেবেঁকে ছুটে যাওয়া দেখে কিংবা নেইমারের অবিশ্বাস্য ড্রিবলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে।

স্বর্গে বসে আর কী কী করবেন পেলে-ম্যারাডোনা? অনন্ত সময় যখন হাতে পেয়েছেন, নিশ্চয় কথানুযায়ী ফুটবলটাও খেলবেন একসঙ্গে। এমনও হতে পারে ইয়োহান ক্রুইফ, জার্ড মুলার, পাওলো রসিদের একত্রে করে দল সাজাবেন পেলে-ম্যারাডোনা। আর সেই একাদশ মুখোমুখি হবে দেবতা জিউস, অ্যাপোলো, হারকিউলিস, হার্মেস, অর্ফিয়ুসদের নিয়ে গড়া একাদশের বিপক্ষে।

দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন হয়ে জ্বলজ্বল করছে সাত শতকের বেশি সময় ধরে। জীবিত কোনো ব্যক্তি কি স্বর্গে যেতে পারেন? সেই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। তবে দান্তে স্বর্গভ্রমণে গিয়েছিলেন। সে তো আমরা ডিভাইন কমেডিতেই পাই। সেই ভ্রমণে তাঁকে নরক-স্বর্গের বিভিন্ন স্থান ও ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন আরেক রোমান মহাকবি ভার্জিল।

প্রথমে ভার্জিল দান্তেকে নিয়ে যান ইনফার্নো বা নরকে। এরপর পার্গেটারিও বা পরিশুদ্ধির পাহাড়ে। সেখান থেকে প্যারাদিসো বা স্বর্গলোকে। ম্যারাডোনাও হয়তো অমর্ত্যলোকের নতুন অতিথি পেলেকে নিয়ে বের হবেন নরক-স্বর্গ দেখাতে। ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে বলবেন, ‘ওই হচ্ছে স্বর্গের সপ্তম চূড়া পার্গেটারিও। একটু পরে আমরা সেই চূড়ায় উঠে স্বর্গীয় জীবন কাটাব।’

পেলে হয়তো সব দেখেশুনে আশ্চর্য হয়ে বলবেন, ‘তার আগে বল নিয়ে একটু হাত-পা ঝেড়ে নিলে হয় না! অনেক দিন ধরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থেকে শরীরটা পাথর হয়ে গেছে।’

দীর্ঘ স্বর্গীয়বাসের ক্লান্তি কাটাতে ফুটবল তো আছেই, কখনো কখনো গিটার হাতেও বসে যাবেন পেলে। ছয় তারের ক্ল্যাসিক্যাল দেল ভেচ্চিও গিটারটা হাতে নিয়ে ম্যারাডোনাকে নিয়ে লেখা গানটা শোনাবেন। পাশে বসে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকবেন ছিয়াশির মহানায়ক। পেলে-ম্যারাডোনাকে বল নিয়ে ছুটতে দেখে স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক যেভাবে হাততালিতে ফেটে পড়ত, তেমনি তাঁদের গান শুনে স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র আসন ছেড়ে উঠে আসবেন। দেবতাদের ফুলেল বৃষ্টিতে স্নাত হবেন পেলে-ম্যারাডোনা। ফুটবল ঈশ্বর ও ফুটবল রাজার মিলন বলে কথা!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত