খেলার উজ্জ্বল আলোর নিচে অবসাদের আঁধার

হাসনাত শোয়েব
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ১৪: ৪৪
Thumbnail image

ঢাকা: ‘বিষণ্নতা হচ্ছে আমার সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা।’ কথাটা হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাওলিংয়ের। বিখ্যাত মার্কিন কবি সিলভিয়া প্লাথ নিজের ছবি তুলতেও ভয় পেতেন! একবার তিনি লিখেছিলেন, ‘কেউ গভীরভাবে আমার দিকে তাকালে কান্না পায়।’ এই বিষণ্নতা প্লাথকে ঠেলে দিয়েছিল আত্মহত্যার মতো চরম পরিণতির দিকে। অর্থ, বিত্ত কিংবা সুখ্যাতি—কোনোটাই এই বিষণ্নতার সমাধান নিয়ে আসতে পারে না।

তাই নাওমি ওসাকা কিংবা বিরাট কোহলির মতো খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা তারকারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন, সেটিও চমকে ওঠার মতো কিছু নয়। তবে এটাও সত্য যে বছরের পর বছর এই স্পর্শকাতর বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অবসাদকে বিবেচনা করা হয়েছে স্রেফ বিলাসিতা হিসেবে, যার সর্বশেষ উদাহরণ ফ্রেঞ্চ ওপেনে ওসাকাকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্র‍্যান্ডিং ও করপোরেট পুঁজির দুনিয়া সেটি মানবে কেন? ১৩ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ওসাকাকে হুমকি দেওয়া হয় গ্র‍্যান্ড স্লাম থেকে ছুড়ে ফেলার। বিষয়টি ওসাকাকে এতটাই ধসিয়ে দিয়েছে যে টুর্নামেন্ট থেকেই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি। জানান, ২০১৮ সাল থেকে অবসাদে ভুগছেন তিনি। এরপর সেরেনা উইলিয়ামস, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা থেকে শুরু করে অনেকেই ওসাকার পাশে এসে দাঁড়ান।

খেলার দুনিয়ায় অবসাদের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। অবসাদের কথা বললে প্রথম যে নাম মনে আসবে, সেটি সাবেক ইংলিশ ওপেনার মার্কাস ট্রেসকোথিকের। অবসাদে ভুগে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। এমনকি বিশ্বকাপ জয়ের পর বিষণ্নতা ঘিরে ধরেছিল পেসার লিয়াম প্লাংকেটকে। বিশ্বকাপ জয়ের মতো ঘটনা আর ঘটবে না, এমন ভাবনা পেয়ে বসেছিল তাঁকে। জলদানবখ্যাত সাঁতারু ফেলপস ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাও এই বিষণ্নতায় ভুগেছেন।

মানসিকভাবে একজন খেলোয়াড়কে ফিট থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা হচ্ছিল ঢাকার মনোবিদ মেহেদী হাসান আসিফের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘একজন খেলোয়াড়কে খেলার আগে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিক দুভাবেই ফিট থাকতে হয়। চোটাক্রান্ত খেলোয়াড় শারীরিকভাবে ফিট না হয়ে মাঠে নামেন না। একইভাবে মানসিকভাবে ফিট থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবে যদি কোনো খেলোয়াড় নিজেকে সম্পূর্ণ ফিট মনে না করেন, তিনি হয়তো মাঠে নেমে প্রত্যয়ের সঙ্গে খেলতে পারবেন না। আর এটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ফললাভের উপযোগী নয়।’

করোনা মহামারিও বিষণ্নতার হারকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। জীবন ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সাধারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের একটি জরিপ বলছে, প্রাপ্তবয়স্কদের অবসাদজনিত অসুস্থতা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আগের দুই বছরের তুলনায় ৩০ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।

ওয়াকার ঘটনাকে অবশ্য একই পাল্লায় মাপতে চান না আসিফ, ‘অবশ্যই মহামারি আমাদের নতুন করে চলতে শিখিয়েছে, তবে মহামারির সঙ্গে নাওমি ওসাকার ঘটনাটির সরাসরি সম্পর্ক টানতে আমি রাজি নই। মানসিক উদ্বেগ নিয়ে এর আগেও নাওমিকে কথা বলতে দেখা গেছে।’

অবসাদ বা বিষণ্নতা অবশ্য একার লড়াইয়ের বিষয় নয়। তারার আলোর নিচে এ এক বিশাল আঁধার। এই আঁধার দূর হতে পারে সম্মিলিত চেষ্টায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত