সাক্ষাৎকার

জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার কাজের ফল

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেস বোলিং পাইপলাইন দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছে, নিয়মিত উঠে আসছেন প্রতিভাবান পেসার। সেই পাইপলাইন থেকেই এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজের ঘোষিত দলে চমক ২২ বছর বয়সী পেসার রিপন মন্ডল। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দিয়ে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি হিসেবে খেলেছেন এশিয়ান গেমসে। গতকাল রাতে দল ঘোষণার পরই রিপনের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। আহমেদ রিয়াদকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন নিজের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

প্রশ্ন: এশিয়ান গেমসের টি-টোয়েন্টি ‘আন্তর্জাতিক’ হলেও প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার অনুভূতিটা কেমন?

রিপন মন্ডল: আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো লাগছে। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া আসলেই স্বপ্নের মতো। যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই, তাহলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন: জাতীয় দলের সুযোগের সংবাদটা কীভাবে জানলেন? সংবাদ পাওয়ার অনুভূতিটা কেমন ছিল?

রিপন: আমি কদিন আগে থেকেই কিছুটা আভাস পাচ্ছিলাম যে হয়তো টি-টোয়েন্টি দলে আমার সুযোগ আসতে পারে। তাই খুব বেশি রোমাঞ্চিত ছিলাম না, তবে ভেতরে ভেতরে একটা আশা ছিল। এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেওয়া। আমার বন্ধু ও কোচরা আমাকে বারবার বলছিল, তুই ভালো করবি, তোর পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে, আর ফিট থাকতে হবে। তাদের কথাগুলো আমার ভেতরে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার উঠে আসার গল্পটা যদি বলতেন?

রিপন: ছোটবেলায় আমি বেশি টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতাম। জোরে বল করতাম, তাই সবাই আমাকে বলত ক্রিকেট বলে চেষ্টা করতে। তখন মহাখালীর এক ক্লাবে ভর্তি হয়েছিলাম, বয়স তখন ১৫ বছর হবে। সেখানেই অনুশীলন শুরু করি। ২০১৭ সালে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে নাম লিখিয়েছিলাম, কিন্তু প্রথম মৌসুমে কোনো ম্যাচ খেলতে পারিনি। তবে পরের মৌসুমে সুযোগ পেয়েছিলাম। তখনই বিসিবির কয়েকজন আমার পারফরম্যান্স দেখে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে ডাকেন। এরপর (যুব) বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়ে যাই।

প্রশ্ন: গত কয়েক মাসে ঘরোয়া পর্যায়ে কোনো খেলা ছিল না। কিন্তু আপনাকে জাতীয় দলের টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটারদের সঙ্গে নেটে বোলিং করতে দেখা গেছে। এটি কি নির্বাচকদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই করছেন?

রিপন: আসলে তা নয়। জাতীয় লিগে খেলতে গিয়ে মাঝে মাঝে বিরতি পেতাম। আমি মিরপুরেই থাকি, তাই ফাঁকা সময় বসে না থেকে বড় ভাইদের অনুশীলনে গিয়ে বোলিং করতাম। সিনিয়র ক্রিকেটারদের বোলিং করলে নিজের উন্নতির জায়গাগুলো বুঝতে পারি। এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল, এখানে বোর্ড বা নির্বাচকদের বিশেষ কোনো নির্দেশনা ছিল না।

প্রশ্ন: গত কিছুদিনে মিরপুরে তামিম ইকবালের স্কিল সেশনে আপনাকে প্রায়ই বোলিং করতে দেখা যেত। জাতীয় দলে সুযোগ পেতে এ অভিজ্ঞতা কি কোনো কাজে দিয়েছে বলে মনে করেন?

রিপন: আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি কি না, তা নিয়ে নির্বাচকেরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে তামিম ভাইয়ের সঙ্গে অনুশীলন আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। সেখানে আমি আমার বোলিং স্কিল নিয়ে বেশি কাজ করেছি। সোহেল (ইসলাম) স্যার এবং বাবুল স্যারও (মিজানুর রহমান) আমাকে দিকনির্দেশনা। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি যেখানে খেলি, সেখানে ভালো করতে। কোনো বাড়তি সুবিধা পাইনি বলে আমি মনে করি। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার কাজের ফল।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের পেসাররা ভালো করেছে। মাঠে নামার সুযোগ এলে আপনার জন্য এটা কি বাড়তি অনুপ্রেরণা হতে পারে?

রিপন: হ্যাঁ, আমি খবরে দেখেছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমাদের পেস বোলাররা এবার ভালো করেছে। এটা অবশ্যই খুব ভালো দিক। আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজে যুব বিশ্বকাপ (২০২২) খেলেছি এবং আমার নিজের সেখানে খেলার ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই অভিজ্ঞতা আমাকে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে। দোয়া করবেন যেন আমি সুযোগ পেলে ভালো কিছু করতে পারি।

প্রশ্ন: আপনার এমন সুযোগটা পরিবারের সদস্যরা নিশ্চয়ই অনেক খুশি?

রিপন: পরিবারের সবাই খুব খুশি। খেলাধুলায় পরিবারের সমর্থন ছিল সবসময়। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবর শুনে তারা অনেক আনন্দিত হয়েছে। তাদের হাসি দেখে আমারও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত