Ajker Patrika

ডাইভার্সিটি প্রোগ্রাম: ট্রাম্পের বিরোধিতার মধ্যে পক্ষে ভোট দিলেন অ্যাপলের বিনিয়োগকারীরা

অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ওপরও নজর দিয়েছে অ্যাপল। ছবি: আইফিড
যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ওপরও নজর দিয়েছে অ্যাপল। ছবি: আইফিড

অ্যাপলের বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) প্রোগ্রামগুলো রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছেন কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। গতকাল মঙ্গলবারে কোম্পানিটির বার্ষিক সভায় এই মতামত দেন তারা। এর আগে অ্যাপলের ডিইআই নীতি বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিল রক্ষণশীল সংগঠন ন্যাশনাল সেন্টার ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চ (এসসিপিপিআর)। এই ভোটের ফলাফলকে অ্যাপলের ম্যানেজমেন্টের জন্য বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ প্রোগ্রামগুলো বাতিল করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা।

ডিইআই প্রোগ্রামের সম্পর্ক শেয়ারহোল্ডারদের মতামত জানার সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভোটকে। ২০২০ সালে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের পর থেকে অনেক কোম্পানি তাদের ডিইআই নীতিগুলো উন্নত করে। তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) নীতি নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। এর ফলে মেটা ও অ্যালফাবেটের মতো বড় বড় কোম্পানি তাদের ডিইআই প্রোগ্রামগুলো বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর।

ট্রাম্প ডিইআই প্রোগ্রামগুলো বৈষম্যমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে এসব উদ্যোগের ওপর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

অ্যাপলের বিনিয়োগকারীদের সভায় ‘ডিইআই প্রোগ্রাম বন্ধ করার অনুরোধ’ শিরোনামে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল এসসিপিপিআর। সেই প্রস্তাবের পক্ষে ২১০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ভোট পড়েছিল এবং বিপক্ষে ৮ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ভোট পড়েছিল।

এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি ছিল যে, সাম্প্রতিক আইন পরিবর্তনের পরও অ্যাপল তাদের ডিইআই নীতিগুলো চালু রাখলে কোম্পানির বিরুদ্ধে বৈষম্য মামলা বাড়তে পারে। তবে, অ্যাপল দাবি করেছে, তারা এ ধরনের আইনগত ঝুঁকি কমানোর জন্য সক্রিয়ভাবে তত্ত্বাবধান করছে এবং প্রস্তাবটি ম্যানেজমেন্টের ওপর অপ্রাসঙ্গিক সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে।

অ্যাপল তার কর্মী বাহিনীর বৈচিত্র্য সম্পর্কিত ডেটা প্রকাশ করলেও কোনো কোটা নির্ধারণ করে না কোম্পানিটি। অ্যাপলের অনেক ডিইআই উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে—জাতিগত ন্যায় উদ্যোগ, যার মাধ্যমে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমর্থন দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিভিন্ন ডিইআই উদ্যোগও বাস্তবায়ন করছে অ্যাপল। যেমন: মেক্সিকোয় আদিবাসী জনগণের জন্য কোডিং শেখানো এবং অস্ট্রেলিয়ার একটি আদিবাসী সম্প্রদায়-নেতৃত্বাধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা, যা অপরাধ বিচারব্যবস্থায় পরিবর্তন বা সংস্কারের জন্য কাজ করে।

এর আগে আরেকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে অ্যাপলের বিনিয়োগকারীরা। যেখানে অ্যাপলকে জাতিগত ও লিঙ্গভিত্তিক বেতন ব্যবধান সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করা হতো।

গত মঙ্গলবারের সভায় অ্যাপলের সিইও টিম কুক বলেন, ‘আমাদের শক্তি সব সময় সবচেয়ে ভালো মানুষ নিয়োগ দেওয়া এবং একটি সহযোগিতামূলক সংস্কৃতি তৈরি করা। যেখানে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং দৃষ্টিভঙ্গির মানুষেরা একত্রিত হয়ে উদ্ভাবন করবে। তবে তিনি আরও বলেন, ‘আইনি পরিপ্রেক্ষিতের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের কিছু পরিবর্তন আনতে হতে পারে। তবে মানুষের মর্যাদা ও শ্রদ্ধার প্রতি দায়িত্ব কখনো কমবে না।’

এর আগে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম খুচরা চেইন ‘কস্টকো হোলসেল’কে ডিইআই উদ্যোগের ঝুঁকি মূল্যায়ন করার জন্য একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলেছিল এসসিপিপিআর। তবে, জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কস্টকোর বিনিয়োগকারীদের সভায় সেই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ওপরও নজর দিয়েছে অ্যাপল। কোম্পানি ঘোষণা করেছে, আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই উদ্যোগের ঘোষণা করেন ট্রাম্প। কয়েক দিন আগে মিডিয়া জানায় যে, কুক ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

অ্যাপলের বিনিয়োগকারীরা আরেকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যা অ্যাপলকে তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করতে বলেছিল। তবে এই প্রস্তাবের পক্ষে ১ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ভোট এবং এর বিপক্ষে ৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ভোট পড়ে।

এ ছাড়া অ্যাপল শিগগিরই টিএসএমসির নতুন কারখানার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপসের বড় একটি অংশ সরবরাহ করবে। এই কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত এবং ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময়ে টিএসএমসি এটির নির্মাণ শুরু করেছিল। চিপ তৈরির পৃথিবীর অন্যতম বড় কোম্পানি টিএসএসসি এবং এর চিপগুলো বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য, যেমন—স্মার্টফোন, কম্পিউটার ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত