এআই প্রসেসরে ব্যর্থতা, পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন ইন্টেলের সিইও

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ২১
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৪৪
দীর্ঘ সময় ধরে সিলিকন ভ্যালির চিপ শিল্পের ভিত্তি গড়ে তুলেছিল ইন্টেল। ছবি: মিডিয়ানামা

দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ইন্টেলের প্রধান নির্বাহী প্যাট গেলসিঞ্জারকে। কোম্পানির পুনর্গঠনে তাঁর পরিকল্পনার ওপর পরিচালনা বোর্ডের আস্থা হারানোর পর এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। গেলসিঞ্জারের অধীনে ইন্টেল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চিপ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। এছাড়া এনভিডিয়ার মতো বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছেও ইন্টেল তার শীর্ষস্থান হারিয়েছে। চিপ ব্যবসা সফল না হওয়ায় কোম্পানির বোর্ড সদস্যদের মধ্যে তাকে নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়।

এক বোর্ড বৈঠকের পর গত ১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন গেলসিঞ্জার। ওই বৈঠকে বোর্ড সদস্যরা বলেন, ইন্টেলকে শীর্ষস্থানে করার জন্য গেলসিঞ্জারের ব্যয়বহুল এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা যা ছিল, তা সফল হচ্ছে না এবং এই পরিকল্পনার অগ্রগতি যথেষ্ট দ্রুত হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলে, বোর্ড গেলসিঞ্জারকে অবসর নিতে বলেন অথবা তাকে অপসারণ করা হবে। আর তিনি পদত্যাগ করতে সম্মত হন।

গেলসিঞ্জারের পদত্যাগ তার চার বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ঘটল। তার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের দ্রুততম এবং সবচেয়ে ছোট কম্পিউটার চিপ তৈরির ক্ষেত্রে কোম্পানির শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করা। কোম্পানিটি তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির কাছে এই স্থান হারান। এই কোম্পানি ইন্টেলের প্রতিদ্বন্দ্বী যেমন এনভিডিয়া-এর জন্য চিপ তৈরি করে।

১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টেল। দীর্ঘ সময় ধরে সিলিকন ভ্যালির চিপ শিল্পের ভিত্তি গড়ে তুলেছিল কোম্পানিটি। তবে গেলসিঞ্জারের নেতৃত্বে এনভিডিয়ার তুলনায় ইন্টেলের বাজারমূল্য ৩০ গুণ কমে যায়। এনভিডিয়া এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

২০২১ সালে কোম্পানিটি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন গেলসিঞ্জার। তিনি ইন্টেলকে চিপ উৎপাদনের খাতে শীর্ষস্থানে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। তবে তার অধীনে বেশ কিছু বড় চুক্তি হারায় কোম্পানিটি এবং অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।

ইতিমধ্যে এআই চিপ তৈরিতে ইন্টেলকে ছাপিয়ে গেছে এনভিডিয়া। আর অপরদিকে ইন্টেল এআই চিপ উন্নয়নে কার্যকর পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি।

গেলসিঞ্জার বলেছিলেন যে, তিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরা ইন্টেলের পুনর্গঠনকে সহায়তা করছেন, তার উৎপাদন পরিকল্পনাগুলো সঠিক পথে চলছে। তবে এর সুফল আগামী বছরে আগে জানা যাবেনা। ২০২৫ সালে কোম্পানি তার নিজস্ব একটি ফ্ল্যাগশিপ ল্যাপটপ চিপ আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

কোম্পানির শেয়ারদর দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এই বছরের মধ্যে শেয়ারটির মূল্য অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। গত মাসে ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচকে ইন্টেলকে ছাড়িয়ে গেছে এনভিডিয়া। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইস (এএমডি) এর শেয়ারদর ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে এবং পিএইচএলএক্স সেমিকন্ডাক্টর সূচকে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোম্পানিটি ডেভিড জিনসনারকে প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা এবং মিশেল জনস্টন হলথাউসকে সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সহ-প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিযুক্ত করেছে। নতুন সিইও খুঁজতে আলাদা কমিটিও গঠন করেছে বোর্ডটি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বোর্ডের স্বাধীন চেয়ারম্যান ফ্যাংক ইয়ারি বলেন, ‘উৎপাদন প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে এবং একটি বিশ্বমানের ফাউন্ড্রি তৈরি করতে কোম্পানি অনেক অগ্রগতি করেছে। তবে আমরা জানি যে, এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি রয়েছে এবং আমরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দুজন ব্যক্তির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, কোম্পানিটি ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন ইন্টেলের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান ক্যারেন খান–ও।

২০২১ সালের জুলাইয়ে কোম্পানির পরিবর্তন পরিকল্পনা ঘোষণা করেন গেলসিঞ্জার। কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই উৎপাদন কার্যক্রমে বেশ কিছু ভুলের কারণে সমস্যায় পড়েছিল। এরপর তিনি বিশাল ব্যয়ের পথে এগিয়ে যান। তিনি ওহাইওতে ২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন কারখানা নির্মাণ শুরু করেন এবং কর্মীদের সংখ্যা বাড়ান। ফলে কোম্পানিটির কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৩২ জনে পৌঁছায়, যা ইন্টেল কখনোই তার চিপ ব্যবসার শীর্ষ অবস্থানে থাকাকালীনও রাখেনি।

তবে করোনা মহামারির কারণে ল্যাপটপ ও পিসির বাজারে বড় পতন ঘটে। এর ফলে ইন্টেলের বাজারমূল্য ও শেয়ার কোম্পানির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কমে যায়।

কোম্পানির এই লোকসানের পর গেলসিঞ্জার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেন এবং সম্পদ বিক্রির কথা ভাবতে বাধ্য হয়।

এ ছাড়া এনভিডিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কোনো কার্যকরী এআই চিপ তৈরি করতে ব্যর্থ হন গেলসিঞ্জার। এর ফলে এনভিডিয়া ৩ ট্রিলিয়ন কোম্পানি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ চ্যাটজিপিটির মতো সেবাগুলোতে কোম্পানিটির চিপ ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোর্ড জানিয়েছে, নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে কোম্পানির কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো হবে। গেলসিঞ্জারের অধীনে ইন্টেল যে ব্যয়বহুল প্রকল্প শুরু করেছিল, সেগুলো নতুন নেতৃত্বের অধীনে মূল্যায়ন করা হবে।

গেলসিঞ্জারের পর নতুন সিইওর মাধ্যমে ইন্টেলের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত