Ajker Patrika

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের বাজার দখলে চীন-মাস্ক দ্বৈরথ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ০২
স্টারলিংকের আধিপত্য চীনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত
স্টারলিংকের আধিপত্য চীনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায় বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ইলন মাস্কের স্টারলিংক। তবে চীনের রাষ্ট্রীয় সমর্থিত কোম্পানি স্পেসসেইল ও জেফ বেজোসের নতুন সেবা ক্রমেই এই প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। স্টারলিংকের আধিপত্য বিস্তারের পথে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে এই নতুন প্রতিযোগীরা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।

গত নভেম্বরে স্পেসসেইল ঘোষণা করেছে, তারা ব্রাজিলে তাদের সেবা দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি সই করেছে এবং ৩০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে। কাজাখ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে কাজাখস্তানে কার্যক্রম শুরু করেছে কোম্পানিটি।

অন্যদিকে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ব্রাজিলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, বেজোসের প্রজেক্ট কুইপার এবং কানাডার টেলেস্যাটের সঙ্গে আলোচনা করছে দেশটির সরকার। এই আলোচনা এখন পর্যন্ত গোপন ছিল।

২০২০ সাল থেকে স্টারলিংক পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (এলইও) অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এখন পর্যন্ত তার এই কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো অত্যন্ত কার্যকরভাবে তথ্য স্থানান্তর করতে পারে, যা দূরবর্তী অঞ্চলে দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। সমুদ্রযাত্রা এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও এর ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনের করপোরেট নথি এবং একাডেমিক গবেষণা থেকে জানা যায়, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের বাজারে স্টারলিংকের আধিপত্য চীনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ বেইজিং স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বীদের (যেমন—স্পেসসেইল, প্রজেক্ট কুইপার) উন্নতিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে এবং স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন ট্র্যাক করার জন্য সামরিক গবেষণায় ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।

গত বছর রেকর্ড ২৬৩টি এলইও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে চীন, যা বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজারে তাদের কার্যকলাপের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্পেসসেইলেরও স্যাটেলাইট রয়েছে। চীনের সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এই কোম্পানি। চলতি বছরে ৬৪৮টি এলইও স্যাটেলাইট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে কাজ করছে স্পেসসেইল।

স্পেসসেইলের এই উদ্যোগ চীনের প্রথম আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড প্রকল্প হিসেবে পরিচিত হতে যাচ্ছে, যা ‘কিয়ানফান’ বা ‘হাজার সেল’ কনস্টেলেশন নামে পরিচিত। এর পাশাপাশি চীন আরও তিনটি স্যাটেলাইট কনস্টেলেশনও উন্নয়ন করছে। এগুলো ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে তাদের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটাবে। এর মাধ্যমে চীন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, কাজাখস্তানসহ বিভিন্ন দেশে তাদের ইন্টারনেট সেবা বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে।

মহাকাশ গবেষক জোনাথন ম্যাকডাওয়েল বলেন, স্টারলিংক বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার স্যাটেলাইট পরিচালনা করছে, এবং তারা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪২ হাজার স্যাটেলাইট পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মহাকাশ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ চৈতন্য গিরি এন মতে, চীনের লক্ষ্য হলো যতটা সম্ভব কক্ষপথের স্থান দখল করা।

চীন যেভাবে মহাকাশে তার আধিপত্য বিস্তার করছে, তা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, চীনের এই মহাকাশ কর্মসূচি তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এটি প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি বৈশ্বিক অবকাঠামো প্রকল্প। তবে একে চীনের ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বাড়ানোর একটি কৌশল বলে মনে করছেন সমালোচকেরা।

এই বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা স্পেসসেইল এবং চীনা এলইও স্যাটেলাইটের আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানে না। তবে, বেইজিং তার মহাকাশ সহযোগিতার মাধ্যমে অন্যান্য দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছে।

স্পেসসেইল বলেছে, তাদের লক্ষ্য হলো—আরও বেশি ব্যবহারকারীকে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সেবা দেওয়া। বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকায় এবং জরুরি পরিস্থিতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সময় এই সেবা দেওয়া।

স্টারলিংকের দ্রুত বিস্তার এবং ইউক্রেনে এর ব্যবহারও চীনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এই স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কগুলোর কার্যক্রম লক্ষ্য করছে।

২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হংকিং টেকনোলজি ১০ হাজার স্যাটেলাইটের কনস্টেলেশন তৈরি করছে। চলতি মাসে ৩৪০ মিলিয়ন ইউয়ান এবং গত বছর স্পেসসেইল ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউয়ান (৯৩০ মিলিয়ন ডলার) তহবিল সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি।

এদিকে চীনের অনেক গবেষণায় সস্তা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এবং কম লেটেন্সি যোগাযোগব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া স্টারলিংকের কনস্টেলেশন (স্যাটেলাইটের গ্রুপ) ট্র্যাক করতে এবং তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য উন্নত সরঞ্জাম তৈরি করছে চীন। গত জানুয়ারিতে চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং জার্নালে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, তারা একটি সিস্টেম এবং অ্যালগরিদম ডিজাইন করেছে, যা স্টারলিংকের মতো মেগাকনস্টেলেশন ট্র্যাক করতে পারে।

গবেষকদের মতে, ‘মহাকাশে সামরিকীকরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মেগাকনস্টেলেশনগুলো ট্র্যাকিং এবং পর্যবেক্ষণ করার টুল তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং চীনের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই স্যাটেলাইট প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য ব্যাপক পরিমাণে পেটেন্টের আবেদন করছে। ২০২৩ সালে চীন ২ হাজার ৪৪৯টি এলইও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি-সম্পর্কিত পেটেন্টের আবেদন করেছে যা, ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত