আইফোন ১৬ সিরিজে যেসব এআই ফিচার পাওয়া যাবে 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩: ৩৪
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ০৫

বিভিন্ন স্মার্টফোনে গত বছর থেকেই এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফিচার যুক্ত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবার নতুন আইফোন সিরিজে বিভিন্ন এআই ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে। আইফোন ১৬ সিরিজের উন্মোচন অনুষ্ঠানে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফিচারগুলোর কথা ব্যাপকভাবে উল্লেখ করেছে অ্যাপল। টেক্সটের সারসংক্ষেপ তৈরি, কল রেকর্ডিংকে টেক্সটে রূপান্তর, নিজের চেহারা দিয়ে ইমোজি তৈরির মতো মজার মজার কাজ করা যাবে এসব ফিচারের মাধ্যমে। কোম্পানিটির এআইভিত্তিক মডেল অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের সমর্থনে ফিচারগুলো ব্যবহার করা যাবে। 

আগামী ১৬ সেপ্টেম্বরে আইওএস ১৮ উন্মোচন বা আগামী ১০ সেপ্টেম্বরে বাজারে আসা আইফোন ১৬ সিরিজে সব ফিচার পাওয়া যাবে না। কারণ আইফোন ১৬ মডেলগুলোতে পর্যায়ক্রমে ফিচারগুলো যুক্ত করবে অ্যাপল। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাদে অ্যাপলের প্রথম সেটের এআই ফিচারগুলো আগামী মাসে বিভিন্ন অঞ্চলে ছাড়া হবে। এটি আইফোন ১৫ প্রো এবং সব আইফোন ১৬ মডেলের পাশাপাশি এমওয়ান বা তার পরবর্তী প্রজন্মের অ্যাপল সিলিকন চিপযুক্ত ম্যাক এবং আইপ্যাডে পাওয়া যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ফিচারগুলো শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা যাবে। 

রাইটিং টুলস
টেক্সট রিরাইট: এই টুলের মাধ্যমে ই-মেইল খসড়াটিকে আরও পেশাদারভাবে রূপান্তরিত করতে পারে। এটি ই-মেইলকে সংক্ষিপ্ত করতে বা বন্ধুসুলভ স্বরে পরিবর্তন করতে পারেন। 
প্রুফরিড: প্রুফরিডিং ফিচারটি বাস্তব জীবনের মতোই ব্যাকরণ ও বাক্য গঠন সংশোধন করবে এবং লেখার বিভিন্ন অংশে উন্নত শব্দ যুক্ত করার প্রস্তাব দেবে। 
সামারাইজ টেক্সট: এই টুলের মাধ্যমে টেক্সটের সারসংক্ষেপ তৈরি করা যাবে। মূল লেখার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো রেখে দেবে। এমনকি এসব টেক্সট দিয়ে বুলেট তালিকা বা টেবিলও তৈরি করে দিতে পারবে। 
স্মার্ট রিপ্লাই: এটি মেইল বা অন্যান্য স্থানে উত্তর দেওয়ার জন্য কিছু প্রাসঙ্গিক পরামর্শ দেবে। 

অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স সমর্থিত নতুন সিরি
আইফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জনপ্রিয় হলো সিরি। তবে এবার এআই প্রযুক্তি নতুন সিরির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এতে আরও উন্নত ফিচার যুক্ত হয়েছে। 

নতুন নকশা: আইফোন, আইপ্যাড, বা কারপ্লেতে, সিরি স্ক্রিনের প্রান্তে একটি রেইনবো বা রঙধনুর রিং হিসেবে দেখা যাবে এবং ম্যাকে সিরি ভাসমান অবস্থায় থাকবে, যা ডেস্কটপের যেকোনো জায়গায় রাখা যাবে। 
অ্যাপলের নতুন ভাষার মডেল: অ্যাপলের অন-ডিভাইস ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষা মডেলের মাধ্যমে সিরি আরও স্মার্ট এবং ভাষা বিশ্লেষণে আরও দক্ষ হবে। এদিকে জটিল প্রশ্নগুলো অ্যাপলের ‘প্রাইভেট ক্লাউড কম্পিউট’ সার্ভারে পাঠানো হবে। তবে এই ক্লাউড কোনো ডেটা সংরক্ষণ করে না বলে দাবি করেছে অ্যাপল। 
টাইপ টু সিরি: কথা বলার পরিবর্তে এখন আপনি যেকোনো সময় অ্যাসিস্ট্যান্টকে প্রশ্ন টাইপ করে পাঠাতে পারবেন। এর ফলে এটি জনসম্মুখে ব্যবহার করতে পারবেন। 
ক্লিন আপ: গুগলের ম্যাজিক ইরেজারের মতো ক্লিন আপ ছবি থেকে অপ্রয়োজনীয় বা অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুগুলো মুছে ফেলবে। এমনকি মুছে ফেলা বস্তুদের ছায়াও সরিয়ে দেবে। 
সার্চ: বিভিন্ন শব্দ টাইপ করে করে ছবি খুঁজতে পারবেন। এর মাধ্যমে যা ছবির লাইব্রেরি স্ক্রল করে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তা খুঁজে পাওয়া যাবে। 
মেমোরিজ: এআইকে বিভিন্ন প্রম্পট দিয়ে বা নির্দেশনা দিয়ে এবং আইফোনের ফটোগ্রাফি লাইব্রেরির মিডিয়া ব্যবহার করে সিনেমাও তৈরি করা যাবে। সিনেমার গল্পটি নাটকীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা কয়েকটি অধ্যায়ে বিভক্ত থাকবে। 

ট্রান্সক্রিপশন 
ফোন কল রেকর্ডিং এবং ট্রান্সক্রিপশন: আইফোনে এখন ফোন কল রেকর্ড করা যাবে এবং পুরো কলের ট্রান্সক্রিপশন তৈরি করে দেবে। পুরো ফোন কলের রেকর্ডিং টেক্সটে রূপান্তর করে দেবে। ফিচারটি সক্রিয় করলে ফোন কল থাকা সকল পক্ষকে জানানো হবে যে, কলটি রেকর্ড করা হচ্ছে। 
নোটসে ভয়েস রেকর্ডিং: নোটস অ্যাপে সরাসরি অডিও রেকর্ড করতে পারবেন এবং এটি কোনো বক্তৃতা টেক্সটে রূপান্তর করতে পারবে। এ ছাড়া নোটস অ্যাপেও অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের অন্যান্য লেখার টুলও ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া পুরো রেকর্ডিং এর সারসংক্ষেপও তৈরি করবে। 

অ্যাপল জানিয়েছে, অন্যান্য এআই ফিচারগুলো ‘এই বছরের শেষের দিকে পরে এবং পরবর্তী মাসগুলোতে’ ছাড়া হবে। অর্থাৎ, ফিচারগুলো অক্টোবরেই আসতে পারে, অথবা আগামী গ্রীষ্ম বা শরৎকালেও আসতে পারে। 

ভিজুয়াল ইনটেলিজেন্স: ফিচারটি গুগল লেন্সের মতো কাজ করবে। কোনো কিছুর ছবি তুলে দিলে আইফোন সেই জিনিস অনলাইনে খুঁজে দেবে আইফোন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি ক্যাফের সামনের অংশের ছবি তুলে দিলে এর মেনু ও সময়সূচি সম্পর্কে তথ্য দেবে। একটি কনসার্ট পোস্টারের ছবি তুলে দিলে এআই কনসার্টের তারিখটি ফোনের ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে রাখবে। ভিজ্যুয়াল ইনটেলিজেন্স আইফোন ১৬ এবং ১৬ প্রোতে ক্যামেরা কন্ট্রোল সাইড বাটন ব্যবহার করে সক্রিয় করা যাবে। 

জেনইমোজি: টেক্সট প্রম্পট বা নির্দেশনা দিয়ে ব্যবহারকারীরা নিজের চেহারা দিয়ে ইমোজি তৈরি করতে পারবেন। এ ছাড়া অ্যাপলের ইমেজ জেনারেটর মনমতো নতুন ইমোজি তৈরি করে দেবে যা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে। 

ইমেজ প্লেগ্রাউন্ড: কাস্টম ইমোজি তৈরির পাশাপাশি অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ভবিষ্যতে কাস্টম ইমেজও তৈরি করবে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা যে ধরনের ছবি চান তার জন্য একটি টেক্সট প্রম্পট দিলেই (সাধারণত কিছু বাস্তব সীমাবদ্ধতা থাকবে), অ্যাপলের মডেলগুলো একটি ছবি তৈরি করে দেবে। 

চ্যাটজিপিটির ব্যবহার: যেখানে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের লেখার টুলগুলো থাকবে, সেখানে অতিরিক্ত জেনারেটিভ এআই অপশন হিসেবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। চ্যাটজিপিটি সিরিকে জিজ্ঞেস করা জটিল প্রশ্নের আরও ভালো উত্তর দিতে পারবে। 

সিরির সঙ্গে থার্ড-পার্টি অ্যাপের সংযোগ: অ্যাপল বলছে, ভবিষ্যতে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করে সিরি বিভিন্ন কাজ করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, সিরি ফটো অ্যাপের ছবি ব্যবহার করে একটি ইমেজ এডিটিং অ্যাপে ছবি সম্পাদনা করতে পারবে। অর্থাৎ সিরি ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন অ্যাপের মধ্যে কাজ করবে। 

তথ্যসূত্র: দ্য ভার্জ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত