Ajker Patrika

সিগন্যাল অ্যাপ কী, এটি কতটা নিরাপদ

অনলাইন ডেস্ক
সিগন্যালের মাসিক ব্যবহারকারী সংখ্যা আনুমানিক ৪০-৭০ মিলিয়ন। ছবি: সংগৃহীত
সিগন্যালের মাসিক ব্যবহারকারী সংখ্যা আনুমানিক ৪০-৭০ মিলিয়ন। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি গোপন গ্রুপ চ্যাট ফাঁস হওয়ার পর মেসেজিং অ্যাপ সিগন্যাল এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তবে, ওই গ্রুপ চ্যাটে কী ধরনের আলোচনা হয়েছিল তা প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ম্যাগাজিন আটলান্টিকের সম্পাদক-ইন-চিফ জেফ্রি গোল্ডবার্গ ভুলক্রমে ওই গোপন গ্রুপ চ্যাটে যোগদান করেন। সেই গ্রুপে ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। গোল্ডবার্গ গ্রুপে যোগ দেওয়ার পর এই সেনা আক্রমণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

এ ঘটনাকে ‘সর্বাধিক অবাক করা’ সামরিক গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস বলে অভিহিত করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটের নেতা চাক শ্যুমার এবং এর জন্য একটি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সিগন্যাল অ্যাপটি আসলে কী এবং এটি কতটা নিরাপদ।

সিগন্যাল অ্যাপের নিরাপত্তা

সিগন্যালের মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা আনুমানিক ৪০-৭০ মিলিয়ন, যা সবচেয়ে বড় মেসেজিং সেবা হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের তুলনায় অনেক ছোট। এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিলিয়নে মাপা হয়। তবে, নিরাপত্তার দিক থেকে সিগন্যাল এগিয়ে রয়েছে।

এটির মূল নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হলো এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন (ই ২ ইই)। এর মানে হলো—শুধু প্রেরক ও প্রাপকই বার্তা পড়তে পারে, সিগন্যাল নিজেও সেগুলো অ্যাকসেস করতে পারে না।

হোয়াটসঅ্যাপসহ অনেক প্ল্যাটফর্মে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন-সুবিধা রয়েছে। তবে সিগন্যালের নিরাপত্তা ফিচার আরও জোরদার। কারণ অ্যাপটি কাজ করার জন্য ব্যবহৃত কোডটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ, যে কেউ এটি পরীক্ষা করতে পারে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে হ্যাকাররা এটি থেকে কোনো দুর্বলতা খুঁজে বের করতে পারবে না।

এর নির্মাতারা দাবি করেন যে, এটি ব্যবহারকারীদের থেকে অনেক কম তথ্য সংগ্রহ করে এবং বিশেষভাবে এটি ব্যবহারকারীদের ইউজার নেম, প্রোফাইল পিকচার বা গ্রুপ-সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড সংরক্ষণ করে না।

এ ছাড়া, ফিচারগুলো অর্থ উপার্জনের জন্য পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজনও নেই। সিগন্যাল মালিক হলো সিগন্যাল ফাউন্ডেশন, যা একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা এবং বিজ্ঞাপন আয়ের পরিবর্তে দান-সহায়তার ওপর নির্ভর করে।

যখন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত খবরটি প্রকাশ পায়, তখন এক্সের (আগের টুইটার) পোস্টে সিগন্যালের প্রধান মেরেডিথ উইটাকার বলেন, ‘সিগন্যাল হলো গোপনীয় যোগাযোগের সোনালি মানদণ্ড।’

এই সোনালি মানদণ্ডই সিগন্যালকে সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। প্রায়ই এই অ্যাপ ব্যবহার করেন তারা। তবে এমন নিরাপত্তা স্তরও অত্যন্ত সংবেদনশীল জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা জন্য যথেষ্ট নয়।

এর কারণ হলো, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার একটি অপরিহার্য ঝুঁকি রয়েছে। এটি শুধু ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার ওপর নির্ভরশীল।

যদি কেউ আপনার ফোনে প্রবেশ করতে পারে, যেখানে সিগন্যাল খোলা থাকে অথবা যদি তারা আপনার পাসওয়ার্ড জানে, তাহলে তারা আপনার বার্তা দেখতে পারবে।

জনসমাগম এলাকায় ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও গোপনীয়তা বিঘ্ন হতে পারে।

ডেটা বিশেষজ্ঞ ক্যারো রোবসন বলেছেন, এটি ‘খুবই অস্বাভাবিক’ যে, উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সিগন্যালের মতো ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগ করবেন।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের যোগাযোগের জন্য সাধারণত ডিভাইসগুলো ‘খুবই নিরাপদ সরকারি নিয়ন্ত্রিত স্থানে’ রাখা হয়।

মার্কিন সরকার ঐতিহাসিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনা করার জন্য সংবেদনশীল সেনসিটিভ ইনফরমেশন ফ্যাসিলিটি (এসসিআইএফ, যা ‘স্কিফ’ হিসেবে উচ্চারিত হয়) ব্যবহার করেছে। স্কিফ হলো একটি অতিরিক্ত নিরাপদ পরিবেষ্টিত এলাকা, যেখানে ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিশেষজ্ঞ রোবসন বলেন, ‘এ ধরনের গোপনীয় তথ্য অ্যাকসেস করতে হলে আপনাকে এমন একটি নির্দিষ্ট কক্ষে বা ভবনে থাকতে হবে, যা নিয়মিতভাবে ত্রুটি বা কোনো শোনার ডিভাইসের জন্য পরীক্ষা করা হয়।

স্কিফগুলো বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। যেমন: মিলিটারি বেস থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের বাসভবন পর্যন্ত।

তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ সিস্টেমটি অত্যন্ত এনক্রিপ্টেড এবং সরকারের নিজস্ব উচ্চতম ক্রিপ্টোগ্রাফি মানদণ্ড ব্যবহার করে সুরক্ষিত। বিশেষ করে যখন প্রতিরক্ষা বিষয় জড়িত থাকে।’

এনক্রিপশন এবং রেকর্ডস

অন্য অনেক মেসেজিং অ্যাপের মতো সিগন্যাল ব্যবহারকারীদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে মেসেজ মুছে ফেলার সুযোগ দেয়।

আটলান্টিকের জেফ্রি গোল্ডবার্গ বলেছেন, যে সিগন্যাল গ্রুপে তিনি যোগদান করেছিলেন, সেই গ্রুপের কিছু মেসেজ এক সপ্তাহ পর অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে।

যেমন: এই ফিচার রেকর্ড-রক্ষণের আইন লঙ্ঘন করতে পারে। ব্যবহারকারীরা যদি তাঁদের মেসেজগুলো সরকারি কোনো অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টে ফরওয়ার্ড না করেন, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড হারিয়ে যেতে পারে।

তবে ই২ ইই ফিচার নিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ তারা চায় যে মেসেজিং সার্ভিসগুলোতে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহৃত হলেও তারা সেই মেসেজগুলো পড়তে পারে। জাতীয় নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে এই সুবিধা পাওয়ার দাবি করে তারা।

সিগন্যাল, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপগুলোর কাছে এ ধরনের ব্যাকডোর তৈরির প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করেছে। কারণ তাদের দাবি, এই সুবিধা শেষ পর্যন্ত দুষ্কৃতকারীদের সাহায্য করতে পারে।

২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে অ্যাপটি বন্ধ করার হুমকি দেয় সিগন্যাল। তারা বলে, যুক্তরাজ্যে আইনপ্রণেতারা অ্যাপটির নিরাপত্তাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করলে এই পদক্ষেপ নেবে।

চলতি বছরে যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাপলের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। অ্যাপল ই২ ইই (এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ক্লাউড স্টোরেজে ব্যবহারকারীদের ফাইল সুরক্ষিত রাখে। তবে, যুক্তরাজ্য সরকার ওই ফিচারের মাধ্যমে সংরক্ষিত তথ্য অ্যাকসেস করতে চেয়েছিল। এর ফলে, অ্যাপল শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ওই ফিচার সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়।

এই আইনি মামলা এখনো চলছে। তবে আপনার গোপন তথ্য যদি ভুল ব্যক্তির সঙ্গে শেয়ার করেন, তখন কোনো পর্যায়ের নিরাপত্তা বা আইনি সুরক্ষা দিয়েই গোপনীয়তা রক্ষা হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারা জীবন ‘একজনের কাছে কৃতজ্ঞ’ থাকবেন তামিম, কে তিনি

মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ঢাকা: এনসিপি নেতা-কর্মীদের গলা ধাক্কা

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় যে কারণে চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না ভারত

বিমসটেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টায় মিয়ানমার: রয়টার্স

সচিবালয়ে কর্মরতদের রেশন দেবে সরকার, ক্ষুব্ধ বাইরে কর্মরতরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত