Ajker Patrika

স্মার্টঘড়ির ব্যান্ডে রয়েছে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান, দাবি গবেষকদের

আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩০
এই গবেষণায় গুগল, স্যামসাং, অ্যাপল, ফিটবিট এবং ক্যাস্টিফাইয়ের মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর ওপর পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। ছবি: ডিজিটাল ট্রেন্ডস
এই গবেষণায় গুগল, স্যামসাং, অ্যাপল, ফিটবিট এবং ক্যাস্টিফাইয়ের মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর ওপর পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। ছবি: ডিজিটাল ট্রেন্ডস

বর্তমান যুগে একটি জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হলো স্মার্টঘড়ি। শুধু খেলোয়াড়েরাই নয়, কর্মব্যস্ত থেকে ফ্যাশন সচেতন যে কেউ ঝুঁকছেন এই ঘড়ির দিকে। স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের সহায়ক টুল হলেও এটি মানুষকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আনে যা ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই তথ্য জানা যায়।

কিছু জনপ্রিয় স্মার্টওয়াচের ব্যান্ড বা স্ট্যাপে পেরফ্লুওরোহেক্সানোইক অ্যাসিড (পিএফএইচএক্সএ) নামক বিপজ্জনক কেমিক্যালের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রয়েছে, যা ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হতে পারে।

এই গবেষণায় গুগল, স্যামসাং, অ্যাপল, ফিটবিট এবং ক্যাস্টিফাইয়ের মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর ওপর পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, স্যামসাং এবং অ্যাপল উভয়ই এমন স্মার্টঘড়ি বিক্রি করে যেগুলো ফ্লুরোএলাস্টোমার নামে একটি রাসায়নিক দিয়ে তৈরি, যা এই গবেষণার মূল বিষয়বস্তু। তাদের ওয়েবসাইটেও এই পদার্থটি ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে।

ফ্লুরোএলাস্টোমার দিয়ে তৈরি ঘড়ির স্ট্র্যাপের পৃষ্ঠ থেকে খুব সহজে পিএফএইচএক্সএ বের হয়ে আসে এবং ত্বকে প্রবেশ করে। আরও চিন্তার বিষয় হলো—মানুষ এই স্মার্ট ডিভাইসগুলো শুধু দিনে নয়, রাতেও দীর্ঘ সময় ধরে পরিধান করে থাকে।

মানুষের ঘুমের মান পর্যবেক্ষণের জন্য এগুলো ঘুমানোর সময় পড়ে থাকে। গবেষক দল বলছে, ‘১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এসব ডিভাইসে পড়ে থাকলে ত্বকের গভীরে শরীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে।’

গবেষণাটি তুলে ধরেছে কীভাবে বিভিন্ন স্ট্র্যাপ ‘স্পোর্টস এবং ফিটনেস’ অনুরাগীদের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল, যা মানে হল যে এগুলো ব্যায়ামের সময় পরিধান করা হয়। এর ফলে ঘামের মাধ্যমে রাসায়নিকের সংস্পর্শ বেড়ে যেতে পারে এবং গরমে ত্বকের ছিদ্র খুলে যাওয়ার কারণে সেই রাসায়রনিক শরীরে প্রবাহিত হতে পারে।

গবেষণাটি দেখিয়েছে যে, অনেক স্ট্র্যাপ ‘স্পোর্টস এবং ফিটনেস’ অনুরাগীদের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এগুলো ব্যায়ামের সময় পরিধানের পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে ঘামের সঙ্গে রাসায়নিক সংস্পর্শ বাড়তে পারে এবং ত্বকের ভেতর প্রবেশ করতে পারে।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, পিএফএইচএক্সএ–এ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শোষণ ত্বকের মাধ্যমে হয়। এটি এমন একটি বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ, যা ‘ফরএভার কেমিক্যাল নামে পরিচিত। এগুলো পরিবেশে দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে সহজে ভেঙে পড়তে পারে না। এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব এখনো পুরোপুরি অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়নি।

ফরএভার কেমিক্যালস প্রায় সবকিছুতেই পাওয়া যায়, যেমন কসমেটিকস, রান্নার পাত্র, পোশাক এবং ইলেকট্রনিকসে। বিশেষত তাপ, পানি, তেল এবং তেলচিটে প্রতিরোধী হওয়ার কারণে কয়েক দশক ধরেই ভোগ্যপণ্য ও শিল্পজাত দ্রব্যে ব্যবহার হচ্ছে এসব রাসায়নিক পদার্থ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ক্ষতিকারক প্রভাব ব্যাপকভাবে চিহ্নিত হয়েছে।

ফরএভার কেমিক্যালস বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে ক্যানসারও রয়েছে। পানি, মাটি, এমনকি খাবারের মধ্যেও এগুলোর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) অনুযায়ী, পেরফ্লুওরো এবং পলিফ্লুওরোআলকাইল উপাদান (পিএফএএস) -ভাঙনের ফলে পিএফএইচএক্সএ পাওয়া যায়।

গবেষণার অংশ হিসেব ফ্লুরোএলাস্টোমারদের ওপর বেশি ফোকাস করে গবেষকদলটি। এটি মূলত পিএফএএস থেকে তৈরি একটি সিনথেটিক রাবারের শ্রেণি। গবেষকেরা ফ্লুরিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি খুঁজছিল। আকর্ষণীয়ভাবে, বেশি দামি ব্যান্ডগুলোতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপস্থিতি সস্তা ব্যান্ডগুলোর চেয়ে বেশি ছিল।

দলের বিশ্লেষণ করা ২২টি ব্র্যান্ডের সব ফ্লুরোএলাস্টোমার ব্যান্ডে ফ্লুরিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আশ্চর্যজনকভাবে এমন কিছু ব্যান্ডে যা ফ্লুরোএলাস্টোমার থেকে তৈরি ছিল না, তাতেও ফ্লুরিন পাওয়া গেছে, যা পিএফএএসের উপস্থিতির শক্তিশালী সংকেত।

এই রাসায়নিকগুলো একটি বড় অংশ ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়ে রক্তে প্রবাহিত হতে পারে।

এই গবেষণার সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পিএফএইচএক্সএ সম্পর্কিত উদ্বেগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। ২০২৩ সালে, পিএফএইচএক্সএ–এর সঙ্গে সম্পর্কিত সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে ইউএস ইপিএ। যেমন—যকৃত, রক্ত এবং অ্যান্ডোক্রাইন সিস্টেমের প্রভাব। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর ব্যবহার সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

গবেষণাপত্রের সহলেখক অ্যালিসা উইকস পরামর্শ দিয়েছেন যে, যদি গ্রাহকেরা পিএফএইচএক্সএয়ের সংস্পর্শ এড়াতে চান, তবে তাদের স্মার্টওয়াচ এবং ফিটনেস ব্যান্ডের জন্য কম দামের ব্যান্ড বেছে নেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেছেন, ‘যদি গ্রাহকেরা বেশি দামের ব্যান্ড কিনতে চান, তবে আমরা পরামর্শ দিই যে তারা পণ্যের বিবরণ পড়ুন এবং সেগুলোর মধ্যে যেগুলোতে ফ্লুরোএলাস্টোমার রয়েছে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।

তথ্যসূত্র: ডিজিটাল ট্রেন্ডস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

তখন অন্য একটা সংগঠন করতাম, এখন বলতে লজ্জা হয়: জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত