এই ক্যাকটাসের দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, বাঁচে ১৫০-২০০ বছর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৫: ০৪
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ০৯

আচ্ছা, একটি ক্যাকটাস কতটুকু লম্বা হতে পারে? যদি শোনেন, কোনো ক্যাকটাসের দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট কিংবা তারও বেশি, তাহলে নিশ্চয় অবাক হবেন। সাওয়ারো ক্যাকটাসের বেলায় কথাটি পুরোপুরি সত্য।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা ও মেক্সিকোর কিছু এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সনোরান মরুভূমিতে পাবেন এই ক্যাকটাস। দক্ষিণ অ্যারিজোনা এবং মেক্সিকোর পশ্চিম সনোরান এলাকায় এই ক্যাকটাসদের আধিক্য চোখে পড়ে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়ায়ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কিছু ক্যাকটাস। 

সনোরান মরুভূমিতে দেখা মেলে বিশাল এই ক্যাকটাসদের। ছবি: ফেসবুকমরুভূমির শুকনো আবহাওয়ায় চমৎকার মানিয়ে নিয়েছে এরা। নামে ক্যাকটাস হলেও অনেকটা বড় বৃক্ষের মতো উঠে গেছে এর শরীর, সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা বা বাহুর বিস্তার ঘটে। ওপরের দিকে বাঁকা হয়ে উঠে যাওয়া এ ধরনের বাহুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক হতে পারে। অবশ্য কোনো কোনো ক্যাকটাসের শাখা থাকে না। 

অন্য ক্যাকটাসের মতো সাওয়ারোরাও কাঁটাময়। বসন্তের শেষে শোভা পায় সাদা ফুল, গ্রীষ্মে ধরে লাল ফল। এদের বেড়ে ওঠা ও টিকে থাকার সবচেয়ে বড় নিয়ামক পানি ও তাপমাত্রা। গাছটি যদি বেশি উঁচু এলাকায় থাকে, তবে শীতল আবহাওয়া এবং তুষারে মারা পড়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও সনোরান মরুভূমিতে শীত ও গ্রীষ্ম—দুই ঋতুতেই বৃষ্টি হয়। ধারণা করা হয়, সাওয়ারো বেশির ভাগ আর্দ্রতা সংগ্রহ করে গ্রীষ্মের বৃষ্টি থেকে। 

মরুভূমির শুকনো আবহাওয়ায় চমৎকার মানিয়ে নিয়েছে এরা। ছবি: উইকিপিডিয়াসাওয়ারোর বৈজ্ঞানিক নাম কার্নেগিয়া জাইগেন্টিয়া। শিল্পপতি ও সমাজসেবী অ্যান্ড্রু কার্নেগিয়ার নামে এই নামকরণ। ১৯০৩ সালে অ্যারিজোনার ট্যুসনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ডেজার্ট বোটানিক্যাল ল্যাবরেটরি। এখন অবশ্য ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার কলেজ অব সায়েন্সের অধীনে টুমামক: পিপল অ্যান্ড হ্যাবিটেটস নামে পরিচালিত হয় এটি। 

খরা ও রুক্ষ আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য সাওয়ারোর বড় অস্ত্র তার পানি সঞ্চয়ের ক্ষমতা। বৃষ্টির সময় কয়েক শ গ্যালন পর্যন্ত পানি জমিয়ে রাখতে পারে এ ধরনের একেকটি উদ্ভিদ। 

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ক্যাকটাসদের শাখা বা বাহুর বিস্তার ঘটে। ছবি: ফেসবুকযত বেশি পানি জমা হয়, সাওয়ারোর বাকল আরও সঞ্চয়ের জন্য জায়গা তৈরি করতে প্রসারিত হতে শুরু করে। তাই এই ক্যাকটাসগুলো খুব ভারী হতে পারে। এমনকি এক টন ওজনের সাওয়ারো ক্যাকটাস আছে। 

এ ধরনের ক্যাকটাস মরুভূমির বিভিন্ন বন্য প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। গিলা কাঠঠোকরা সাধারণত প্রথম প্রাণী হিসেবে সাওয়ারোতে বাসার জন্য গর্ত তৈরি করে। গর্তের চারপাশটা শুকিয়ে একটি শক্ত আবরণে রূপ নেওয়ার জন্য তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে। এই পাখিগুলো তাদের বাচ্চাদের বড় করার পরে গর্তগুলো প্যাঁচাসহ আরও নানা জাতের পাখির আশ্রয় হিসেবে কাজ করে। 

সাওয়ারো ক্যাকটাসের সঙ্গে দুই পর্যটক। ছবি: ফেসবুকসাওয়ারো ক্যাকটাস সাধারণত ৪০-৫০ ফুট উচ্চতার হয়। এমনকি ৭০ ফুটের বেশি উচ্চতার ক্যাকটাসের কথাও শোনা যায়। তবে এরা কিন্তু খুব ধীরে ধীরে বাড়ে। প্রথম ১০ বছরে এদের উচ্চতা থাকে মোটে দেড় ইঞ্চি। এমনকি প্রথম বাহু তৈরি হতে ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত লাগে কখনো কখনো। সাধারণত এসব ক্যাকটাস ১৫০-২০০ বছর বাঁচে। যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া সবচেয়ে বড় ক্যাকটাস এরা। 

সাওয়ারোর বেশির ভাগ শিকড় মাত্র চার-ছয় ইঞ্চি গভীরে যায়। তবে একটি গভীর শিকড় রয়েছে, যেটি মাটির দুই ফুটের বেশি গভীরে চলে যায়। 

খরা ও রুক্ষ আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য সাওয়ারোর বড় অস্ত্র তার পানি সঞ্চয়ের ক্ষমতা। ছবি: ফেসবুকসাওয়ারো মারা যাওয়ার পর এটি ঘরের ছাদ, বেড়া ও আসবাব তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। পাখিরা বাসা বাঁধে এমন গর্ত বা ‘সাওয়ারো বুট’ মৃত সাওয়ারো গাছের মধ্যে পাওয়া যায়। আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানরা এগুলোকে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করত। 

পাঠক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা মেক্সিকো ভ্রমণে গেলে এমন একটি আশ্চর্য গাছ দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি। 

সূত্র: ডেজার্ট মিউজিয়াম ডট অর্গ, ডেজার্ট বোটানিক্যাল গার্ডেন

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত