ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়েছিল লন্ডনের ১৩ হাজার বাড়ি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৩৭
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬: ৩১

২ সেপ্টেম্বর, ১৬৬৬। লন্ডন ব্রিজের কাছের একটি দালানে সূত্রপাত হয় এক অগ্নিকাণ্ডের। এটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে গোটা টেমস স্ট্রিটে। সেখানকার গুদামগুলি ছিল নানান দাহ্য পদার্থে ভরপুর। পূর্ব দিকে বয়ে যাওয়া হাওয়া পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর করে তোলে। ৬ সেপ্টেম্বর যখন আগুন নিভে যায়, তখন লন্ডনের পাঁচ ভাগের চার ভাগের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে।

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ড পরিচিতি পায় গ্রেট ফায়ার অব লন্ডন নামে। তবে সৌভাগ্যক্রমে এর ভয়ংকরত্বের বিবেচনায় প্রাণহানি ছিল তুলনামূলক কম। ১৬ জন মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায় অগ্নিকাণ্ডটিতে।

তবে এটি ছিল এমন একটি বিপর্যয় যা ঘটা যেন অবিশ্যম্ভাবী ছিল। ১৬৬৬ সালের লন্ডন শহর ছিল ওক কাঠের তৈরি মধ্যযুগীয় সব ঘর-বাড়িতে ভরপুর। দরিদ্র কিছু মানুষের ঘরের দেয়াল আলকাতরা দিয়ে আবৃত ছিল। এটি বৃষ্টি থেকে ঘর বাঁচাতে কার্যকর হলেও আগুনের জন্য আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিল কাঠামোগুলোকে। রাস্তাগুলো ছিল সরু, বাড়িঘরগুলো দাঁড়িয়ে ছিল একটার সঙ্গে একটা গাদাগাদি করে।

গ্রেট ফায়ার অব লন্ডনের ভয়াবহতার চিত্রটি ফুটিয়ে তোলেন এক শিল্পী, ১৬৭০ সালে। ছবি: সংগৃহীতস্বাভাবিকভাবেই ওই সময়ে অগ্নিনির্বাপণ পদ্ধতিও উন্নত ছিল না। জলের বালতি এবং আদিম হাত পাম্পই ছিল সহায়। অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপদের জন্য নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো একটা বিপদ ঘটনার আগে মানুষ কবেই বা সতর্ক হয়েছে বলেন!

তারপর এল, ১৬৬৬ সালের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখের সেই সন্ধ্যা। পাডিং লেনে তার বেকারির উনুন ঠিকভাবে না নিভিয়েই ঘুমাতে যান টমাস ফেরিনর। মাঝরাতের কোনো এক সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ চুলার পাশে গাদা করে রাখা কাঠের স্তূপে গিয়ে পড়ে। আগুনের শিখা বাড়িটির দখল নিতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ফেরিনর কোনোমতে পরিবার এবং এক ভৃত্যসহ ওপরের তলার একটি জানালা গলে পালাতে পারলেও বেকারির এক কর্মচারী মারা পড়েন। তিনিই ছিলেন গ্রেট ফায়ারের প্রথম শিকার।

ফেরিনরের বেকারি থেকে স্ফুলিঙ্গ লাফিয়ে রাস্তার ওপারে এসে স্টার ইন নামের সরাইখানার আস্তাবলের খড় ও পশুখাদ্যে আগুনের সূত্রপাত ঘটায়। সেখান থেকে যা ছড়িয়ে পড়ে টেমস স্ট্রিটে। যেখানে নদী তীরের গুদামগুলি মোমবাতি, বাতির তেল, স্পিরিট এবং কয়লার মতো দাহ্য পদার্থে ছিল পরিপূর্ণ। আগুনের শিখায় এগুলো বিস্ফোরিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একটি ‘দাবানলে’র রূপ নেয় তখন এটি। 

বালতিতে পানি নিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকা স্থানীয়রা অগ্নিনির্বাপণে তাদের নিরর্থক প্রচেষ্টা বাদ দেন এ পর্যায়ে। বরং নিজেদের পরিবারের সদস্য সরিয়ে নিতে এবং মূল্যবান জিনিসপত্র বাঁচাতে বাড়িতে ছুটে যান।

দ্য লন্ডন গেজেটে অগ্নিকাণ্ডের বিবরণ। ছবি: সংগৃহীতএটি ছিল গ্রীষ্মের উষ্ণ ও শুষ্ক একটি দিন। এর মধ্যে শক্তিশালী বাতাস আগুনের শিখাকে ছড়িয়ে পড়তে ভালোমতোই সাহায্য করে। আগুনের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরের কর্তৃপক্ষ ভবনগুলি ভেঙে ফাঁকা জায়গা তৈরি করে এর পথ আটকানোর জন্য লড়াই করছিল। কিন্তু তারা তাদের কাজ শেষ করার আগেই লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলা আগুনের শিখা নতুন নতুন স্থাপনাকে ছুঁয়ে ফেলছিল।

অনেকে মালামালসহ টেমস নদী ধরে পালালেন। লন্ডন শহরের প্রান্তসীমায় অবস্থিত পাহাড়গুলোতে গিয়ে উঠলেন আশ্রয়হীন মানুষেরা। গ্রেট ফায়ারের আগুন দেখা যাচ্ছিল ৩০ মাইল দূর থেকে। ৫ সেপ্টেম্বর আগুন দুর্বল হতে থাকে এবং ৬ সেপ্টেম্বর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে পুরোপুরি ধ্বংস হয় ১৩ হাজার বাড়ি, ৯০টির মতো গির্জাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দ্য ওল্ড সেন্ট ক্যাথোড্রাল পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়, তেমনি পুড়ে যায় ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনা ও নিদর্শন। আনুমানিক এক লাখ মানুষ গৃহহীন হন।

কিছুদিনের মধ্যেই রাজা দ্বিতীয় চার্লস তাঁর রাজধানী পুনর্নির্মাণ শুরু করেন। ভবিষ্যতের আগুন প্রতিরোধ করার জন্য, বেশির ভাগ নতুন বাড়ি ইট বা পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় এবং মোটা দেয়াল দিয়ে আলাদা করা হয়। সরু গলিপথ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি রাস্তাগুলি প্রশস্ত করা হয়। অবশ্য লন্ডনে স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ বা ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮ শতকে।

সূত্র: হিস্টরি ডট কম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত