জাপানের যে দ্বীপে বিড়ালদের রাজত্ব

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ০৭
Thumbnail image

জাপানের ছোট্ট দ্বীপ তাশিরোজিমার গল্প বলেছিলাম মনে আছে, যেখানে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি। মজার ঘটনা, জাপানে এমন আরও দ্বীপ আছে, যেখানে বিড়ালের আধিপত্য। এমনই এক দ্বীপ আয়োশিমা। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বীপটি একসময় জেলেপল্লি হিসেবে পরিচিত হলেও এখন বিড়ালদের দ্বীপ নামেই চেনেন সবাই।

জাপানের নাগাহামা একটি ফেরি ধরে ৩০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবেন ইনল্যান্ড সাগরের বুকে অবস্থিত বিড়ালদের এই রাজ্যে। বিড়ালের কল্যাণে দ্বীপটিতে এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেশ বেড়েছে। ‘একটা সময় পর্যন্ত পর্যটক আসত কমই আমার ফেরিতে।’ বলেন ফেরির ক্যাপ্টেন নবুইয়োকি নিনোমিয়া, ‘এখন প্রতি সপ্তাহেই পর্যটক নিয়ে আসতে হয়। আর পর্যটকদের জন্য ছোট্ট সেই দ্বীপে আমাদের একটি জিনিসই আছে, সেটি বিড়াল।’

এখানকার বিড়ালদের আধবুনো বলতে পারেন। তবে মানুষের সঙ্গে পেয়ে অভ্যস্ত তারা। খুশিমনেই পর্যটকদের সঙ্গে খেলা করে তারা। কারণ বিড়ালদের জানা আছে, পর্যটকের আগমন মানেই সঙ্গে করে টুনা মাছের ক্যানসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার নিয়ে আসা। এমনকি দ্বীপের একমাত্র কমিউনিটি সেন্টারটির পাশে বিড়ালদের খাওয়ানোর একটি বিশেষ জায়গাও আছে। 

ছবি তোলার জন্য পোজ দিল নাকি? ছবি: ফেসবুকসত্যি বলতে, দ্বীপে মানুষের অন্তত ৩০ গুণ বিড়ালের বাস এখানে। কিন্তু জাপানের দুর্গম এই দ্বীপে এতো বিড়াল এল কীভাবে? মানুষের তুলনায় এদের সংখ্যাই বা এত বাড়ল কীভাবে? 

১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দ্বীপে মোটামুটি ৯০০ মানুষের বাস ছিল। এদের বেশির ভাগই ছিলেন জেলে। যত দূর জানা যায়, দ্বীপের এই জেলেরা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে প্রথম এখানে বিড়াল আমদানি করেন।

তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বীপের বেশির ভাগ জেলেই অন্যত্র পাড়ি জমান। তারপর ধীরে ধীরে আরও মানুষ উন্নত জীবনের আশায় মূলভূমি কিংবা অন্য দ্বীপে পাড়ি জমান। এভাবে কমতে কমতে দ্বীপে এখন ছয়জন মানুষের বাস বলে জানা গেছে। এদের সবাই বৃদ্ধ। এদিকে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে এবং তাদের শিকার করার মতো কোনো প্রাণী না থাকায় বাড়তে বাড়তে বিড়ালের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ২০০-এর আশপাশে।  

বিড়ালদের খাবার দেওয়া হচ্ছে । ছবি: ফেসবুক অবশ্য বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা যে সব সময় ভালো তা নয়। কখনো কখনো এটি নিয়ে ঝামেলাও হয়। দ্বীপ নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, এলাকার কর্তৃত্ব নিয়ে কখনো কখনো পুরুষ ও বিড়ালের মধ্যে রেষারেষি হয়। তেমনি মাদি বিড়ালের মধ্যে খাবার নিয়ে বাধে লড়াই।

অবশ্য বেশির ভাগের ধারণা, এটা বড় কোনো ব্যাপার নয়, বিড়ালরাজ্যে বিড়ালেরা মিলেমিশে ভালোই আছে। ‘এটি যেন বিড়ালদের এক রাজ্য’ বলেন স্থানীয় বাসিন্দা কাজুইয়োকি ওনো, ‘রাস্তায় শুয়ে শুয়ে দিনভর সূর্যের তাপের ওম নিতেই পছন্দ করে ওরা।’ 

ইনল্যান্ড সাগরে অবস্থান আয়োশিমা দ্বীপের। ছবি: ফেসবুকখাবার নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয় শীতের সময়। সে সময় এখানে পর্যটক আসায় কিছুটা ভাটা পড়ে। এতে খাবারে টান পড়ে বিড়ালদের। তখন দ্বীপে যে গোটা কয়েক স্থানীয় বাসিন্দা থাকেন, তাঁদের দেওয়া খাবারে কিংবা দ্বীপে খুঁজে-পেতে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। অবশ্য কখনো বাইরে থেকে অনুদান হিসেবেও খাবার আসে চারপেয়ে প্রাণীদের জন্য।

‘গ্রীষ্ম আর বসন্তে পর্যটকেরা খাবার নিয়ে আসেন বিড়ালদের খাওয়াতে। তবে যখন তাপমাত্রা বেশি কমে আসে, সাগর অশান্ত হয়ে ওঠে, খুব কম পর্যটকেরই আগমন ঘটে এখানে। কখনো উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে নৌকা কিংবা ফেরিও আসে না তখন।’ বলেন ওনো।

একটা মাছ মিলেছে, মজা করে খাওয়া যাবে—এটাই সম্ভবত ভাবছে বিড়ালটি। ছবি: ফেসবুকজানা যায়, ২০১৬ সালের শীতে এ ধরনের একটি সংকট দেখা দিয়েছিল, তবে পরে অনুদান হিসেবে মূল ভূমি থেকে সমাধান হয় চারপেয়েদের খাবারের সংকটের।

অবশ্য দ্বীপটি বিড়ালদের মোটামুটি দখলে চলে গেছে—এ খবর একটা সময় পর্যন্ত মূলভূমির মানুষের খুব একটা জানা ছিল না। পরে ফুবিরাই নামের এক আলোকচিত্রী দ্বীপের এই বিড়ালদের অনেক ছবি তোলেন। তাঁর ব্লগে এখানকার বিড়ালদের কথা উঠে আসে, সঙ্গে নানা ভঙ্গিমায় তাদের ছবি। আর এই ছবিগুলো ২০১২ সালের দিকে ভাইরাল হওয়ার পরই দ্বীপটিতে বাড়ে পর্যটকদের আনাগোনা। কালক্রমে পরিচিতি পেয়ে যায় ‘বিড়ালদ্বীপ’ হিসেবে। তবে এখনো পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মানে এখানে কোনো হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান খুঁজে পাবেন না।  কাজেই আয়োশিমায় কেউ ভ্রমণে যেতে চাইলে প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। 

এত বিড়াল একসঙ্গে, ঘটনা কী? ছবি: ফেসবুকএদিকে দ্বীপে পর্যটক আসাটা দ্বীপের বৃদ্ধ মানুষেরা দেখেন ভালো চোখেই। কারণ পর্যটকদের দেওয়া খাবারেই বিড়ালদের বেশ চলে যায়। তাদের এই বুড়ো ঘাড়ে আর বাড়তি দায়িত্ব চাপে না। অবশ্য এমনিতে তাঁরা সাধ্যমতো বিড়ালদের দেখভাল করেন। তাদের মাছ ধরে খাওয়ানও।

২০০–র মতো বিড়ালের বাস দ্বীপটিতে। ছবি: ফেসবুকএবার কীভাবে বিড়ালদের এই রাজ্যে পৌঁছা যায় তা জেনে নেওয়া যাক: নাগাহামা বন্দর থেকে ফেরিতে চেপে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন দ্বীপটিতে। সময় লাগবে ৩০-৩৫ মিনিট। ইয়ো–নাগাহামা ট্রেন স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ নাগাহামা বন্দর।  মাতসুয়ামা স্টেশন থেকে ট্রেনে এক ঘণ্টায় পৌঁছা যায় ইয়ো-নাগাহামা স্টেশনে। জাপানের বড় শহরগুলো যেমন টোকিও, ওসাকা প্রভৃতি থেকে ট্রেনে সরাসরি যাওয়া যায় মাতসুয়ামায়। আপনি যদি বিড়ালপ্রেমী হন আর জাপানে ঘুরতে যান, তবে বিড়ালরাজ্যে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি।

সূত্র: এল দেট ইন্টারেস্টিং ডট কম, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, জাপান সুইচ ডট কম

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

টিউলিপ সিদ্দিকের পতন ঘটাতে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ রাজনীতির আঁতাত

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত