জাপানের খরগোশরাজ্যে স্বাগত

ইশতিয়াক হাসান
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ৩৯
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫৬

জাপানে প্রায় ৭ হাজার দ্বীপ আছে। এগুলোর কোনো কোনোটি রীতিমতো অদ্ভুত। মানুষের চেয়ে বেশি বিড়ালের বাস এমন একটি দ্বীপের সঙ্গে আগেই পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারের গল্প এমন এক দ্বীপের, যেখানে মহানন্দে ঘুরে বেড়ায় খরগোশের দল। তাদের বিরক্ত করারও কেউ নেই।

জাপানের হিরোশিমা ও শিকোকুর মাঝখানে সেতো ইনল্যান্ড সাগরে অবস্থিত ছোট্ট এক দ্বীপ অকুনোশিমা। একসময় দ্বীপটি ছিল জাপানি সেনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি এলাকা, যেখানে গোপনে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করা হতো। এখন গোটা দ্বীপটি পরিণত হয়েছে ফুটফুটে, তুলতুলে সব খরগোশের রাজ্যে। তারাই এখন এই দ্বীপের মূল বাসিন্দা। 

১৯২৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অকুনোশিমা দ্বীপটি ছিল জাপানি সেনাদের রাসায়নিক তৈরির জায়গা। যে ১৬ বছর এটি রাসায়নিক তৈরির এলাকা হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সে সময় চূড়ান্ত রকম গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। এমনকি মানচিত্র থেকে পর্যন্ত জায়গাটির নাম মুছে ফেলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত সব কাগজ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এমনকি বিষাক্ত গ্যাস এবং এগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা সরঞ্জাম নষ্ট করে ফেলা হয়। অবশ্য তখন ব্যবহৃত অনেক দালানের ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখতে পাবেন দ্বীপে।

দ্বীপটিতে এখন আছে ৯ শতাধিক খরগোশকোনো কোনো সূত্রের দাবি, দ্বীপে প্রথম খরগোশ আনা হয় গ্যাসের প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে এগুলো দ্বীপে ছেড়ে দেন শ্রমিকেরা। কিংবা এগুলো কোনোভাবে খাঁচা থেকে পালিয়ে যায়। অপর একটি সূত্রের দাবি, স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী ১৯৭১ সালে দ্বীপটি ভ্রমণে এসে আটটি খরগোশ ছেড়ে দেয়। 

যেভাবেই আসুক, আগের সেই খরগোশগুলো বংশ বৃদ্ধি করে সংখ্যায় অনেক বেড়ে গেছে। এই দ্বীপে খরগোশদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে তাদের শিকার করার মতো বড় কোনো জন্তু নেই। এখন ছোট্ট এই দ্বীপে ৯ শতাধিক খরগোশ ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। লোকেরা তাই একে ওসাগি শিমা বা ‘খরগোশ দ্বীপ’ হিসেবেই বেশি চেনে। 

ওই তো অকুনোশিমা দ্বীপবুনো খরগোশ হলেও দ্বীপে নিয়মিত পর্যটক আসায় এরা মানুষের সঙ্গে বেশ পরিচিত। খাবারের খোঁজে তারা পর্যটক দেখলেই তাঁদের দিকে এগিয়ে যায়। কখনো একটু আদর পেলে লাফ দিয়ে উঠে যায় কারও কোলে। 

পর্যটকেরা চাইলেই খরগোশদের খেতে দিতে পারেন। দ্বীপেই পেয়ে যাবেন কিউকামুরা অকুনোশিমা নামের একটি হোটেল। সেখান থেকেই কিনতে পারবেন খরগোশের খাবার। চাইলে সেখানে রাতও কাটাতে পারবেন। অবশ্য খরগোশের খাবার তাদানওয়োমি থেকেও কিনে নিতে পারেন। তবে খরগোশদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্বীপে বিড়াল ও কুকুরের প্রবেশ মানা।

দ্বীপে বড় কোনো শিকারি প্রাণী না থাকায় খরগোশেরা আছে মহানন্দেবিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই খরগোশদের কথা জেনে অনেক পর্যটকই ভিড় জমাচ্ছেন দ্বীপটিতে। ১৯৮৮ সালে এখানে স্থাপিত হয় পয়জন গ্যাস মিউজিয়াম। বিষাক্ত গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে জানাতে ও সচেতন করাই এই জাদুঘরের লক্ষ্য।

অকুনোশিমা দ্বীপের পয়জন গ্যাস মিউজিয়ামকারও কারও ধারণা, দ্বীপটি এখনো পুরোপুরি নিরাপদ নয়। কারণ গোটা দ্বীপটিকে দূষণমুক্ত করতে বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গুজব আছে, দ্বীপের ভেতরের কিছু গুপ্ত স্থানেই শ্রমিকেরা যুদ্ধ শেষে বিষাক্ত গ্যাস আটকে রাখেন। তবে এ বিষয়ে মেলেনি নিশ্চিত কোনো তথ্য। 

পর্যটকদের কাছে খরগোশেরা আসে খাবারের খোঁজেজাপানের খরগোশরাজ্যে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো হিরোশিমার তাদানওয়োমি বন্দরে গিয়ে সেখান থেকে ফেরি ধরা। ফেরিযাত্রা মাত্র ১৫ মিনিট দীর্ঘ। এক ঘণ্টা পর পর ফেরি পাওয়া যায়। সকাল ৭টায় প্রথম ফেরিটি ছাড়ে। দ্বীপ থেকে শেষ ফেরি ছেড়ে আসে রাত ৭টায়। কাজেই জাপানে গেলে খরগোশ দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি। খরগোশের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি দ্বীপের সাগর সৈকতগুলোতেও চমৎকার সময় কাটবে।

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, জাপানচিপো.কম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত