ভেলায় চেপে ৪ হাজার ৩০০ মাইলের ভ্রমণ শেষ করেন থর হেয়ারডাল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২: ০২
Thumbnail image

ভেলায় চেপে সাগর পাড়ি দেওয়ার কথা চিন্তা করলেই নিশ্চয় আপনার রোম দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু নরওয়ের নৃবিজ্ঞানী থর হেয়ারডাল ও তাঁর পাঁচ সঙ্গী সাগরের ৪ হাজার ৩০০ মাইল পাড়ি দিয়েছেন একটি কাঠ-বাঁশের তৈরি ভেলায় চেপে। ইতিহাসের এই দিনে, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ৭ আগস্ট তাঁদের ১০১ দিনের এই ভ্রমণ সমাপ্ত হয়। 

থর হেয়ারডাল ও তাঁর সঙ্গীদের যাত্রা শুরু হয় পেরু থেকে, আর শেষ হয় তাহিতির কাছে তুয়ামতু দ্বীপপুঞ্জের রারোয়া থেকে। তাঁদের সেই বিখ্যাত ভেলার নাম দিয়েছিলেন কন-টিকি। 

১৯৫৫ সালে থর হেয়ারডাল। ছবি: সংগৃহীতপ্রাগৈতিহাসিক দক্ষিণ আমেরিকানরা সমুদ্র পেরিয়ে পলিনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে উপনিবেশ করেছিলেন, এটি প্রমাণ করার জন্যই ছিল হেয়ারডালের ঐতিহাসিক এই যাত্রা। 

২৮ এপ্রিল, ১৯৪৭। ৪৫ ফুট লম্বা ভেলা কন-টিকিতে চেপে হেয়ারডাল ও তাঁর পাঁচ সঙ্গী রওনা দেন পেরুর কালাও থেকে। কন-টিকির নামকরণ করা হয়েছিল এক পৌরাণিক শ্বেতাঙ্গ সর্দারের নামে। স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি ভেলাটি দক্ষিণ আমেরিকান আদিবাসীদের পুরোনো দিনের ভেলাগুলোর নকশা অনুসরণ করেই বানানো হয়। 

১৯১৪ সালের ৬ অক্টোবর নরওয়ের লাকভিকে জন্ম হেয়ারডালের। তিনি বিশ্বাস করতেন পলিনেশিয়ায় প্রথম বসতি স্থাপনকারীরা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এসেছেন, যা ওই সময়ের এ বিষয়ে যাঁরা পণ্ডিত ছিলেন তাঁদের তত্ত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। তাঁদের মত ছিল, এই বসতি স্থাপনকারীরা এসেছিলেন এশিয়া থেকে। 

কন-টিকি জাদুঘরে নলখাগড়ার নৌকা রা-২। ছবি: সংগৃহীতএমনকি থর হেয়ারডালের সফল অভিযানের পরও নৃবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকেরা তাঁর বিশ্বাসের সঙ্গে একমত হননি। তবে হেয়ারডালের রোমাঞ্চকর ভ্রমণ সাধারণ মানুষকে রীতিমতো মোহিত করে ফেলে। ভেলায় চেপে সাগর অভিযানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে হেয়ারডালের লেখা বইটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। অন্তত ৬৫টি ভাষায় এটি অনূদিত হয়। হেয়ারডাল তাঁর ভ্রমণ নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও বানান, যেটি ১৯৫১ সালে একাডেমিক অ্যাওয়ার্ড জেতে। 

হেয়ারডাল পলিনেশিয়াতে প্রথম অভিযানে যান, ১৯৩৭ সালে। তিনি এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী সেখানকার মাকুয়েসাস দ্বীপপুঞ্জের ফাতু হিভায় এক বছর বসবাস করেন। এ সময় সেখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। 

২০০০ সালে থর হেয়ারডাল। ছবি: সংগৃহীতএ অভিজ্ঞতাই তাঁর মনে এই বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে মানুষ আদিম জাহাজে চড়ে সমুদ্রের স্রোতে ভেসে এখানকার দ্বীপগুলোতে এসেছিল। কন-টিকি অভিযানের পর হেয়ারডাল গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, ইস্টার দ্বীপ ও পেরুর মতো জায়গায় প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান পরিচালনা করেন। সাগরপথে ভ্রমণ প্রাচীন মানুষের অভিবাসনে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল, সে সম্পর্কে তাঁর তত্ত্বগুলো পরীক্ষা করাই ছিল উদ্দেশ্য। 

১৯৭০ সালে মরক্কো থেকে রা-২ নামের নলখাগড়ার নৌকায় চেপে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে বার্বাডোজে পৌঁছান থর হেয়ারডাল। প্রাচীন মিসরীয়দের সূর্যদেবতা রা। হেয়ারডালের উদ্দেশ্য ছিল কলম্বাস-পূর্ববর্তী আমেরিকানদের সঙ্গে মিসরীয়দের একটি সংযোগ খুঁজে বের করা। 

১৯৭৭ সালে ইরাকে তৈরি নলখাগড়ার একটি জাহাজে চেপে ভারত মহাসাগরে ভ্রমণ করেন। মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু উপত্যকা ও মিসরের প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে সম্পর্ক আছে কি না, খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন তিনি। 

যদিও হেয়ারডালের কাজ বেশির ভাগ পণ্ডিত গ্রহণ করেননি, নরওয়েসহ গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন তিনি। নিজের জন্মভূমিতে ‘নরওয়েজিয়ান অব দ্য সেঞ্চুরি’ নির্বাচিত হন। ২০০২ সালের ১৮ এপ্রিল ৮৭ বছর বয়সে ইতালিতে মারা যান তিনি। ১৯৪৭ সালের সেই বিখ্যাত অভিযানের ভেলাটি নরওয়ের অসলোর কন-টিকি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। 

সূত্র: হিস্ট্রি ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত