জাহাঙ্গীর আলম
এয়ার কন্ডিশনার বা এসি একটি প্রায় অনন্য খরুচে যন্ত্র। এসির একটি ছোট ইউনিট একটি ঘর শীতল করতে পারে, অথচ এটিই গড়ে চারটি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। আর যখন বাড়ি শীতল রাখতে একটি কেন্দ্রীয় ইউনিট ব্যবহার করা হয় তখন ১৫টির বেশি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ একাই খরচ করে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে তখন একটি ঘর ঠান্ডা রাখার মতো এসির ইউনিট ছিল ১০০ কোটির বেশি। সে হিসাবে পৃথিবীতে প্রতি সাতজনের বিপরীতে প্রায় একটি এসি। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের মধ্যেও এসির শীতলতা কল্পনা করতে পারেন না।
এ নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ছোট ইউনিটের এসি থাকবে ৪৫০ কোটির বেশি। তার মানে বর্তমানের মোবাইল ফোনের মতো সর্বব্যাপী ভোক্তাপণ্য হয়ে উঠবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের এই বিশ্বব্যাপী আধিপত্য কিন্তু অনিবার্য ছিল না। এই মাত্র ১৯৯০ সালেও বিশ্বে মাত্র ৪০ কোটি এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট ছিল, যার আবার বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। মূলত শিল্পে ব্যবহারের জন্য নির্মিত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র শেষ পর্যন্ত মানুষের অপরিহার্য, আধুনিকতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। এরপরই এয়ার কন্ডিশনার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
তবে মানতে হবে যে, সমুদ্রে সংযোগ খাল খনন বা অটোমোবাইলের মতো শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এমন একটি প্রযুক্তি যা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। স্বাধীন সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ এই যন্ত্রকে ‘ইতিহাসের একটি বাঁকবদলকারী উদ্ভাবন’ বলে অভিহিত করেছেন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের দ্রুত আধুনিকায়নে এটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৯৮ সালে আমেরিকান শিক্ষাবিদ রিচার্ড নাথান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, ‘নাগরিক অধিকার বিপ্লব’-এর সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গত তিন দশকে আমেরিকার জনসংখ্যা এবং রাজনীতি পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় অনুঘটক ছিল। এটি ব্যাপক আবাসিক উন্নয়নকে সম্ভব করে তুলেছে। বিশেষ করে গরম এবং খুব রক্ষণশীল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পরিবর্তনের জন্য এর অবদান অনস্বীকার্য।
অথচ মাত্র এক শতক আগেও খুব কম মানুষই এমন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন। যদিও উদ্ভাবনের প্রথম ৫০ বছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মূলত কারখানা এবং মুষ্টিমেয় পাবলিক স্পেসে সীমাবদ্ধ ছিল।
এসির প্রাথমিক উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেওয়া হয় উইলিস ক্যারিয়ারকে। তিনি একজন আমেরিকান প্রকৌশলী। একটি হিটিং এবং ভেন্টিলেশন কোম্পানি তাঁকে ১৯০২ সালে ব্রুকলিনের একটি মুদ্রণ কারখানায় আর্দ্রতা কমানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। আমাদের ধারণা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের উদ্দেশ্য হলো তাপমাত্রা কমানো, কিন্তু তখনকার প্রকৌশলীরা শুধু তাপমাত্রা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। তাঁরা শিল্প উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে স্থিতিশীল সম্ভাব্য পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যেমন, একটি মুদ্রণ কারখানায় বেশি আর্দ্রতা থাকলে কাগজের শিট কুঁচকে যেতে পারে, এতে কালি ঝাপসা বা লেপটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ক্যারিয়ার বুঝতে পেরেছিলেন যে কারখানার বাতাস থেকে তাপ অপসারণ করলে আর্দ্রতা হ্রাস পাবে। তাই তিনি একটি জ্যাক-আপ ফ্রিজ তৈরি করার জন্য নতুন রেফ্রিজারেশন শিল্প থেকে প্রযুক্তি ধার করেন। এরপরে এখনকার মতো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটগুলো যেমন গরম বাতাস টেনে নেয় এবং একটি শীতল পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়, ফলে ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাসে ঘর ভরে যায়—এমন একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন ক্যারিয়ার।
উদ্ভাবনটি বহু শিল্পের বেশ উপকারে আসে। টেক্সটাইল, গোলাবারুদ এবং ওষুধ কারখানাগুলো এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের প্রথম দিকের গ্রাহক হয়। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসর নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এসি লাগানো হয় ১৯২৮ সালে। পরের বছর এসি পায় হোয়াইট হাউস এবং এরপর সিনেট।
১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন এসি মানুষের বাসাবাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন এয়ার কন্ডিশনার সত্যি সত্যিই আমেরিকা জয় করে ফেলেছে। তবে ইতিহাসবিদ গেইল কুপারের মতে, জনসাধারণকে এটা বোঝানোর জন্য এসি শিল্পকে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে যে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কোনো বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজন।
শুরুর দিনগুলোর কিছু বিবরণও তুলে ধরেছেন কুপার। তিনি উল্লেখ করেছেন, তখনকার ম্যাগাজিনগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বাজারে ফ্লপ করেছে বর্ণনা করেছে। ফরচুন ম্যাগাজিন তো এটিকে ‘১৯৩০-এর দশকের একটি প্রধান জনহতাশা' বলে অভিহিত করেছে।
১৯৩৮ সাল নাগাদ আমেরিকার প্রতি ৪০০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র একটিতে এসি ছিল। আর আজ এটি ১০-এর মধ্যে নয়টির কাছাকাছি চলে এসেছে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের এই উত্থান কিন্তু ভোক্তা চাহিদার আকস্মিক বিস্ফোরণের ফলে ঘটেনি। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আবাসন শিল্পের উল্লম্ফন এসি শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়। ১৯৪৬ এবং ১৯৬৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ কোটি ১০ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়। সেই ঘরগুলোতে এসি রাখা একটা আভিজাত্যের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। স্থপতি এবং নির্মাণ সংস্থাগুলোকে তখন জলবায়ু নিয়ে অতো ভাবতে হয়নি। তারা ডেলাওয়্যারের মতো নিউ মেক্সিকোতেও একই শৈলীর বাড়ি বিক্রি করতে পারছিল।
তখনকার প্রচলিত মানসিকতা ছিল, গরম আবহাওয়া, সস্তা নির্মাণ সামগ্রী, বাজে নকশা বা দুর্বল নগর পরিকল্পনার কারণে সৃষ্ট যে কোনও সমস্যাই উতরে যাওয়া যাবে এক এসি দিয়ে! আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস ১৯৭৩ সালে লিখেছিল, বেশি এসি ব্যবহার করেই সব দুর্বলতা ঢাকা যাবে এমন একটা মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। ইতিহাসবিদ কুপার যেমন লিখেছেন, ‘স্থপতি, নির্মাণকারী এবং ব্যাংকাররা প্রথমে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। সাধারণ ভোক্তাদের ব্যাপারটা তখন এমন ছিল যে, তারা মুখ ফুটে চাইলেই হাতের নাগালে চলে আসবে!’
এসির এই উত্থানের সঙ্গে সমানভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের গ্রিডে নতুন নতুন বাসাবাড়ি যুক্ত করে আয় বাড়াচ্ছিল। তবে বিশ শতকের গোড়ার দিকে তারা এই নতুন গ্রাহকদের আরও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার উপায় খুঁজছিল। এই প্রক্রিয়াটি তখন ‘লোড বিল্ডিং’ নামে পরিচিত ছিল। কারণ বিদ্যুতের খরচ তখন কম ছিল। তাই আয় বাড়াতে বেশি ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল কোম্পানিগুলো।
ভার্জিনিয়া টেকের প্রযুক্তির ইতিহাসবিদ রিচার্ড হারশ বলেন, গ্রাহকেরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং নির্মাণ চালিয়ে যাওয়া যাবে—এই ছিল কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য।
কোম্পানিগুলো দেখল, গ্রিডে উল্লেখযোগ্য লোড বাড়ায় এসি। ১৯৩৫ সালের প্রথম দিকে, কমনওয়েলথ এডিসন, আধুনিক কন এডিসনের পূর্বসূরী, বছর শেষের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এয়ার কন্ডিশনারের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বছরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এতে।
একই বছর শিল্প বাণিজ্য পত্রিকা ইলেকট্রিক লাইট অ্যান্ড পাওয়ারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বড় শহরগুলোর সরবরাহ কোম্পানিগুলো এখন শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা নিজেদের লাভের জন্যই এটা করছে। সমস্ত বিদ্যুৎ কোম্পানিকে এক্ষেত্রে খুব সক্রিয় হওয়া উচিত।
১৯৫০-এর দশকে, সেই কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ এসে যায়। বৈদ্যুতিক ইউটিলিটিগুলো এয়ার কন্ডিশনারের পক্ষে প্রচার-প্রচারণার জন্য প্রিন্ট, রেডিও এবং সিনেমায় বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। সেই সঙ্গে এসি উৎপাদনকারী এবং বিক্রয় ও বিক্রয় পরবর্তী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি অর্থায়ন এবং ছাড়ের অফার দিতে শুরু করে। ১৯৫৭ সালে কমনওয়েলথ এডিসন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, প্রথমবারের মতো, সর্বোচ্চ বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছে গ্রীষ্মকালে। মানুষ যখন এসি চালু রেখেছে তখনই সবচেয়ে বেশি লোড পড়েছে। অথচ আগে শীতকালে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতো মানুষ, কারণ তারা রুম হিটার ব্যবহার করতো। ১৯৭০ সালের মধ্যে, ৩৫ শতাংশ আমেরিকান বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঢুকে পড়ে। যা তিন দশক আগের সংখ্যার ২০০ গুণেরও বেশি!
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। কাচঘেরা আকাশচুম্বি ভবন বা অল-গ্লাস স্কাইস্ক্র্যাপার, এমন একটি বিল্ডিং শৈলী যেটির দুর্বল প্রতিফলন বৈশিষ্ট্য এবং বায়ুচলাচলের যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে এসি অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সেন্ট্রাল এসি ও ছোট ইউনিটের জন্য ভবনের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎ এসির জন্য সংরক্ষিত রাখতে হয়। এই ধরনের ভবনই যুক্তরাষ্ট্রে চল হয়ে ওঠে।
১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক ভবনে প্রতি বর্গফুট হিসাবে বিদ্যুতের ব্যবহার দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ে। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৯৭৪ সালে। তখনকার সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম এসি ইউনিট ছিল সেখানে। ঋতুভেদে শীতল ও গরম করার জন্য নয়টি বিশাল ইঞ্জিন এবং ২৭০ কিলোমিটারেরও বেশি পাইপিং ব্যবস্থা ছিল। সেই সময়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই এসি ব্যবস্থা প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার জনসংখ্যার শহর শেনেক্টাডির সমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
যুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদের ঢেউয়ে নিরাপদে চড়ে বসে এসি শিল্প, নির্মাণ কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো। এই কোম্পানিগুলোর প্রচার প্রচারণার কারণেই এসি আমেরিকান জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে ওঠে। ‘আমাদের বাচ্চারা এসি সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে’, ১৯৬৮ সালে একটি এসি কোম্পানির নির্বাহী টাইম ম্যাগাজিনকে এমন কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এসি নেই এমন বাড়িতে বসবাস করার কথা নিশ্চয়ই ভাববেন না।’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নিজের অজান্তেই এসি ভালোবাসতে শুরু করে। দ্রুত এসির ব্যবহার বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালের মধ্যে ৮৭ শতাংশ মার্কিন পরিবারে পৌঁছে যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র।
যুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে নতুন নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হতে থাকে। তখন নীতি নির্ধারকদের বিশ্বাস ছিল, এসব অবকাঠামো প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করবে কিন্তু এতে ভবিষ্যতে গুরুতর কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। ১৯৯২ সালে এনার্জি অ্যান্ড বিল্ডিংস সাময়িকীতে ব্রিটিশ রক্ষণশীল একাডেমিক গুইন প্রিন্সের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি যুক্তি দেন, এসির প্রতি এই আমেরিকান আসক্তি তাদের গভীর অবক্ষয়েরই প্রতীক! প্রিন্স আমেরিকার এই প্রবণতার বিষয়ে বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা ঠান্ডার মধ্যে থাকব, আমাদের প্লেট উপচে পড়বে এবং গ্যাস হবে প্রতি গ্যালন ১ ডলার, আমেন!’
যে সময়ে এয়ার কন্ডিশনার আমেরিকার শহরগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছিল, ওই সময় কিন্তু বাইরের বিশ্বে এর প্রভাব তেমন পড়েনি। অবশ্য জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর শুরুর দিকের গ্রাহক ছিল। যাইহোক, এয়ার কন্ডিশনার শেষ পর্যন্ত বিশ্বের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এসির অগ্রযাত্রা যুদ্ধোত্তর নির্মাণ খাতের উল্লম্ফন এবং মানুষের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে এই তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ বিশ্বায়নের গতিপথ অনুসরণ করছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো নির্মাণ এবং জীবনযাপন পদ্ধতিতে আরও বেশি আমেরিকান হয়ে উঠতে চেয়েছে। তারাও ব্যাপকভাবে এসির ব্যবহার শুরু করেছে।
১৯৯০-এর দশকে, এশিয়ার অনেক দেশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত হয়, যা অভূতপূর্ব নগর নির্মাণের সূচনা করে। গত তিন দশকে, ভারতের প্রায় ২০ কোটি মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে গেছে; চীনে এই সংখ্যা ৫০ কোটিরও বেশি। নয়াদিল্লি থেকে সাংহাই পর্যন্ত ভারী এসি যুক্ত অফিস ভবন, হোটেল এবং শপিং মল গড়ে ওঠে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। এই ভবনগুলোকে নিউইয়র্ক বা লন্ডনের থেকে আলাদা করা যায় না। তাছাড়া প্রায়শই একই নির্মাতা এবং স্থপতিরাই থাকেন এসব ভবন নির্মাণের পেছনে।
অশোক লাল নামে একজন ভারতীয় স্থপতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা বলেন, উঁচু উঁচু ভবনগুলোর জন্য বাইরের বিশ্ব থেকে যখন টাকা আসতো তখন প্রায়শই একজন আমেরিকান বা ইউরোপীয় ডিজাইনার বা পরামর্শক সংস্থাও সঙ্গে চলে আসতো। ফলে ভবনের সঙ্গে প্যাকেজ হিসেবে আসে এসি! এখানকার লোকেরা ভেবেছিল এর মানেই অগ্রগতি!
এয়ার কন্ডিশনার বা এসি একটি প্রায় অনন্য খরুচে যন্ত্র। এসির একটি ছোট ইউনিট একটি ঘর শীতল করতে পারে, অথচ এটিই গড়ে চারটি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। আর যখন বাড়ি শীতল রাখতে একটি কেন্দ্রীয় ইউনিট ব্যবহার করা হয় তখন ১৫টির বেশি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ একাই খরচ করে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে তখন একটি ঘর ঠান্ডা রাখার মতো এসির ইউনিট ছিল ১০০ কোটির বেশি। সে হিসাবে পৃথিবীতে প্রতি সাতজনের বিপরীতে প্রায় একটি এসি। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের মধ্যেও এসির শীতলতা কল্পনা করতে পারেন না।
এ নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ছোট ইউনিটের এসি থাকবে ৪৫০ কোটির বেশি। তার মানে বর্তমানের মোবাইল ফোনের মতো সর্বব্যাপী ভোক্তাপণ্য হয়ে উঠবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের এই বিশ্বব্যাপী আধিপত্য কিন্তু অনিবার্য ছিল না। এই মাত্র ১৯৯০ সালেও বিশ্বে মাত্র ৪০ কোটি এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট ছিল, যার আবার বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। মূলত শিল্পে ব্যবহারের জন্য নির্মিত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র শেষ পর্যন্ত মানুষের অপরিহার্য, আধুনিকতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। এরপরই এয়ার কন্ডিশনার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
তবে মানতে হবে যে, সমুদ্রে সংযোগ খাল খনন বা অটোমোবাইলের মতো শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এমন একটি প্রযুক্তি যা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। স্বাধীন সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ এই যন্ত্রকে ‘ইতিহাসের একটি বাঁকবদলকারী উদ্ভাবন’ বলে অভিহিত করেছেন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের দ্রুত আধুনিকায়নে এটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৯৮ সালে আমেরিকান শিক্ষাবিদ রিচার্ড নাথান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, ‘নাগরিক অধিকার বিপ্লব’-এর সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গত তিন দশকে আমেরিকার জনসংখ্যা এবং রাজনীতি পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় অনুঘটক ছিল। এটি ব্যাপক আবাসিক উন্নয়নকে সম্ভব করে তুলেছে। বিশেষ করে গরম এবং খুব রক্ষণশীল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পরিবর্তনের জন্য এর অবদান অনস্বীকার্য।
অথচ মাত্র এক শতক আগেও খুব কম মানুষই এমন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন। যদিও উদ্ভাবনের প্রথম ৫০ বছর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মূলত কারখানা এবং মুষ্টিমেয় পাবলিক স্পেসে সীমাবদ্ধ ছিল।
এসির প্রাথমিক উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেওয়া হয় উইলিস ক্যারিয়ারকে। তিনি একজন আমেরিকান প্রকৌশলী। একটি হিটিং এবং ভেন্টিলেশন কোম্পানি তাঁকে ১৯০২ সালে ব্রুকলিনের একটি মুদ্রণ কারখানায় আর্দ্রতা কমানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। আমাদের ধারণা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের উদ্দেশ্য হলো তাপমাত্রা কমানো, কিন্তু তখনকার প্রকৌশলীরা শুধু তাপমাত্রা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। তাঁরা শিল্প উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে স্থিতিশীল সম্ভাব্য পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যেমন, একটি মুদ্রণ কারখানায় বেশি আর্দ্রতা থাকলে কাগজের শিট কুঁচকে যেতে পারে, এতে কালি ঝাপসা বা লেপটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ক্যারিয়ার বুঝতে পেরেছিলেন যে কারখানার বাতাস থেকে তাপ অপসারণ করলে আর্দ্রতা হ্রাস পাবে। তাই তিনি একটি জ্যাক-আপ ফ্রিজ তৈরি করার জন্য নতুন রেফ্রিজারেশন শিল্প থেকে প্রযুক্তি ধার করেন। এরপরে এখনকার মতো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটগুলো যেমন গরম বাতাস টেনে নেয় এবং একটি শীতল পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেয়, ফলে ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাসে ঘর ভরে যায়—এমন একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন ক্যারিয়ার।
উদ্ভাবনটি বহু শিল্পের বেশ উপকারে আসে। টেক্সটাইল, গোলাবারুদ এবং ওষুধ কারখানাগুলো এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের প্রথম দিকের গ্রাহক হয়। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসর নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এসি লাগানো হয় ১৯২৮ সালে। পরের বছর এসি পায় হোয়াইট হাউস এবং এরপর সিনেট।
১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন এসি মানুষের বাসাবাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন এয়ার কন্ডিশনার সত্যি সত্যিই আমেরিকা জয় করে ফেলেছে। তবে ইতিহাসবিদ গেইল কুপারের মতে, জনসাধারণকে এটা বোঝানোর জন্য এসি শিল্পকে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে যে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কোনো বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজন।
শুরুর দিনগুলোর কিছু বিবরণও তুলে ধরেছেন কুপার। তিনি উল্লেখ করেছেন, তখনকার ম্যাগাজিনগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বাজারে ফ্লপ করেছে বর্ণনা করেছে। ফরচুন ম্যাগাজিন তো এটিকে ‘১৯৩০-এর দশকের একটি প্রধান জনহতাশা' বলে অভিহিত করেছে।
১৯৩৮ সাল নাগাদ আমেরিকার প্রতি ৪০০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র একটিতে এসি ছিল। আর আজ এটি ১০-এর মধ্যে নয়টির কাছাকাছি চলে এসেছে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের এই উত্থান কিন্তু ভোক্তা চাহিদার আকস্মিক বিস্ফোরণের ফলে ঘটেনি। বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আবাসন শিল্পের উল্লম্ফন এসি শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়। ১৯৪৬ এবং ১৯৬৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ কোটি ১০ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়। সেই ঘরগুলোতে এসি রাখা একটা আভিজাত্যের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। স্থপতি এবং নির্মাণ সংস্থাগুলোকে তখন জলবায়ু নিয়ে অতো ভাবতে হয়নি। তারা ডেলাওয়্যারের মতো নিউ মেক্সিকোতেও একই শৈলীর বাড়ি বিক্রি করতে পারছিল।
তখনকার প্রচলিত মানসিকতা ছিল, গরম আবহাওয়া, সস্তা নির্মাণ সামগ্রী, বাজে নকশা বা দুর্বল নগর পরিকল্পনার কারণে সৃষ্ট যে কোনও সমস্যাই উতরে যাওয়া যাবে এক এসি দিয়ে! আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস ১৯৭৩ সালে লিখেছিল, বেশি এসি ব্যবহার করেই সব দুর্বলতা ঢাকা যাবে এমন একটা মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। ইতিহাসবিদ কুপার যেমন লিখেছেন, ‘স্থপতি, নির্মাণকারী এবং ব্যাংকাররা প্রথমে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। সাধারণ ভোক্তাদের ব্যাপারটা তখন এমন ছিল যে, তারা মুখ ফুটে চাইলেই হাতের নাগালে চলে আসবে!’
এসির এই উত্থানের সঙ্গে সমানভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের গ্রিডে নতুন নতুন বাসাবাড়ি যুক্ত করে আয় বাড়াচ্ছিল। তবে বিশ শতকের গোড়ার দিকে তারা এই নতুন গ্রাহকদের আরও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার উপায় খুঁজছিল। এই প্রক্রিয়াটি তখন ‘লোড বিল্ডিং’ নামে পরিচিত ছিল। কারণ বিদ্যুতের খরচ তখন কম ছিল। তাই আয় বাড়াতে বেশি ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল কোম্পানিগুলো।
ভার্জিনিয়া টেকের প্রযুক্তির ইতিহাসবিদ রিচার্ড হারশ বলেন, গ্রাহকেরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং নির্মাণ চালিয়ে যাওয়া যাবে—এই ছিল কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য।
কোম্পানিগুলো দেখল, গ্রিডে উল্লেখযোগ্য লোড বাড়ায় এসি। ১৯৩৫ সালের প্রথম দিকে, কমনওয়েলথ এডিসন, আধুনিক কন এডিসনের পূর্বসূরী, বছর শেষের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এয়ার কন্ডিশনারের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বছরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এতে।
একই বছর শিল্প বাণিজ্য পত্রিকা ইলেকট্রিক লাইট অ্যান্ড পাওয়ারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বড় শহরগুলোর সরবরাহ কোম্পানিগুলো এখন শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা নিজেদের লাভের জন্যই এটা করছে। সমস্ত বিদ্যুৎ কোম্পানিকে এক্ষেত্রে খুব সক্রিয় হওয়া উচিত।
১৯৫০-এর দশকে, সেই কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ এসে যায়। বৈদ্যুতিক ইউটিলিটিগুলো এয়ার কন্ডিশনারের পক্ষে প্রচার-প্রচারণার জন্য প্রিন্ট, রেডিও এবং সিনেমায় বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। সেই সঙ্গে এসি উৎপাদনকারী এবং বিক্রয় ও বিক্রয় পরবর্তী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি অর্থায়ন এবং ছাড়ের অফার দিতে শুরু করে। ১৯৫৭ সালে কমনওয়েলথ এডিসন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, প্রথমবারের মতো, সর্বোচ্চ বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছে গ্রীষ্মকালে। মানুষ যখন এসি চালু রেখেছে তখনই সবচেয়ে বেশি লোড পড়েছে। অথচ আগে শীতকালে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতো মানুষ, কারণ তারা রুম হিটার ব্যবহার করতো। ১৯৭০ সালের মধ্যে, ৩৫ শতাংশ আমেরিকান বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঢুকে পড়ে। যা তিন দশক আগের সংখ্যার ২০০ গুণেরও বেশি!
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। কাচঘেরা আকাশচুম্বি ভবন বা অল-গ্লাস স্কাইস্ক্র্যাপার, এমন একটি বিল্ডিং শৈলী যেটির দুর্বল প্রতিফলন বৈশিষ্ট্য এবং বায়ুচলাচলের যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে এসি অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সেন্ট্রাল এসি ও ছোট ইউনিটের জন্য ভবনের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎ এসির জন্য সংরক্ষিত রাখতে হয়। এই ধরনের ভবনই যুক্তরাষ্ট্রে চল হয়ে ওঠে।
১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক ভবনে প্রতি বর্গফুট হিসাবে বিদ্যুতের ব্যবহার দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ে। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৯৭৪ সালে। তখনকার সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম এসি ইউনিট ছিল সেখানে। ঋতুভেদে শীতল ও গরম করার জন্য নয়টি বিশাল ইঞ্জিন এবং ২৭০ কিলোমিটারেরও বেশি পাইপিং ব্যবস্থা ছিল। সেই সময়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই এসি ব্যবস্থা প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার জনসংখ্যার শহর শেনেক্টাডির সমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
যুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদের ঢেউয়ে নিরাপদে চড়ে বসে এসি শিল্প, নির্মাণ কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো। এই কোম্পানিগুলোর প্রচার প্রচারণার কারণেই এসি আমেরিকান জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে ওঠে। ‘আমাদের বাচ্চারা এসি সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে’, ১৯৬৮ সালে একটি এসি কোম্পানির নির্বাহী টাইম ম্যাগাজিনকে এমন কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এসি নেই এমন বাড়িতে বসবাস করার কথা নিশ্চয়ই ভাববেন না।’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নিজের অজান্তেই এসি ভালোবাসতে শুরু করে। দ্রুত এসির ব্যবহার বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালের মধ্যে ৮৭ শতাংশ মার্কিন পরিবারে পৌঁছে যায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র।
যুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে নতুন নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হতে থাকে। তখন নীতি নির্ধারকদের বিশ্বাস ছিল, এসব অবকাঠামো প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করবে কিন্তু এতে ভবিষ্যতে গুরুতর কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। ১৯৯২ সালে এনার্জি অ্যান্ড বিল্ডিংস সাময়িকীতে ব্রিটিশ রক্ষণশীল একাডেমিক গুইন প্রিন্সের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি যুক্তি দেন, এসির প্রতি এই আমেরিকান আসক্তি তাদের গভীর অবক্ষয়েরই প্রতীক! প্রিন্স আমেরিকার এই প্রবণতার বিষয়ে বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা ঠান্ডার মধ্যে থাকব, আমাদের প্লেট উপচে পড়বে এবং গ্যাস হবে প্রতি গ্যালন ১ ডলার, আমেন!’
যে সময়ে এয়ার কন্ডিশনার আমেরিকার শহরগুলোকে নতুন আকার দিচ্ছিল, ওই সময় কিন্তু বাইরের বিশ্বে এর প্রভাব তেমন পড়েনি। অবশ্য জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর শুরুর দিকের গ্রাহক ছিল। যাইহোক, এয়ার কন্ডিশনার শেষ পর্যন্ত বিশ্বের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এসির অগ্রযাত্রা যুদ্ধোত্তর নির্মাণ খাতের উল্লম্ফন এবং মানুষের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে এই তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ বিশ্বায়নের গতিপথ অনুসরণ করছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো নির্মাণ এবং জীবনযাপন পদ্ধতিতে আরও বেশি আমেরিকান হয়ে উঠতে চেয়েছে। তারাও ব্যাপকভাবে এসির ব্যবহার শুরু করেছে।
১৯৯০-এর দশকে, এশিয়ার অনেক দেশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত হয়, যা অভূতপূর্ব নগর নির্মাণের সূচনা করে। গত তিন দশকে, ভারতের প্রায় ২০ কোটি মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে গেছে; চীনে এই সংখ্যা ৫০ কোটিরও বেশি। নয়াদিল্লি থেকে সাংহাই পর্যন্ত ভারী এসি যুক্ত অফিস ভবন, হোটেল এবং শপিং মল গড়ে ওঠে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। এই ভবনগুলোকে নিউইয়র্ক বা লন্ডনের থেকে আলাদা করা যায় না। তাছাড়া প্রায়শই একই নির্মাতা এবং স্থপতিরাই থাকেন এসব ভবন নির্মাণের পেছনে।
অশোক লাল নামে একজন ভারতীয় স্থপতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা বলেন, উঁচু উঁচু ভবনগুলোর জন্য বাইরের বিশ্ব থেকে যখন টাকা আসতো তখন প্রায়শই একজন আমেরিকান বা ইউরোপীয় ডিজাইনার বা পরামর্শক সংস্থাও সঙ্গে চলে আসতো। ফলে ভবনের সঙ্গে প্যাকেজ হিসেবে আসে এসি! এখানকার লোকেরা ভেবেছিল এর মানেই অগ্রগতি!
বিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
১ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
১ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই আলোচনায় এখন ট্রাম্প। তবে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইতালির সার্দানিয়া দ্বীপের একটি গ্রামে একেবারেই ভিন্ন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হিসেবে।
২ দিন আগেটাইটানিকের ৭০০-র বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে উদ্ধার করেছিল একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপহার দেওয়া একটি সোনার ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
৩ দিন আগে