ইশতিয়াক হাসান
রূপকথার সেই রাপানজেলের কথা নিশ্চয় মনে আছে? অনেক লম্বা ছিল যার চুল। চীনের এক গ্রামে গেলে আপনাদের মনে হতে পারে রূপকথার সেই রাপানজেল, আরও পরিষ্কারভাবে বললে রাপানজেলেরা বাস্তবে এসে হাজির হয়েছে। ওই গ্রামের সব নারীর চুলই যে রাপানজেলের চুলের মতোই লম্বা। রেড ওয়াও গোত্রের এই নারীরা সারা জীবনে চুল কাটেন একবার।
দক্ষিণ চীনের কোনসি শুয়াং অঞ্চলের হুইংলা গ্রামের নারীদের মর্যাদার প্রতীক তাঁদের দীর্ঘ চুল। রেড ইয়াও গোত্রের এই নারীদের চুল সাধারণত ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। অবশ্য এর জন্য চুলের নানা ধরনের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এগুলোর একটি হলো—গ্রামের পাশের জিনসা নদীতে গিয়ে গাঁজানো ভাতের মাড় দিয়ে মাথার ত্বক ও চুল ধোয়া।
চীনের কুইলি শহর থেকে গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েক লাগে জিনসা নদীর তীরে অবস্থিত গ্রামটিতে পৌঁছাতে। জনসংখ্যা প্রায় ৬০০। চারপাশের প্রকৃতি আশ্চর্য সুন্দর। তবে হুইংলা কিংবা হুইলাং ইয়াও গ্রামটি বিখ্যাত ওই একটি কারণেই, সেটি এখানকার নারীদের লম্বা চুল রাখার ঐতিহ্য।
রেড ইয়াও নারীরা ঐতিহ্যগতভাবে লাল পোশাক পড়েন। হাজার বছর ধরে এভাবে চুল লম্বা করার চল তাঁদের মধ্যে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, দীর্ঘ জীবন ও সৌভাগ্য বয়ে আনে লম্বা চুল।
এই গ্রাম এখন চীনের অন্যান্য জায়গায় পরিচিতি পেয়ে গেছে ‘লং হেয়ার ভিলেজ’ বা ‘লম্বা চুলের গ্রাম’ হিসেবে। এখানকার নারীদের ঘন কালো চুল অন্তত পাঁচ ফুট লম্বা হয়। এমন দৈর্ঘ্যের চুলের ওজন হয় দুই পাউন্ডের মতো। তবে ছয় ফুটের মতো লম্বা চুলও দেখবেন কখনো কখনো। এমনকি সাত ফুট দীর্ঘ চুলের রেকর্ডও আছে, তবে এটা ঘটে একেবারেই কালেভদ্রে।
এখানকার নারীরা জীবনে একবারই তাঁদের চুল কাটেন। সাধারণত ১৮তম জন্মদিনে বা এর আশপাশের সময়ে। বলা হয় রেড ইয়াও নারীদের চুল কাটা মানে তাঁরা বিয়ের জন্য প্রস্তুত এটা জানান দেওয়া। তবে এই চুল নষ্ট করা হয় না, অন্তত একটা সময় পর্যন্ত। মেয়েটির বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তাঁর পরিবার ওই চুল সংরক্ষণ করে।
সাধারণত প্রতিদিনই নদীর জলে চুল ধুয়ে থাকেন এই নারীরা। তবে নির্দিষ্ট কিছুদিন চুলে বিশেষ উপাদান বা ওই শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। চুলের স্বাস্থ্য ও রং যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য যে প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়, তার মূল উপাদান যে গাঁজানো ভাতের মাড় তা তো আগেই বলেছি। অবশ্য এর সঙ্গে চায়ের লিকার, লেবু বা জাম্বুরাজাতীয় ফলের খোসাসহ বিভিন্ন ভেষজ মিশ্রণও ব্যবহার করা হয়। মাথার তালু থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত চিরুনি দিয়ে মাড়সহ মিশ্রণটি মেশানো হয়।
একজন অবিবাহিত মেয়ে বা নারী সাধারণত কালো একটি কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখেন। কারণ এই চুল তাঁদের কাছে পবিত্র, কেবল পরিবারের সদস্যরাই তা দেখতে পারে। অবশ্য বিয়ের পর চুল ঢেকে রাখার বাধ্যবাধকতা থাকে না আর। মাথার চারপাশে চুল পেঁচিয়ে রাখলে বুঝবেন নারীটি বিবাহিত, তবে তাঁর সন্তান নেই। প্যাঁচানো চুল, সঙ্গে সংরক্ষণ করা কাটা চুলের একটি খোঁপা ইঙ্গিত দেয় ওই বিবাহিত নারীর সন্তান আছে।
একটা সময় পর্যন্ত একজন নারীর চুল কে দেখতে পারবেন আর কে পারবেন না, সেটা ঠিক করা ছিল। মজার ঘটনা, ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত একটা আশ্চর্য নিয়ম নাকি প্রচলিত ছিল, পরিবারের সদস্যদের বাইরে কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীর খোলা চুল দেখে ফেলতেন, তবে তাঁকে তিন বছর ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে থাকতে হতো। কিংবদন্তি আছে, অনেক অনেক বছর আগে অপছন্দের পানিপ্রার্থীদের চুল দিয়ে চাবুকের মতো সপাং করে বাড়ি দিয়ে বিদায় দিতেন নারীরা।
অবশ্য গ্রামে পর্যটক আসতে শুরু করায় চুলের ব্যাপারে কঠোর বিভিন্ন নিয়ম শিথিল হয়ে গেছে। কারণ চীনের নানা প্রান্তের এমনকি ভিনদেশি পর্যটকেরা গ্রামটিতে আসেন ওই চুলের খ্যাতির জন্যই। এখানে পর্যটকদের জন্য আছে মঞ্চও। গ্রামের নারীরা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ওই মঞ্চে ঐতিহ্যবাহী লাল পোশাক পরে দল বেঁধে গান ও নাচে অংশ নেন। এভাবে সব মিলিয়ে নারীদের এই লম্বা চুলের কারণে গ্রামবাসীর বেশ দুপয়সা আয় হচ্ছে পর্যটকদের থেকে।
আর একটি কথা, রেড ইয়াও নারীরাসহ গ্রামের বাসিন্দারা কিন্তু যথেষ্ট অতিথিবৎসল। ভাগ্য ভালো হলে গ্রামটিতে ঘুরতে গেলে হয়তো তাঁরা আপনাকে নিজেদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবে। সেখানে বসে এক কাপ কফি কিংবা চা খেতে খেতে জানতে পারবেন তাঁদের ঐতিহ্যের নানা দিক আর নারীদের এই আশ্চর্য চুল সম্পর্কে বিস্তারিত।
সূত্র: ইনসাইডার ডট কম, মেসি নেসি চিক ডট কম, আউটলুক ইন্ডিয়া ডট কম
রূপকথার সেই রাপানজেলের কথা নিশ্চয় মনে আছে? অনেক লম্বা ছিল যার চুল। চীনের এক গ্রামে গেলে আপনাদের মনে হতে পারে রূপকথার সেই রাপানজেল, আরও পরিষ্কারভাবে বললে রাপানজেলেরা বাস্তবে এসে হাজির হয়েছে। ওই গ্রামের সব নারীর চুলই যে রাপানজেলের চুলের মতোই লম্বা। রেড ওয়াও গোত্রের এই নারীরা সারা জীবনে চুল কাটেন একবার।
দক্ষিণ চীনের কোনসি শুয়াং অঞ্চলের হুইংলা গ্রামের নারীদের মর্যাদার প্রতীক তাঁদের দীর্ঘ চুল। রেড ইয়াও গোত্রের এই নারীদের চুল সাধারণত ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। অবশ্য এর জন্য চুলের নানা ধরনের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এগুলোর একটি হলো—গ্রামের পাশের জিনসা নদীতে গিয়ে গাঁজানো ভাতের মাড় দিয়ে মাথার ত্বক ও চুল ধোয়া।
চীনের কুইলি শহর থেকে গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েক লাগে জিনসা নদীর তীরে অবস্থিত গ্রামটিতে পৌঁছাতে। জনসংখ্যা প্রায় ৬০০। চারপাশের প্রকৃতি আশ্চর্য সুন্দর। তবে হুইংলা কিংবা হুইলাং ইয়াও গ্রামটি বিখ্যাত ওই একটি কারণেই, সেটি এখানকার নারীদের লম্বা চুল রাখার ঐতিহ্য।
রেড ইয়াও নারীরা ঐতিহ্যগতভাবে লাল পোশাক পড়েন। হাজার বছর ধরে এভাবে চুল লম্বা করার চল তাঁদের মধ্যে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, দীর্ঘ জীবন ও সৌভাগ্য বয়ে আনে লম্বা চুল।
এই গ্রাম এখন চীনের অন্যান্য জায়গায় পরিচিতি পেয়ে গেছে ‘লং হেয়ার ভিলেজ’ বা ‘লম্বা চুলের গ্রাম’ হিসেবে। এখানকার নারীদের ঘন কালো চুল অন্তত পাঁচ ফুট লম্বা হয়। এমন দৈর্ঘ্যের চুলের ওজন হয় দুই পাউন্ডের মতো। তবে ছয় ফুটের মতো লম্বা চুলও দেখবেন কখনো কখনো। এমনকি সাত ফুট দীর্ঘ চুলের রেকর্ডও আছে, তবে এটা ঘটে একেবারেই কালেভদ্রে।
এখানকার নারীরা জীবনে একবারই তাঁদের চুল কাটেন। সাধারণত ১৮তম জন্মদিনে বা এর আশপাশের সময়ে। বলা হয় রেড ইয়াও নারীদের চুল কাটা মানে তাঁরা বিয়ের জন্য প্রস্তুত এটা জানান দেওয়া। তবে এই চুল নষ্ট করা হয় না, অন্তত একটা সময় পর্যন্ত। মেয়েটির বিয়ে হওয়া পর্যন্ত তাঁর পরিবার ওই চুল সংরক্ষণ করে।
সাধারণত প্রতিদিনই নদীর জলে চুল ধুয়ে থাকেন এই নারীরা। তবে নির্দিষ্ট কিছুদিন চুলে বিশেষ উপাদান বা ওই শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। চুলের স্বাস্থ্য ও রং যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য যে প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়, তার মূল উপাদান যে গাঁজানো ভাতের মাড় তা তো আগেই বলেছি। অবশ্য এর সঙ্গে চায়ের লিকার, লেবু বা জাম্বুরাজাতীয় ফলের খোসাসহ বিভিন্ন ভেষজ মিশ্রণও ব্যবহার করা হয়। মাথার তালু থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত চিরুনি দিয়ে মাড়সহ মিশ্রণটি মেশানো হয়।
একজন অবিবাহিত মেয়ে বা নারী সাধারণত কালো একটি কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখেন। কারণ এই চুল তাঁদের কাছে পবিত্র, কেবল পরিবারের সদস্যরাই তা দেখতে পারে। অবশ্য বিয়ের পর চুল ঢেকে রাখার বাধ্যবাধকতা থাকে না আর। মাথার চারপাশে চুল পেঁচিয়ে রাখলে বুঝবেন নারীটি বিবাহিত, তবে তাঁর সন্তান নেই। প্যাঁচানো চুল, সঙ্গে সংরক্ষণ করা কাটা চুলের একটি খোঁপা ইঙ্গিত দেয় ওই বিবাহিত নারীর সন্তান আছে।
একটা সময় পর্যন্ত একজন নারীর চুল কে দেখতে পারবেন আর কে পারবেন না, সেটা ঠিক করা ছিল। মজার ঘটনা, ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত একটা আশ্চর্য নিয়ম নাকি প্রচলিত ছিল, পরিবারের সদস্যদের বাইরে কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীর খোলা চুল দেখে ফেলতেন, তবে তাঁকে তিন বছর ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে থাকতে হতো। কিংবদন্তি আছে, অনেক অনেক বছর আগে অপছন্দের পানিপ্রার্থীদের চুল দিয়ে চাবুকের মতো সপাং করে বাড়ি দিয়ে বিদায় দিতেন নারীরা।
অবশ্য গ্রামে পর্যটক আসতে শুরু করায় চুলের ব্যাপারে কঠোর বিভিন্ন নিয়ম শিথিল হয়ে গেছে। কারণ চীনের নানা প্রান্তের এমনকি ভিনদেশি পর্যটকেরা গ্রামটিতে আসেন ওই চুলের খ্যাতির জন্যই। এখানে পর্যটকদের জন্য আছে মঞ্চও। গ্রামের নারীরা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ওই মঞ্চে ঐতিহ্যবাহী লাল পোশাক পরে দল বেঁধে গান ও নাচে অংশ নেন। এভাবে সব মিলিয়ে নারীদের এই লম্বা চুলের কারণে গ্রামবাসীর বেশ দুপয়সা আয় হচ্ছে পর্যটকদের থেকে।
আর একটি কথা, রেড ইয়াও নারীরাসহ গ্রামের বাসিন্দারা কিন্তু যথেষ্ট অতিথিবৎসল। ভাগ্য ভালো হলে গ্রামটিতে ঘুরতে গেলে হয়তো তাঁরা আপনাকে নিজেদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবে। সেখানে বসে এক কাপ কফি কিংবা চা খেতে খেতে জানতে পারবেন তাঁদের ঐতিহ্যের নানা দিক আর নারীদের এই আশ্চর্য চুল সম্পর্কে বিস্তারিত।
সূত্র: ইনসাইডার ডট কম, মেসি নেসি চিক ডট কম, আউটলুক ইন্ডিয়া ডট কম
বিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
১ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
১ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই আলোচনায় এখন ট্রাম্প। তবে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইতালির সার্দানিয়া দ্বীপের একটি গ্রামে একেবারেই ভিন্ন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হিসেবে।
২ দিন আগেটাইটানিকের ৭০০-র বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে উদ্ধার করেছিল একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপহার দেওয়া একটি সোনার ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
৩ দিন আগে