ঠিকানা আছে, ভিটা নেই আলেয়ার

মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর) 
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৪, ০৭: ৫৩

আলেয়া খাতুন। বয়স ষাটের বেশি। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মৃত আবদুল মালেকের স্ত্রী তিনি। সাকিন থাকলেও তাঁর কোনো ভিটা নেই, জমি নেই। থাকেন অন্যের মেহগনিবাগানের এক খুপরিতে। সেই আলেয়া খাতুনই গত ডিসেম্বরে উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জয়িতা নির্বাচিত হন।

বিটুমিন বিছানো কালো রাস্তা থেকে নেমে দুটি বাড়ির উঠান পার হতে হয়। তারপর সামছুর রহমানের মেহগনিবাগান। দূর থেকে গাছের ফাঁক দিয়ে সেখানে চোখে পড়ে টালির ছাউনি দেওয়া টিনের বেড়ার ছোট একটি বাড়ি। অবশ্য বাড়ি না বলে একে খুপরি বলাই ভালো। সেই বাড়ির বারান্দার এক পাশে স্তূপ করে রাখা আছে কিছু বস্তা; অন্যদিকে ছোট জায়গায় বিছানায় বসে কয়েকজন নারীকে শাড়ি, থ্রি-পিস ইত্যাদি দেখাচ্ছেন আলেয়া খাতুন। পাশে রাখা বেশ কিছু মুদি পণ্য। এসবও বিক্রি করেন আলেয়া। শুধু তা-ই নয়, সন্ধ্যায় আলেয়ার খুপরিতে হাজির হন এলাকার নারীরা। তাঁরা সেখানে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটির স্বাদ নিতে যান।

৩৫ বছর আগে আলেয়া বেগমের স্বামী আবদুল মালেক পাঁচ শিশুসন্তান রেখে মারা যান। সম্বল হিসেবে রেখে যান ছয় শতক বসতভিটা। কিছুদিন পর একটি ছেলে মারা যায়। ছেলেমেয়েদের বড় করতে আলেয়া খাতুন তখন কোমর বেঁধে নেমে যান খেত-খামারে শ্রমিকের কাজ করতে। এভাবে তাঁর প্রায় ২৫ বছর কেটে যায়। একপর্যায়ে ছেলেমেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেলে আলেয়া তাঁদের বোঝা হননি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি অন্যের জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই  করে নেন।

সেখানে প্রথমে কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি শুরু করেন। বর্তমানে ৭০টি নান্দায় (মাটির পাত্র) তাঁর এ সার উৎপাদিত হয়। সঙ্গে হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিন দিয়ে বেড়াতেন পাড়ায় পাড়ায়। কিছুদিন পর বেশ কিছু টাকা জমে গেলে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকা কিংবা কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে তিনি শাড়ি, থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় নিয়ে আসেন। সেসব কাপড় বিক্রির পাশাপাশি আলেয়া খাতুন ইমিটেশনের গয়নাও বিক্রি করেন। এ সবকিছুর টাকা দিয়ে তাঁর একজনের বেশ ভালোই চলে যায়, সন্তানদের কাছে হাত পাততে হয় না; বরং আলেয়ার হাতে সব সময় কয়েক হাজার টাকা থেকে যায়। ঝিকরগাছা উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা অনিতা মল্লিক জানিয়েছেন, এই বিশেষ গুণের জন্য আলেয়া খাতুনকে জয়িতা নির্বাচন করা হয়।

যত দিন বেঁচে আছেন, কারও কাছে হাত পাততে চান না আলেয়া খাতুন। এভাবে  টুকটাক ব্যবসা করে নিজের খরচ নিজে জোগাড় করতে চান তিনি। নিজের টাকায় নিজে চলা একটা আনন্দের ব্যাপার। বাকি জীবন এভাবেই চলতে চান আলেয়া খাতুন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত