শূন্য থেকে শিখরে

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮: ১৮
লে থি ট্রাং। ছবি: সংগৃহীত

এই গল্পের শুরু এক বোহিমিয়ান যুবকের ভ্রমণ ও প্রেম থেকে।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ট্রান্ডল শহরের বাসিন্দা ক্রিস্টোফার রস্টহর্ন। একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাকরি ছেড়ে, সব সম্পত্তি বিক্রি করে বেরিয়ে পড়েন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভ্রমণে। সময়টা ২০০৯ সাল। ভিয়েতনামের হুয়ে একটি বাজেট হোস্টেলে ওঠেন ক্রিস্টোফার। সেই হোস্টেলেই রিসেপশনিস্ট ছিলেন ১৯ বছর বয়সী লে থি ট্রাং।

পরিচয় থেকে তাঁদের সম্পর্ক গড়ায় বন্ধুত্বের দিকে। ক্রিস্টোফারের বয়স তখন ২৫। তিনি জানতে পারেন, লে থি ট্রাংয়ের বাবা-মা আর চার ভাই-বোন নিয়ে বেশ বড় পরিবার। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পরিবারের হাল ধরতে তাঁকে বেছে নিতে হয়েছিল পরিশ্রমের জীবনে। কখনো রাস্তার ধারে, কখনো সৈকতে খাবার বিক্রি করতেন ছোট্ট লে। বড় হলে করেন গৃহকর্মীর কাজ। তারপর সেই হোস্টেলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজও করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সেখানেই হন রিসেপশনিস্ট।

লে-এর এই গল্প আকর্ষণ করে ক্রিস্টোফারকে। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক। সেই প্রেমের টানে ক্রিস্টোফারের ৩ মাসের ভ্রমণ স্থায়ী হয় ৯ মাসে।

২০১০ সালের মাঝামাঝি ক্রিস্টোফার দেখা করেন লে-এর পরিবারের সঙ্গে। জীর্ণ বাড়ি। ছাদ ফুটো হয়ে আসছিল সকালের আলো। ছিল না বাথরুম আর প্রয়োজনীয় আসবাব। টাইলসের মেঝেতে পা মুড়ে বসে পুরো পরিবারের সঙ্গে সেদিন সবজি আর মাছের সস দিয়ে একটি সাধারণ খাবার খেয়েছিলেন ক্রিস্টোফার। যাওয়ার আগে একটি নতুন ফ্রিজ, এক প্যাকেট ইয়োগার্ট এবং কিছু রুটি কিনে লে-এর পরিবারের জন্য রেখে যান। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলে যান, ‘আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।’

২০১১ সালে ক্রিস্টোফার আবার ভিয়েতনামে ফিরে যান। এবার বাগদান সেরে ফেলেন। ২০১২ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান লে-কে নিয়ে।

লে থি ট্রাং অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছান। কিন্তু সেখানে বাস্তবতা ছিল তাঁর ধারণার চেয়ে কঠিন। তিনি জানতেন, তাঁর সদ্য বিবাহিত স্বামীর কোনো চাকরি নেই, বাড়ি নেই, অর্থ নেই। দুই সপ্তাহ সিডনিতে ক্রিস্টোফারের বোনের সঙ্গে থাকেন তাঁরা। তারপর একটি পুরোনো গাড়ি ভাড়া করে চলে যান ট্রান্ডলে। সেই শহরে মাত্র ১০০ মানুষ বসবাস করত। সেখানে অভিবাসীদের জন্য চাকরির সুযোগ ছিল না। তাঁরা কাজ খুঁজতে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অরেঞ্জ শহরে চলে যান। বোন ও বাবার কাছে টাকা ধার নিয়ে শুরু করেন সংসার ও চাকরি।

২০১৭ সালে লে ও ক্রিস্টোফারের ফুড ট্রাক যাত্রা শুরু করে। ছবি: সংগৃহীত
২০১৭ সালে লে ও ক্রিস্টোফারের ফুড ট্রাক যাত্রা শুরু করে। ছবি: সংগৃহীত

লে থি ট্রাং ক্রেন মেরামতের কাজ পান। প্রতিদিন ৪৫ মিনিট হেঁটে কাজের জায়গায় পৌঁছাতেন তিনি। কয়েক মাসে কিছু অর্থ জমিয়ে একটি সাইকেল কিনে ফেলেন লে। আর্থিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলে তাঁরা একটি বাড়ি কেনার কথা ভাবেন। সঞ্চয়ের জন্য কমিয়ে ফেলেন হাতখরচ। বাড়তি আয়ের জন্য লে অরেঞ্জ বাজারে শুকনো গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফুড ট্রাকের একটি ভিডিও দেখেন। এই ভিডিও মোড় ঘুরিয়ে দেয় লে-এর জীবনের।

লে এমন ভ্রাম্যমাণ ফুড ট্রাক দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এতে ক্রিস্টোফারের খুব একটা সায় ছিল না। কিন্তু প্রায় তিন বছর পর ২০১৭ সালে লে ও ক্রিস্টোফারের ফুড ট্রাক যাত্রা শুরু করে। সেটির নাম ছিল গ্রিলড পোর্ক বান মি। অল্প দিনেই ভিয়েতনামি স্বাদের এ খাবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

সস প্রস্তুত করা, মাংস মেরিনেট করা, গ্রিল করা, সবজি কাটাসহ সব কাজ লে একাই করতেন। একপর্যায়ে তিনি তাঁর মাকে ভিয়েতনাম থেকে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে তাঁরা একটি স্টল নেন ফুডকোর্টে। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে লে ভিয়েতনামি খাবারের জন্য সস এবং সিজনিং উৎপাদন শুরু করেন। সেটি ছিল তাঁদের তৃতীয় উদ্যোগ।

এখন অস্ট্রেলিয়ার ৩০টি দোকান এবং সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে লের পণ্য। আর আয়? লে এখন শুধু ফুড ট্রাক থেকে আয় করেন প্রতি মাসে ১৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

সূত্র: এমএসএন

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত