Ajker Patrika

মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নারী সহিংসতা রোধের প্রমাণ নেই: ব্যারিস্টার সারা হোসেন

অনলাইন ডেস্ক
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ‘শিখা’ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ‘শিখা’ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা যায়, এমন প্রমাণাদি নেই বলে মন্তব্য করেছেন ব্লাস্টের (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ‘শিখা’ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, ‘যৌন হয়রানি ও সহিংসতা যারা করছে, তাদের অবশ্যই সাজা দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের সামনে কোনো ধরনের প্রমাণাদি নেই যে সর্বোচ্চ সাজা বা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দিয়ে এসব ঘটনা রোধ করা যায়। বরং অনেক দেশের গবেষণা এবং বাংলাদেশের গবেষণা থেকে আমরা জেনেছি, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাঁদের কাছে যদি অভিযোগ তোলার সুযোগ থাকে, তাহলে পরিবর্তন আসবে।’

অনুষ্ঠানে অতীতের কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় কর্মরত ৮০ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে সহিংসতা বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই হার ৭৪ শতাংশ, গণপরিবহনে ৯৪ শতাংশ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ৬৮ শতাংশ।’

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বা হয়রানি মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্র্যাক যৌথভাবে হাতে নিয়েছে ‘শিখা প্রকল্প’। এই প্রকল্প জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, হয়রানি এবং যৌন হয়রানির প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া জোরদার করে ব্যক্তিগত ও জনপরিসরে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। তিনি বলেন, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবার সমান অধিকার থাকবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাকে শুধু নারীর সমস্যা হিসেবে দেখে না, বরং এটি মানবাধিকার, উন্নয়ন ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

সমাপনী বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, নীতিনির্ধারক, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। সত্যিকারের পরিবর্তন তখনই আসে যখন শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে নারী-পুরুষের সমতার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত সচিব) ওমর মো. ইমরুল মহসিন, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালনায় সহায়ক কমিটির সদস্য এবং শাশা গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি এবং আইন সংস্কার কমিশনের সদস্য কামরান তানভিরুর রহমান এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী।

ব্লাস্ট এবং ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) সহযোগিতায় শিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ব্র্যাক। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিসর এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিরাপদ পরিবেশ গঠনের পাশাপাশি এই উদ্যোগটি আইনি সংস্কারের পক্ষে সুপারিশ প্রণয়ন, কার্যকর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জোরদার এবং ক্ষতিকর সামাজিক রীতি ও লিঙ্গগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। আগামী চার বছরে প্রকল্পটি ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহীর জেলাগুলোতে বাস্তবায়িত হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত