কামরুল হাসান

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছিল বগুড়ার দৈনিক করতোয়ার সাংবাদিক হিসেবে। তারপর আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ থেকে চলে গেল আজকের কাগজে, ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে। একদিন দুপুরে আরিফের ফোন।
বন্ধু, ‘হামাক একটা কাম করে দিবু। না করবু ন্যা কিন্তু। এক ছৈল খুব বিপদে পড়ছে। তুই না হলে হবি ন্যা।’
আরিফ এভাবেই বলে। আমি বললাম, আগে বল কী হয়েছে।
আরিফ যা বলল, তা আমাকে একটু চিন্তায় ফেলে দিল। এটিএন বাংলার প্ল্যানিং এডিটর কেরামত উল্লাহ বিপ্লব তখন বাংলাবাজার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। কসকো সাবানের উৎপাদনকারী কমান্ডার সোপ কোম্পানি ছিল পত্রিকাটির মালিক। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অফিস। সেখান থেকে রিকশায় করে বেশ রাতে মগবাজারের বাসায় ফিরছিলেন বিপ্লব। তাঁর রিকশাটি মগবাজার মসজিদের সামনে এলে একদল ছিনতাইকারী গতিরোধ করে। তারা বিপ্লবকে মেরেধরে তাঁর মোবাইল ফোনসহ সবকিছু কেড়ে নেয়। ছিনতাইকারীদের হাতে সবকিছু খোয়ালেও বিপ্লবের আফসোস ছিল শখের মোবাইল ফোনটি নিয়ে। যে করেই হোক ফোনটা উদ্ধার করে দিতে হবে। আরিফের পীড়াপীড়িতে বললাম, দেখি কাউকে অনুরোধ করে উদ্ধার করা যায় কি না। তখন সবার হাতে হাতে যেমন মোবাইল ফোন ছিল না, তেমনি মোবাইল ফোনের কলরেকর্ড, কললিস্ট বা অবস্থান জানার ব্যবস্থাও ছিল না। ফোন একবার হারালে মহাবিপদ।
বিপ্লবের সেই ফোন উদ্ধারের জন্য প্রথম কল দিলাম রমনা থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামকে। দেখি এ ঘটনা তিনি আমার আগেই শুনেছেন। বললেন, এই ফোন উদ্ধার করা তাঁর পক্ষে একেবারে অসম্ভব। তবে একটা পথ বাতলে দিলেন। বললেন, কারওয়ান বাজার থেকে মগবাজার রেলগেট পর্যন্ত এলাকায় যেসব চাঁদাবাজি-ছিনতাই হয়, সবই করে পিচ্চি হান্নানের ছেলেরা। আর রেলগেটের দক্ষিণ দিকের নিয়ন্ত্রণ আরমানের হাতে। আরমান যুবলীগের নেতা লিয়াকত হোসেনের ঘনিষ্ঠ। লিয়াকতকে বললে কাজ হতে পারে।
নিউ ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনের উলটো দিকে মোটর পার্টসের মার্কেট হেলেনা সেন্টারে যুবলীগের নেতা লিয়াকতের আস্তানা। সেই আস্তানায় টিঅ্যান্ডটির একটি ফোন ছিল। ফোন দিলাম সেই নম্বরে। লিয়াকত নিজেই ফোন ধরে সব শুনে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন, দেখি কী করা যায়।’ বিকেলের দিকে জনকণ্ঠের পিএবিএক্স নম্বরে ফোন দিলেন আরমান নিজেই। বললেন, ছিনতাইকারীদের তিনি শনাক্ত করেছেন, ফোনও পাওয়া গেছে। যাঁর ফোন তাঁকে এসে নিয়ে যেতে হবে। ছিনতাই হওয়ার পর বিপ্লব খুব ভয় পেয়ে গেছেন। ফোন আর নিতে আসেন না। পরে আরিফসহ এসে ফোনটা লিয়াকতের অফিস থেকে বুঝে নেন বিপ্লব।
এ গল্পের শেষের দিকে যে আরমানের কথা বললাম, সেই আরমানই ছিল সরকারের পুরস্কার ঘোষিত ১২ নম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী। তবে আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’–এ শুধু সন্ত্রাসী আরমানের গল্প বলব না। বলব এই সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের গল্প। যে ষড়যন্ত্র শুধু গণমাধ্যমের চাপে খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আপনাদের নিশ্চয় সেই মামলার জজ মিয়ার কথা মনে আছে? এই জজ মিয়া গল্পের প্লট সাজাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমানকেও আনা হয়েছিল। জজ মিয়াকে দিয়ে যেভাবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়, সেভাবে আরমানের জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখির পর সব ভেস্তে যায়। ‘জজ মিয়াকে নিয়ে পুলিশের আষাঢ়ে গল্প’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি রিপোর্ট তখন বেশ হইচই ফেলেছিল। তবে ষড়যন্ত্র নিয়ে বলার আগে আরমানের কীর্তিকলাপগুলো একটু বলি।
আরমানের বাবার নাম এস এম আইনুল হক। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে আরমান সবার বড়। বড় মগবাজার এলাকায় বছরের পর বছর ধরে তাঁদের পরিবারের বসবাস। আরমান দেখতে যেমন স্মার্ট, কথাবার্তায় তেমনি বিনয়ী। খুব নিচু স্বরে কথা বলতেন। কথা বলার সময় কারও চোখের দিকে তাকাতেন না। তাঁর পোশাক-আশাক ছিল চোখধাঁধানো। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার যে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাতে আরমানের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা। ওই সময় তাঁর ছবিসহ পোস্টার সারা দেশে সাঁটানো হয়। তখন আরমানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ মামলা ছিল ১৩টি।
এবার বলি, আরমান কী করে এত বড় সন্ত্রাসী হলেন। আপনাদের নিশ্চয় সেই ‘সেভেন স্টার’ নামকরণের গল্পটা মনে আছে। কথিত সেই সেভেন স্টার বাহিনীর প্রধান ছিলেন ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। মগবাজার ও এর আশপাশের এলাকা ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন মোল্লা মাসুদ আর টিক্কা। মগবাজারের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান ছিলেন টিক্কার আপন মামা। স্বাভাবিকভাবেই টিক্কা মগবাজার এলাকায় খুব প্রভাবশালী ছিলেন।
সেভেন স্টারের সেই সুব্রত বাইনের হাত ধরেই সন্ত্রাসী জগতে আসেন আরমান। সুদর্শন আরমান তখন চাঁদাবাজি করতেন। কিছুদিনের মধ্যে মোল্লা মাসুদ ও টিক্কার সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। সুব্রত বাইনের সঙ্গ ত্যাগ করে যোগ দেন লিয়াকতের দলে। খুব অল্প দিনেই তিনি মুরগি মিলন ও লিয়াকতের ডানহাতে পরিণত হন। সে সময় মুরগি মিলনের সঙ্গে তাঁর দারুণ ভাব জমে যায়। দুজন একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। মিলনের হয়ে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের কাজ নেন আরমান।
এভাবে বেশ কয়েক বছর পার হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর অবস্থা বুঝে লিয়াকত ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। আরমান তখন কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্ছি হান্নানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেখানেও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সম্পর্কটাও ভেঙে যায়। শেষ পর্যন্ত লিয়াকতের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে কিছুদিন কলকাতার একটি হোটেলে ছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। তবে কিছুদিন পরেই তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। এরপর লিয়াকত দেশে ফিরে এলেও আরমান ভারতেই থেকে যান।
ফিরে আসেন ২০০৫ সালের মে মাসের দিকে। ঢাকায় ফিরে কেরানীগঞ্জে তাঁর বোনের বাড়ির পাশে একটি বাড়িভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করেন। ওই বছরের ৩ জুন রাতে ধানমন্ডির একটি বাড়ি থেকে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আরমানকে গ্রেপ্তারের পর শুরু হয় সেই ষড়যন্ত্রের খেলা।
আরমানকে গ্রেপ্তারের সাত-আট দিন পর, ২০০৫ সালের ১০ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। তাঁকে কয়েক দফা রিমান্ডে এনে অনেক মারধর করা হয়। আরমানকে গ্রেপ্তারের পরের দিন (১১ জুন) মগবাজারের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মোখলেছুর রহমান ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর আরমান, জজ মিয়া এবং মোখলেছকে নিয়ে একটি গল্প ছেড়ে দেওয়া হয় বাজারে। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, মোখলেছুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। মোখলেছুর রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। আর বলা হয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান নোয়াখালীর জজ মিয়াকে আগে থেকেই চেনেন। গ্রেনেড হামলার পর তাঁরা একসঙ্গে ভিনদেশে অবস্থান করেছিলেন। (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)
র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল চৌধুরী ফজলুল বারী এই সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, র্যাব আরমানের কাছ থেকে ২১ আগস্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)। আরমানকে জেরা করার পর তখন র্যাব জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমাতি সুব্রত বাইন, মুকুল এবং জয়। হামলার জন্য তাঁরা একটি বিশেষ সংস্থার সঙ্গে আড়াই কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। চুক্তির ৫০ লাখ টাকা নাকি আগাম দেওয়া হয়েছিল। তখন নিজেদের তদন্ত বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ করতে ইন্টারপোলকেও ডেকে এনেছিল সিআইডি।
তখন অবশ্য আরেকটি কথা বাজারে চালু ছিল। ঠিক একই সময়ে এরশাদের মামলায় তাঁর স্ত্রী বিদিশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদিশার ওপর সরকারি জুলুম-নির্যাতন নিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনাও হয়। শোনা যায়, সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আরমানকে সামনে আনা হয়।
এরপর সিআইডি জজ মিয়ার কাছ থেকে গ্রেনেড হামলা নিয়ে একটি সাজানো স্বীকারোক্তি আদায় করে। আরমানের কাছ থেকেও স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। তখন যেভাবেই হোক জজ মিয়ার একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গণমাধ্যমে চলে আসে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জজ মিয়ার পরিবারকে খরচ দিচ্ছে সিআইডি। তাঁকে দিয়ে যা বলানো হচ্ছে সবই সাজানো। চারদিকে ছি ছি পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আরমানকে দিয়ে সাজানো জবানবন্দি দেওয়ানোর চেষ্টা থেকে সরে আসে ষড়যন্ত্রকারীরা। একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে নাটক সাজানোর চেষ্টা এভাবেই থেমে যায়। সেই থেকে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি সেলে দিন কাটাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান।
আরও পড়ুন

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছিল বগুড়ার দৈনিক করতোয়ার সাংবাদিক হিসেবে। তারপর আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ থেকে চলে গেল আজকের কাগজে, ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে। একদিন দুপুরে আরিফের ফোন।
বন্ধু, ‘হামাক একটা কাম করে দিবু। না করবু ন্যা কিন্তু। এক ছৈল খুব বিপদে পড়ছে। তুই না হলে হবি ন্যা।’
আরিফ এভাবেই বলে। আমি বললাম, আগে বল কী হয়েছে।
আরিফ যা বলল, তা আমাকে একটু চিন্তায় ফেলে দিল। এটিএন বাংলার প্ল্যানিং এডিটর কেরামত উল্লাহ বিপ্লব তখন বাংলাবাজার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। কসকো সাবানের উৎপাদনকারী কমান্ডার সোপ কোম্পানি ছিল পত্রিকাটির মালিক। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অফিস। সেখান থেকে রিকশায় করে বেশ রাতে মগবাজারের বাসায় ফিরছিলেন বিপ্লব। তাঁর রিকশাটি মগবাজার মসজিদের সামনে এলে একদল ছিনতাইকারী গতিরোধ করে। তারা বিপ্লবকে মেরেধরে তাঁর মোবাইল ফোনসহ সবকিছু কেড়ে নেয়। ছিনতাইকারীদের হাতে সবকিছু খোয়ালেও বিপ্লবের আফসোস ছিল শখের মোবাইল ফোনটি নিয়ে। যে করেই হোক ফোনটা উদ্ধার করে দিতে হবে। আরিফের পীড়াপীড়িতে বললাম, দেখি কাউকে অনুরোধ করে উদ্ধার করা যায় কি না। তখন সবার হাতে হাতে যেমন মোবাইল ফোন ছিল না, তেমনি মোবাইল ফোনের কলরেকর্ড, কললিস্ট বা অবস্থান জানার ব্যবস্থাও ছিল না। ফোন একবার হারালে মহাবিপদ।
বিপ্লবের সেই ফোন উদ্ধারের জন্য প্রথম কল দিলাম রমনা থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামকে। দেখি এ ঘটনা তিনি আমার আগেই শুনেছেন। বললেন, এই ফোন উদ্ধার করা তাঁর পক্ষে একেবারে অসম্ভব। তবে একটা পথ বাতলে দিলেন। বললেন, কারওয়ান বাজার থেকে মগবাজার রেলগেট পর্যন্ত এলাকায় যেসব চাঁদাবাজি-ছিনতাই হয়, সবই করে পিচ্চি হান্নানের ছেলেরা। আর রেলগেটের দক্ষিণ দিকের নিয়ন্ত্রণ আরমানের হাতে। আরমান যুবলীগের নেতা লিয়াকত হোসেনের ঘনিষ্ঠ। লিয়াকতকে বললে কাজ হতে পারে।
নিউ ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনের উলটো দিকে মোটর পার্টসের মার্কেট হেলেনা সেন্টারে যুবলীগের নেতা লিয়াকতের আস্তানা। সেই আস্তানায় টিঅ্যান্ডটির একটি ফোন ছিল। ফোন দিলাম সেই নম্বরে। লিয়াকত নিজেই ফোন ধরে সব শুনে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন, দেখি কী করা যায়।’ বিকেলের দিকে জনকণ্ঠের পিএবিএক্স নম্বরে ফোন দিলেন আরমান নিজেই। বললেন, ছিনতাইকারীদের তিনি শনাক্ত করেছেন, ফোনও পাওয়া গেছে। যাঁর ফোন তাঁকে এসে নিয়ে যেতে হবে। ছিনতাই হওয়ার পর বিপ্লব খুব ভয় পেয়ে গেছেন। ফোন আর নিতে আসেন না। পরে আরিফসহ এসে ফোনটা লিয়াকতের অফিস থেকে বুঝে নেন বিপ্লব।
এ গল্পের শেষের দিকে যে আরমানের কথা বললাম, সেই আরমানই ছিল সরকারের পুরস্কার ঘোষিত ১২ নম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী। তবে আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’–এ শুধু সন্ত্রাসী আরমানের গল্প বলব না। বলব এই সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের গল্প। যে ষড়যন্ত্র শুধু গণমাধ্যমের চাপে খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আপনাদের নিশ্চয় সেই মামলার জজ মিয়ার কথা মনে আছে? এই জজ মিয়া গল্পের প্লট সাজাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমানকেও আনা হয়েছিল। জজ মিয়াকে দিয়ে যেভাবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়, সেভাবে আরমানের জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখির পর সব ভেস্তে যায়। ‘জজ মিয়াকে নিয়ে পুলিশের আষাঢ়ে গল্প’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি রিপোর্ট তখন বেশ হইচই ফেলেছিল। তবে ষড়যন্ত্র নিয়ে বলার আগে আরমানের কীর্তিকলাপগুলো একটু বলি।
আরমানের বাবার নাম এস এম আইনুল হক। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে আরমান সবার বড়। বড় মগবাজার এলাকায় বছরের পর বছর ধরে তাঁদের পরিবারের বসবাস। আরমান দেখতে যেমন স্মার্ট, কথাবার্তায় তেমনি বিনয়ী। খুব নিচু স্বরে কথা বলতেন। কথা বলার সময় কারও চোখের দিকে তাকাতেন না। তাঁর পোশাক-আশাক ছিল চোখধাঁধানো। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার যে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাতে আরমানের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা। ওই সময় তাঁর ছবিসহ পোস্টার সারা দেশে সাঁটানো হয়। তখন আরমানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ মামলা ছিল ১৩টি।
এবার বলি, আরমান কী করে এত বড় সন্ত্রাসী হলেন। আপনাদের নিশ্চয় সেই ‘সেভেন স্টার’ নামকরণের গল্পটা মনে আছে। কথিত সেই সেভেন স্টার বাহিনীর প্রধান ছিলেন ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। মগবাজার ও এর আশপাশের এলাকা ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন মোল্লা মাসুদ আর টিক্কা। মগবাজারের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান ছিলেন টিক্কার আপন মামা। স্বাভাবিকভাবেই টিক্কা মগবাজার এলাকায় খুব প্রভাবশালী ছিলেন।
সেভেন স্টারের সেই সুব্রত বাইনের হাত ধরেই সন্ত্রাসী জগতে আসেন আরমান। সুদর্শন আরমান তখন চাঁদাবাজি করতেন। কিছুদিনের মধ্যে মোল্লা মাসুদ ও টিক্কার সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। সুব্রত বাইনের সঙ্গ ত্যাগ করে যোগ দেন লিয়াকতের দলে। খুব অল্প দিনেই তিনি মুরগি মিলন ও লিয়াকতের ডানহাতে পরিণত হন। সে সময় মুরগি মিলনের সঙ্গে তাঁর দারুণ ভাব জমে যায়। দুজন একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। মিলনের হয়ে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের কাজ নেন আরমান।
এভাবে বেশ কয়েক বছর পার হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর অবস্থা বুঝে লিয়াকত ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। আরমান তখন কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্ছি হান্নানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেখানেও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সম্পর্কটাও ভেঙে যায়। শেষ পর্যন্ত লিয়াকতের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে কিছুদিন কলকাতার একটি হোটেলে ছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। তবে কিছুদিন পরেই তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। এরপর লিয়াকত দেশে ফিরে এলেও আরমান ভারতেই থেকে যান।
ফিরে আসেন ২০০৫ সালের মে মাসের দিকে। ঢাকায় ফিরে কেরানীগঞ্জে তাঁর বোনের বাড়ির পাশে একটি বাড়িভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করেন। ওই বছরের ৩ জুন রাতে ধানমন্ডির একটি বাড়ি থেকে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আরমানকে গ্রেপ্তারের পর শুরু হয় সেই ষড়যন্ত্রের খেলা।
আরমানকে গ্রেপ্তারের সাত-আট দিন পর, ২০০৫ সালের ১০ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। তাঁকে কয়েক দফা রিমান্ডে এনে অনেক মারধর করা হয়। আরমানকে গ্রেপ্তারের পরের দিন (১১ জুন) মগবাজারের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মোখলেছুর রহমান ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর আরমান, জজ মিয়া এবং মোখলেছকে নিয়ে একটি গল্প ছেড়ে দেওয়া হয় বাজারে। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, মোখলেছুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। মোখলেছুর রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। আর বলা হয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান নোয়াখালীর জজ মিয়াকে আগে থেকেই চেনেন। গ্রেনেড হামলার পর তাঁরা একসঙ্গে ভিনদেশে অবস্থান করেছিলেন। (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)
র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল চৌধুরী ফজলুল বারী এই সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, র্যাব আরমানের কাছ থেকে ২১ আগস্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)। আরমানকে জেরা করার পর তখন র্যাব জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমাতি সুব্রত বাইন, মুকুল এবং জয়। হামলার জন্য তাঁরা একটি বিশেষ সংস্থার সঙ্গে আড়াই কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। চুক্তির ৫০ লাখ টাকা নাকি আগাম দেওয়া হয়েছিল। তখন নিজেদের তদন্ত বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ করতে ইন্টারপোলকেও ডেকে এনেছিল সিআইডি।
তখন অবশ্য আরেকটি কথা বাজারে চালু ছিল। ঠিক একই সময়ে এরশাদের মামলায় তাঁর স্ত্রী বিদিশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদিশার ওপর সরকারি জুলুম-নির্যাতন নিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনাও হয়। শোনা যায়, সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আরমানকে সামনে আনা হয়।
এরপর সিআইডি জজ মিয়ার কাছ থেকে গ্রেনেড হামলা নিয়ে একটি সাজানো স্বীকারোক্তি আদায় করে। আরমানের কাছ থেকেও স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। তখন যেভাবেই হোক জজ মিয়ার একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গণমাধ্যমে চলে আসে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জজ মিয়ার পরিবারকে খরচ দিচ্ছে সিআইডি। তাঁকে দিয়ে যা বলানো হচ্ছে সবই সাজানো। চারদিকে ছি ছি পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আরমানকে দিয়ে সাজানো জবানবন্দি দেওয়ানোর চেষ্টা থেকে সরে আসে ষড়যন্ত্রকারীরা। একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে নাটক সাজানোর চেষ্টা এভাবেই থেমে যায়। সেই থেকে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি সেলে দিন কাটাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান।
আরও পড়ুন
কামরুল হাসান

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছিল বগুড়ার দৈনিক করতোয়ার সাংবাদিক হিসেবে। তারপর আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ থেকে চলে গেল আজকের কাগজে, ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে। একদিন দুপুরে আরিফের ফোন।
বন্ধু, ‘হামাক একটা কাম করে দিবু। না করবু ন্যা কিন্তু। এক ছৈল খুব বিপদে পড়ছে। তুই না হলে হবি ন্যা।’
আরিফ এভাবেই বলে। আমি বললাম, আগে বল কী হয়েছে।
আরিফ যা বলল, তা আমাকে একটু চিন্তায় ফেলে দিল। এটিএন বাংলার প্ল্যানিং এডিটর কেরামত উল্লাহ বিপ্লব তখন বাংলাবাজার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। কসকো সাবানের উৎপাদনকারী কমান্ডার সোপ কোম্পানি ছিল পত্রিকাটির মালিক। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অফিস। সেখান থেকে রিকশায় করে বেশ রাতে মগবাজারের বাসায় ফিরছিলেন বিপ্লব। তাঁর রিকশাটি মগবাজার মসজিদের সামনে এলে একদল ছিনতাইকারী গতিরোধ করে। তারা বিপ্লবকে মেরেধরে তাঁর মোবাইল ফোনসহ সবকিছু কেড়ে নেয়। ছিনতাইকারীদের হাতে সবকিছু খোয়ালেও বিপ্লবের আফসোস ছিল শখের মোবাইল ফোনটি নিয়ে। যে করেই হোক ফোনটা উদ্ধার করে দিতে হবে। আরিফের পীড়াপীড়িতে বললাম, দেখি কাউকে অনুরোধ করে উদ্ধার করা যায় কি না। তখন সবার হাতে হাতে যেমন মোবাইল ফোন ছিল না, তেমনি মোবাইল ফোনের কলরেকর্ড, কললিস্ট বা অবস্থান জানার ব্যবস্থাও ছিল না। ফোন একবার হারালে মহাবিপদ।
বিপ্লবের সেই ফোন উদ্ধারের জন্য প্রথম কল দিলাম রমনা থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামকে। দেখি এ ঘটনা তিনি আমার আগেই শুনেছেন। বললেন, এই ফোন উদ্ধার করা তাঁর পক্ষে একেবারে অসম্ভব। তবে একটা পথ বাতলে দিলেন। বললেন, কারওয়ান বাজার থেকে মগবাজার রেলগেট পর্যন্ত এলাকায় যেসব চাঁদাবাজি-ছিনতাই হয়, সবই করে পিচ্চি হান্নানের ছেলেরা। আর রেলগেটের দক্ষিণ দিকের নিয়ন্ত্রণ আরমানের হাতে। আরমান যুবলীগের নেতা লিয়াকত হোসেনের ঘনিষ্ঠ। লিয়াকতকে বললে কাজ হতে পারে।
নিউ ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনের উলটো দিকে মোটর পার্টসের মার্কেট হেলেনা সেন্টারে যুবলীগের নেতা লিয়াকতের আস্তানা। সেই আস্তানায় টিঅ্যান্ডটির একটি ফোন ছিল। ফোন দিলাম সেই নম্বরে। লিয়াকত নিজেই ফোন ধরে সব শুনে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন, দেখি কী করা যায়।’ বিকেলের দিকে জনকণ্ঠের পিএবিএক্স নম্বরে ফোন দিলেন আরমান নিজেই। বললেন, ছিনতাইকারীদের তিনি শনাক্ত করেছেন, ফোনও পাওয়া গেছে। যাঁর ফোন তাঁকে এসে নিয়ে যেতে হবে। ছিনতাই হওয়ার পর বিপ্লব খুব ভয় পেয়ে গেছেন। ফোন আর নিতে আসেন না। পরে আরিফসহ এসে ফোনটা লিয়াকতের অফিস থেকে বুঝে নেন বিপ্লব।
এ গল্পের শেষের দিকে যে আরমানের কথা বললাম, সেই আরমানই ছিল সরকারের পুরস্কার ঘোষিত ১২ নম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী। তবে আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’–এ শুধু সন্ত্রাসী আরমানের গল্প বলব না। বলব এই সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের গল্প। যে ষড়যন্ত্র শুধু গণমাধ্যমের চাপে খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আপনাদের নিশ্চয় সেই মামলার জজ মিয়ার কথা মনে আছে? এই জজ মিয়া গল্পের প্লট সাজাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমানকেও আনা হয়েছিল। জজ মিয়াকে দিয়ে যেভাবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়, সেভাবে আরমানের জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখির পর সব ভেস্তে যায়। ‘জজ মিয়াকে নিয়ে পুলিশের আষাঢ়ে গল্প’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি রিপোর্ট তখন বেশ হইচই ফেলেছিল। তবে ষড়যন্ত্র নিয়ে বলার আগে আরমানের কীর্তিকলাপগুলো একটু বলি।
আরমানের বাবার নাম এস এম আইনুল হক। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে আরমান সবার বড়। বড় মগবাজার এলাকায় বছরের পর বছর ধরে তাঁদের পরিবারের বসবাস। আরমান দেখতে যেমন স্মার্ট, কথাবার্তায় তেমনি বিনয়ী। খুব নিচু স্বরে কথা বলতেন। কথা বলার সময় কারও চোখের দিকে তাকাতেন না। তাঁর পোশাক-আশাক ছিল চোখধাঁধানো। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার যে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাতে আরমানের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা। ওই সময় তাঁর ছবিসহ পোস্টার সারা দেশে সাঁটানো হয়। তখন আরমানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ মামলা ছিল ১৩টি।
এবার বলি, আরমান কী করে এত বড় সন্ত্রাসী হলেন। আপনাদের নিশ্চয় সেই ‘সেভেন স্টার’ নামকরণের গল্পটা মনে আছে। কথিত সেই সেভেন স্টার বাহিনীর প্রধান ছিলেন ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। মগবাজার ও এর আশপাশের এলাকা ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন মোল্লা মাসুদ আর টিক্কা। মগবাজারের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান ছিলেন টিক্কার আপন মামা। স্বাভাবিকভাবেই টিক্কা মগবাজার এলাকায় খুব প্রভাবশালী ছিলেন।
সেভেন স্টারের সেই সুব্রত বাইনের হাত ধরেই সন্ত্রাসী জগতে আসেন আরমান। সুদর্শন আরমান তখন চাঁদাবাজি করতেন। কিছুদিনের মধ্যে মোল্লা মাসুদ ও টিক্কার সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। সুব্রত বাইনের সঙ্গ ত্যাগ করে যোগ দেন লিয়াকতের দলে। খুব অল্প দিনেই তিনি মুরগি মিলন ও লিয়াকতের ডানহাতে পরিণত হন। সে সময় মুরগি মিলনের সঙ্গে তাঁর দারুণ ভাব জমে যায়। দুজন একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। মিলনের হয়ে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের কাজ নেন আরমান।
এভাবে বেশ কয়েক বছর পার হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর অবস্থা বুঝে লিয়াকত ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। আরমান তখন কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্ছি হান্নানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেখানেও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সম্পর্কটাও ভেঙে যায়। শেষ পর্যন্ত লিয়াকতের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে কিছুদিন কলকাতার একটি হোটেলে ছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। তবে কিছুদিন পরেই তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। এরপর লিয়াকত দেশে ফিরে এলেও আরমান ভারতেই থেকে যান।
ফিরে আসেন ২০০৫ সালের মে মাসের দিকে। ঢাকায় ফিরে কেরানীগঞ্জে তাঁর বোনের বাড়ির পাশে একটি বাড়িভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করেন। ওই বছরের ৩ জুন রাতে ধানমন্ডির একটি বাড়ি থেকে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আরমানকে গ্রেপ্তারের পর শুরু হয় সেই ষড়যন্ত্রের খেলা।
আরমানকে গ্রেপ্তারের সাত-আট দিন পর, ২০০৫ সালের ১০ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। তাঁকে কয়েক দফা রিমান্ডে এনে অনেক মারধর করা হয়। আরমানকে গ্রেপ্তারের পরের দিন (১১ জুন) মগবাজারের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মোখলেছুর রহমান ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর আরমান, জজ মিয়া এবং মোখলেছকে নিয়ে একটি গল্প ছেড়ে দেওয়া হয় বাজারে। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, মোখলেছুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। মোখলেছুর রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। আর বলা হয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান নোয়াখালীর জজ মিয়াকে আগে থেকেই চেনেন। গ্রেনেড হামলার পর তাঁরা একসঙ্গে ভিনদেশে অবস্থান করেছিলেন। (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)
র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল চৌধুরী ফজলুল বারী এই সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, র্যাব আরমানের কাছ থেকে ২১ আগস্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)। আরমানকে জেরা করার পর তখন র্যাব জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমাতি সুব্রত বাইন, মুকুল এবং জয়। হামলার জন্য তাঁরা একটি বিশেষ সংস্থার সঙ্গে আড়াই কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। চুক্তির ৫০ লাখ টাকা নাকি আগাম দেওয়া হয়েছিল। তখন নিজেদের তদন্ত বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ করতে ইন্টারপোলকেও ডেকে এনেছিল সিআইডি।
তখন অবশ্য আরেকটি কথা বাজারে চালু ছিল। ঠিক একই সময়ে এরশাদের মামলায় তাঁর স্ত্রী বিদিশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদিশার ওপর সরকারি জুলুম-নির্যাতন নিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনাও হয়। শোনা যায়, সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আরমানকে সামনে আনা হয়।
এরপর সিআইডি জজ মিয়ার কাছ থেকে গ্রেনেড হামলা নিয়ে একটি সাজানো স্বীকারোক্তি আদায় করে। আরমানের কাছ থেকেও স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। তখন যেভাবেই হোক জজ মিয়ার একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গণমাধ্যমে চলে আসে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জজ মিয়ার পরিবারকে খরচ দিচ্ছে সিআইডি। তাঁকে দিয়ে যা বলানো হচ্ছে সবই সাজানো। চারদিকে ছি ছি পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আরমানকে দিয়ে সাজানো জবানবন্দি দেওয়ানোর চেষ্টা থেকে সরে আসে ষড়যন্ত্রকারীরা। একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে নাটক সাজানোর চেষ্টা এভাবেই থেমে যায়। সেই থেকে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি সেলে দিন কাটাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান।
আরও পড়ুন

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছিল বগুড়ার দৈনিক করতোয়ার সাংবাদিক হিসেবে। তারপর আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ থেকে চলে গেল আজকের কাগজে, ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে। একদিন দুপুরে আরিফের ফোন।
বন্ধু, ‘হামাক একটা কাম করে দিবু। না করবু ন্যা কিন্তু। এক ছৈল খুব বিপদে পড়ছে। তুই না হলে হবি ন্যা।’
আরিফ এভাবেই বলে। আমি বললাম, আগে বল কী হয়েছে।
আরিফ যা বলল, তা আমাকে একটু চিন্তায় ফেলে দিল। এটিএন বাংলার প্ল্যানিং এডিটর কেরামত উল্লাহ বিপ্লব তখন বাংলাবাজার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। কসকো সাবানের উৎপাদনকারী কমান্ডার সোপ কোম্পানি ছিল পত্রিকাটির মালিক। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অফিস। সেখান থেকে রিকশায় করে বেশ রাতে মগবাজারের বাসায় ফিরছিলেন বিপ্লব। তাঁর রিকশাটি মগবাজার মসজিদের সামনে এলে একদল ছিনতাইকারী গতিরোধ করে। তারা বিপ্লবকে মেরেধরে তাঁর মোবাইল ফোনসহ সবকিছু কেড়ে নেয়। ছিনতাইকারীদের হাতে সবকিছু খোয়ালেও বিপ্লবের আফসোস ছিল শখের মোবাইল ফোনটি নিয়ে। যে করেই হোক ফোনটা উদ্ধার করে দিতে হবে। আরিফের পীড়াপীড়িতে বললাম, দেখি কাউকে অনুরোধ করে উদ্ধার করা যায় কি না। তখন সবার হাতে হাতে যেমন মোবাইল ফোন ছিল না, তেমনি মোবাইল ফোনের কলরেকর্ড, কললিস্ট বা অবস্থান জানার ব্যবস্থাও ছিল না। ফোন একবার হারালে মহাবিপদ।
বিপ্লবের সেই ফোন উদ্ধারের জন্য প্রথম কল দিলাম রমনা থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামকে। দেখি এ ঘটনা তিনি আমার আগেই শুনেছেন। বললেন, এই ফোন উদ্ধার করা তাঁর পক্ষে একেবারে অসম্ভব। তবে একটা পথ বাতলে দিলেন। বললেন, কারওয়ান বাজার থেকে মগবাজার রেলগেট পর্যন্ত এলাকায় যেসব চাঁদাবাজি-ছিনতাই হয়, সবই করে পিচ্চি হান্নানের ছেলেরা। আর রেলগেটের দক্ষিণ দিকের নিয়ন্ত্রণ আরমানের হাতে। আরমান যুবলীগের নেতা লিয়াকত হোসেনের ঘনিষ্ঠ। লিয়াকতকে বললে কাজ হতে পারে।
নিউ ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনের উলটো দিকে মোটর পার্টসের মার্কেট হেলেনা সেন্টারে যুবলীগের নেতা লিয়াকতের আস্তানা। সেই আস্তানায় টিঅ্যান্ডটির একটি ফোন ছিল। ফোন দিলাম সেই নম্বরে। লিয়াকত নিজেই ফোন ধরে সব শুনে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন, দেখি কী করা যায়।’ বিকেলের দিকে জনকণ্ঠের পিএবিএক্স নম্বরে ফোন দিলেন আরমান নিজেই। বললেন, ছিনতাইকারীদের তিনি শনাক্ত করেছেন, ফোনও পাওয়া গেছে। যাঁর ফোন তাঁকে এসে নিয়ে যেতে হবে। ছিনতাই হওয়ার পর বিপ্লব খুব ভয় পেয়ে গেছেন। ফোন আর নিতে আসেন না। পরে আরিফসহ এসে ফোনটা লিয়াকতের অফিস থেকে বুঝে নেন বিপ্লব।
এ গল্পের শেষের দিকে যে আরমানের কথা বললাম, সেই আরমানই ছিল সরকারের পুরস্কার ঘোষিত ১২ নম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী। তবে আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’–এ শুধু সন্ত্রাসী আরমানের গল্প বলব না। বলব এই সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের গল্প। যে ষড়যন্ত্র শুধু গণমাধ্যমের চাপে খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আপনাদের নিশ্চয় সেই মামলার জজ মিয়ার কথা মনে আছে? এই জজ মিয়া গল্পের প্লট সাজাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমানকেও আনা হয়েছিল। জজ মিয়াকে দিয়ে যেভাবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়, সেভাবে আরমানের জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখির পর সব ভেস্তে যায়। ‘জজ মিয়াকে নিয়ে পুলিশের আষাঢ়ে গল্প’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি রিপোর্ট তখন বেশ হইচই ফেলেছিল। তবে ষড়যন্ত্র নিয়ে বলার আগে আরমানের কীর্তিকলাপগুলো একটু বলি।
আরমানের বাবার নাম এস এম আইনুল হক। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে আরমান সবার বড়। বড় মগবাজার এলাকায় বছরের পর বছর ধরে তাঁদের পরিবারের বসবাস। আরমান দেখতে যেমন স্মার্ট, কথাবার্তায় তেমনি বিনয়ী। খুব নিচু স্বরে কথা বলতেন। কথা বলার সময় কারও চোখের দিকে তাকাতেন না। তাঁর পোশাক-আশাক ছিল চোখধাঁধানো। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার যে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাতে আরমানের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা। ওই সময় তাঁর ছবিসহ পোস্টার সারা দেশে সাঁটানো হয়। তখন আরমানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ মামলা ছিল ১৩টি।
এবার বলি, আরমান কী করে এত বড় সন্ত্রাসী হলেন। আপনাদের নিশ্চয় সেই ‘সেভেন স্টার’ নামকরণের গল্পটা মনে আছে। কথিত সেই সেভেন স্টার বাহিনীর প্রধান ছিলেন ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। মগবাজার ও এর আশপাশের এলাকা ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন মোল্লা মাসুদ আর টিক্কা। মগবাজারের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান ছিলেন টিক্কার আপন মামা। স্বাভাবিকভাবেই টিক্কা মগবাজার এলাকায় খুব প্রভাবশালী ছিলেন।
সেভেন স্টারের সেই সুব্রত বাইনের হাত ধরেই সন্ত্রাসী জগতে আসেন আরমান। সুদর্শন আরমান তখন চাঁদাবাজি করতেন। কিছুদিনের মধ্যে মোল্লা মাসুদ ও টিক্কার সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। সুব্রত বাইনের সঙ্গ ত্যাগ করে যোগ দেন লিয়াকতের দলে। খুব অল্প দিনেই তিনি মুরগি মিলন ও লিয়াকতের ডানহাতে পরিণত হন। সে সময় মুরগি মিলনের সঙ্গে তাঁর দারুণ ভাব জমে যায়। দুজন একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। মিলনের হয়ে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের কাজ নেন আরমান।
এভাবে বেশ কয়েক বছর পার হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর অবস্থা বুঝে লিয়াকত ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। আরমান তখন কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী পিচ্ছি হান্নানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেখানেও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সম্পর্কটাও ভেঙে যায়। শেষ পর্যন্ত লিয়াকতের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে কিছুদিন কলকাতার একটি হোটেলে ছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। তবে কিছুদিন পরেই তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। এরপর লিয়াকত দেশে ফিরে এলেও আরমান ভারতেই থেকে যান।
ফিরে আসেন ২০০৫ সালের মে মাসের দিকে। ঢাকায় ফিরে কেরানীগঞ্জে তাঁর বোনের বাড়ির পাশে একটি বাড়িভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করেন। ওই বছরের ৩ জুন রাতে ধানমন্ডির একটি বাড়ি থেকে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আরমানকে গ্রেপ্তারের পর শুরু হয় সেই ষড়যন্ত্রের খেলা।
আরমানকে গ্রেপ্তারের সাত-আট দিন পর, ২০০৫ সালের ১০ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ। তাঁকে কয়েক দফা রিমান্ডে এনে অনেক মারধর করা হয়। আরমানকে গ্রেপ্তারের পরের দিন (১১ জুন) মগবাজারের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মোখলেছুর রহমান ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর আরমান, জজ মিয়া এবং মোখলেছকে নিয়ে একটি গল্প ছেড়ে দেওয়া হয় বাজারে। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, মোখলেছুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। মোখলেছুর রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। আর বলা হয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান নোয়াখালীর জজ মিয়াকে আগে থেকেই চেনেন। গ্রেনেড হামলার পর তাঁরা একসঙ্গে ভিনদেশে অবস্থান করেছিলেন। (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)
র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল চৌধুরী ফজলুল বারী এই সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, র্যাব আরমানের কাছ থেকে ২১ আগস্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে (প্রথম আলো, ১৬ জুন ২০০৫)। আরমানকে জেরা করার পর তখন র্যাব জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমাতি সুব্রত বাইন, মুকুল এবং জয়। হামলার জন্য তাঁরা একটি বিশেষ সংস্থার সঙ্গে আড়াই কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন। চুক্তির ৫০ লাখ টাকা নাকি আগাম দেওয়া হয়েছিল। তখন নিজেদের তদন্ত বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ করতে ইন্টারপোলকেও ডেকে এনেছিল সিআইডি।
তখন অবশ্য আরেকটি কথা বাজারে চালু ছিল। ঠিক একই সময়ে এরশাদের মামলায় তাঁর স্ত্রী বিদিশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদিশার ওপর সরকারি জুলুম-নির্যাতন নিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনাও হয়। শোনা যায়, সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আরমানকে সামনে আনা হয়।
এরপর সিআইডি জজ মিয়ার কাছ থেকে গ্রেনেড হামলা নিয়ে একটি সাজানো স্বীকারোক্তি আদায় করে। আরমানের কাছ থেকেও স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। তখন যেভাবেই হোক জজ মিয়ার একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গণমাধ্যমে চলে আসে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জজ মিয়ার পরিবারকে খরচ দিচ্ছে সিআইডি। তাঁকে দিয়ে যা বলানো হচ্ছে সবই সাজানো। চারদিকে ছি ছি পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আরমানকে দিয়ে সাজানো জবানবন্দি দেওয়ানোর চেষ্টা থেকে সরে আসে ষড়যন্ত্রকারীরা। একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে নাটক সাজানোর চেষ্টা এভাবেই থেমে যায়। সেই থেকে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি সেলে দিন কাটাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান।
আরও পড়ুন

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছ
১৪ আগস্ট ২০২১
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছ
১৪ আগস্ট ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছ
১৪ আগস্ট ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।
মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।
প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।
কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।
তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।
মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।
প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।
কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।
তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বন্ধুমহলে আরিফ রহমানের নাম ছিল ‘মটু আরিফ’। যেমন দেহ তেমন খায়, উচ্চতাও সেই রকম। কথায় কথায় নিজেকে বলত ‘বোগরার ছৈল’ (বগুড়ার ছেলে)। যেন বগুড়া বাড়ি হওয়া বিরাট কিছু। খাওয়ার শেষপাতে বাচ্চাদের মুখে যেভাবে দুধভাত লেগে থাকে, আরিফের মুখেও সেভাবে লেপটে থাকত বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। ৯০-এর পর ঢাকায় থানা গাড়তে এসেছ
১৪ আগস্ট ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে