Ajker Patrika

প্রত্যাখ্যানের ‘আনন্দ’ আখ্যান

অর্ণব সান্যাল, ঢাকা 
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ৩৪
প্রত্যাখ্যানের ‘আনন্দ’ আখ্যান

প্রত্যাখ্যান। এই এক শব্দের ভেতরেই আছে অগ্রাহ্য, উপেক্ষা, অনাদর। আছে পরিত্যাগ বা পরিহার। কিন্তু শিরোনামে দেওয়া ‘আনন্দ’ কখনোই সচরাচর শাব্দিকভাবে প্রত্যাখ্যানের সঙ্গে মেলে না। বাংলা বা ইংরেজি—দুই ভাষাতেই প্রত্যাখ্যান মানেই যেন বিষাদের বাতাবরণ। কিন্তু কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ধার করা পঙ্‌ক্তিতে বললে এবারের ভাবনাটা দাঁড়ায়, প্রত্যাখ্যানে দুমড়ে-মুচড়ে যেতেই পারি, কিন্তু কেন যাব?

প্রত্যাখ্যাতদের প্রত্যাখ্যান সব সময়ই বোঝায়, ‘তুমি অযোগ্য, তুমি ব্রাত্য’। আর সেই অনুভূতিই আমাদের নিদারুণভাবে বোঝায় সফলতা ও ব্যর্থতার সংজ্ঞা। এক ধাক্কায় ফেলে দেয় অসফলের কাতারে। কিন্তু আসলেই কি প্রত্যাখ্যান মানেই সকরুণ ব্যর্থতা? নাকি এক প্রত্যাখ্যান মানেই আরও বহু সম্ভাবনার দুয়ার?

প্রথম প্রশ্নটায় ইতিবাচক উত্তর দেওয়ার মানুষ পাওয়া যাবে ঢের। এই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিটাই যে তেমন। ধরুন, আপনি নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করলেন শিক্ষাজীবনে ভালো ফল করার। কিংবা একদা মনের দেওয়া-নেওয়া হওয়া মানুষটি বলে দিলেন, ‘আর নয়।’ অথবা পড়াশোনা শেষের পর একের পর এক জীবনবৃত্তান্তের প্রিন্ট কপি দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া মানবসম্পদ বিভাগের ই-মেইল ঠিকানায়। কিন্তু সুফল এল না। এমনকি এল না কোনো প্রকার ফলও। হয়তো খুব ভালো পরীক্ষা দিয়েও কিছু কিছু ঘাটতিতে ফসকে গেল কাঙ্ক্ষিত সিজিপিএ। হয়তো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরও প্রাথমিক সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক দিল না কোনো প্রতিষ্ঠান। এই প্রত্যাখ্যান আপনার আশপাশের মানুষ দেখবে আপনার ব্যর্থতা হিসেবে। শুধু দেখেই ক্ষান্ত হবে না তারা, পদে পদে মনেও করিয়ে দেবে সকালে তারস্বরে বেজে যাওয়া মোবাইলের অ্যালার্মের মতো। ওদিকে বারবার নিজের প্রত্যাখ্যানের পোস্টার দেখতে দেখতে আপনার মনে হতেই পারে, ‘আমি হয়তো ব্যর্থই!’

প্রত্যাখ্যাত হয়ে হতাশ হয়ে পড়ার দিন হয়তো মানুষ শেষ করে এনেছে। পশ্চিমা সমাজে শুরু হয়েছে প্রত্যাখ্যান বা ব্যর্থতা উদ্‌যাপনের সংস্কৃতি। মানুষ এখন নিজের আবেগগুলো নিয়ে আরও স্বচ্ছ হতে চলেছে। এই প্রক্রিয়া মানুষকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

ঠিক এমন মুহূর্তটিকে ঠেকানোর জন্যই আসলে দ্বিতীয় প্রশ্নটির অবতারণা। তার মানে এই নয় যে রবার্ট ব্রুসের সেই আদ্যিকালের বদ্যি গল্প শুনিয়ে আপনাকে শক্তি জুগিয়ে যাওয়াই এই লেখার একমাত্র উদ্দেশ্য। একটু অন্যভাবে বরং পুরো বিষয়টি দেখা যাক।

প্রত্যাখ্যানে কী হয়

প্রত্যাখ্যানে মানুষের আসলে কী হয়? যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ও নিউরোসায়েন্সের ইমেরিটাস অধ্যাপক মার্ক লিয়েরি প্রায় কয়েক দশক ধরে প্রত্যাখ্যানের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি গবেষণায় পেয়েছেন, প্রত্যাখ্যান একজন ব্যক্তির উৎসাহ-উদ্দীপনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নতুন করে ফের শুরু করার বিষয়টিই থমকে যায় অনেক ক্ষেত্রে। এমনকি কখনো কখনো একজন ব্যক্তি আশপাশের চেনা বলয় থেকে নিজেকে বিচ্যুত বলে ভাবতে শুরু করে।

মার্ক লিয়েরি বলছেন, প্রত্যাখ্যানের প্রতি মানুষ খুবই সংবেদনশীল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্কের যেসব অংশ শারীরিক ব্যথা পেলে উদ্দীপ্ত হয়, প্রত্যাখ্যানেও ঠিক তাই-ই হয়। কারণ প্রত্যাখ্যানে শুধু যে আফসোস সৃষ্টি হয়, তা কিন্তু নয়; বরং সেই সঙ্গে তৈরি হয় উদগ্র চেষ্টার পরও আকাঙ্ক্ষিত ফলাফল হাতে না পাওয়ার মনোবেদনা। বুঝুন তবে, প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রণা কতটা তীব্র!

প্রত্যাখ্যান উদ্‌যাপন করুন

যন্ত্রণার তীব্রতা থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন সমাজে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোতে শুরু হয়েছে প্রত্যাখ্যান উদ্‌যাপনের চর্চা। প্রত্যাখ্যানও যে উদ্‌যাপন করা যায় আনন্দের সঙ্গে, সেই ধারণাই গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। প্রত্যাখ্যানেই তো জীবনের শেষ নয়; বরং এই প্রত্যাখ্যানকে গলার মালা করে নিতে পারলে, জীবনের যাপনটা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। এমন ধারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হতে এবং তা সহজভাবে মেনে নিতে মানুষ ভয় পায়। সেই ভয় থেকেই আসে নিজেকে ব্যর্থ মনে করার ভাবনা। আর তখন আশপাশ থেকে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নেয়। সেই গুটিয়ে নেওয়া থেকে শুধু লম্বাই হতে থাকে ব্যর্থতার তালিকা। কারণ তখন যে নতুন কিছু করার বা ফের চেষ্টা করার প্রেরণাটাই হারিয়ে যায় দূর আকাশে।

প্রত্যাখ্যান উদ্‌যাপনের চর্চার দু-একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কগনিটিভ সায়েন্সেসের অধ্যাপক বারবারা ডব্লিউ সারনেকা গত বছরের জুনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক পার্টির আয়োজন করেছিলেন। সেটির মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ‘শততম’ প্রত্যাখ্যান উদ্‌যাপন। মূলত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা যখন ১০০ পেরিয়েছে, তখনই এই পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সাফল্য উদ্‌যাপনে যেমনটা হয়, ঠিক তেমনি উচ্ছল ছিল সেই ‘প্রত্যাখ্যান’ উদ্‌যাপন। এ নিয়ে অধ্যাপক বারবারা সারনেকা বলেছেন, ‘এই ভাবনাটা আসে বিভিন্ন প্রত্যাখ্যানকে চিহ্নিত করা, একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করা এবং সেসব উদ্‌যাপনের প্রসঙ্গে। আমরা প্রত্যাখ্যানকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি না, এ নিয়ে আলোচনাও করতে চাই না সাধারণত, লজ্জিত থাকি। আর উদ্‌যাপন তো দূরের বিষয়। আমরা সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করতে চেয়েছি এবং তা করেছি সবাই মিলে।’

এভাবেই পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘রিজেকশন কালেকশন’-এর ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে; যাতে জীবনের নানা স্তরে পাওয়া প্রত্যাখ্যানগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সাদরে বরণ করেও নেওয়া হয়। এতে দূর হয় প্রত্যাখ্যান নিয়ে তাবৎ গোপনীয়তা। কারণ মানুষের জীবন প্রত্যাখ্যান ও ব্যর্থতায় ভরপুর। হ্যাঁ, কারও কারও ওপর হয়তো তথাকথিত সৌভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ প্রবল থাকে। কিন্তু কতিপয় ব্যতিক্রমে তো আর সংখ্যাগরিষ্ঠরা ভেসে যায় না।

‘যারা সচল থাকে না, তারা নিজেদের শৃঙ্খলও বোঝে না।’ বলেছেন রোজা লুক্সেমবার্গ। প্রত্যাখ্যাত হলে হতাশ না হয়ে বরং নিজের ব্যর্থতাগুলো নিয়ে নতুন করে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করুন। এতে আপনি সচল থাকবেন এবং আপনার সামনে নতুন পথ খুলে যাবে।  

শুধু রিজেকশন কালেকশনই নয়, আছে ‘ফেইলিউর সিভি’ তৈরির ধারণাও। ২০১৬ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক এই ফেইলিউর সিভি তৈরি করে নিজের জীবনের ব্যর্থতার খতিয়ান জানিয়েছিলেন। সেই থেকে ব্যর্থতা নিয়ে এই অকপট স্বীকারোক্তি ব্যর্থতায় নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ট্যাবু ভাঙার উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যর্থতা জনসমক্ষে স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং প্রত্যাখ্যান যে মানবজীবনের একটি অতি সাধারণ অংশ, সেটিই বুঝিয়ে দেওয়া হয় এক লহমায়।

ব্যর্থতাকে দিন ছুটি

প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বা ব্যর্থতায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে জীবনতরীতে নিজেকে ভাসিয়ে রাখার লক্ষ্যে। এমনই কিছু কৌশল সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমত, অন্যের ব্যর্থতার গল্প কিছুটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে হলেও জানা শুরু করা যেতে পারে। কারণ অন্যের ব্যর্থতার কাহিনি আমাদের নিজস্ব ব্যর্থতায় সৃষ্ট ভয়কে কাটিয়ে দিতে সক্ষম। চিকিৎসক ও থেরাপিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহারে সায় দিয়ে থাকেন প্রায়ই। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়াওদং ডি. লিন দীর্ঘদিন বিজ্ঞানী, ক্রীড়াবিদ ও সাধারণ পেশার মানুষদের জীবনের ব্যর্থতা ও তার সম্মুখীন হওয়ার সংগ্রাম নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি মনে করেন, এই পদ্ধতিতে মানুষের মনের ভয় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং এর ক্ষতি করার আশঙ্কাও কমে।

দ্বিতীয়ত, সফলতার জন্য কাঙাল হওয়া বন্ধ করা যেতে পারে। সাধারণত একটি কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তাতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়ে মনোযোগী হয়ে পড়ি। ফলে ক্রমান্বয়ে উন্নতির ব্যাপারটি আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। তাই নিজেদের আশাহত হওয়ার উদ্দাম ঘোড়াকে লাগাম পরাতে চাইলে, শুরুতেই মন দিতে হবে উন্নতিতে, সাফল্যে নয়। কারণ আপনি যদি কোনো কাজে বিফলও হন, তবু চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, সেই আপাত ব্যর্থতাতেও কিছু না কিছু উন্নতি আছেই।

তৃতীয়ত, প্রত্যাখ্যান মানেই চেষ্টার সত্যায়ন। রোজা লুক্সেমবার্গের এ কথাটি মনে রাখবেন, ‘যারা সচল থাকে না, তারা নিজেদের শৃঙ্খলও বোঝে না।’ সুতরাং, প্রত্যাখ্যান বা ব্যর্থতা আসলে আপনার ঘাটতি বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এ-ও দেখিয়ে দেয় যে আপনি চেষ্টা করেছিলেন। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটার ক্রিস গেইল হয়তো সব বলে ছক্কা হাঁকান না, কিন্তু চেষ্টা জারি থাকে বলেই শেষ পর্যন্ত কোনো না কোনো ওভারে বল মাঠের বাইরে যায়-ই!

চতুর্থত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চামড়া মোটা থাকাটাও কল্যাণকর! আপনি যত বেশি প্রত্যাখ্যাত হবেন, তত বেশি সেটি আপনার কাছে সহজ বিষয় হয়ে উঠবে। এটি আপনার দক্ষতা নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ তৈরি করে দেবে। মানবজীবনে দক্ষতাই সব। আর দক্ষতা কোনো জন্মগত বিষয়ও নয় যে কখনোই তা অর্জন করা যাবে না। তাহলে আর প্রত্যাখ্যাত হতে ভয় কিসের!  

পঞ্চমত, ব্যর্থতার কথা ভেবে দিন-রাত গুজরানের বদলে চলুন, নিজেদের কাজ নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করি। যেহেতু কেউই শতভাগ নিখুঁত হয় না, সেহেতু খুঁতগুলো চিহ্নিত করা যেতেই পারে। আর সেটি নিজে করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা। এতে পরবর্তী উদ্যোগগুলো সফল না হয়ে পারেই না!

শেষটা করা যাক বিখ্যাত উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানী থমাস আলভা এডিসনের জীবনের একটি বহুল প্রচলিত ঘটনা দিয়ে। ল্যাবরেটরিতে নিজের ব্যর্থ প্রচেষ্টাগুলো সম্পর্কে তিনি একদা বলেছিলেন, ‘আমি ব্যর্থ হইনি। আমি বরং হাজার দশেক উপায় খুঁজে পেয়েছি, যেগুলো আদতে কাজ করে না।’

অকার্যকর উপায়গুলো খুঁজে পাওয়াটাও কিন্তু দিন শেষে কার্যকর থাকারই নির্দেশক। সুতরাং, উদ্‌যাপন হোক তবে সব প্রত্যাখ্যান ও তৎসংশ্লিষ্ট ব্যর্থতার!

তথ্যসূত্র: ফোর্বস, দ্য আটলান্টিক, মিডিয়াম ডট কম, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ডট ওআরজি, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগ ও অক্সফোর্ড রেফারেন্স ডট কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আপনার কি শুধুই দেরি হয়ে যায়? জেনে নিন বিজ্ঞান কী বলছে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৪০
দীর্ঘস্থায়ীভাবে দেরি করার এই অভ্যাস কেবল দায়িত্বহীনতা বা অবহেলার কারণে হয় না। এটি মস্তিষ্কের গঠন, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এবং এমনকি জৈবিক ঘড়ির সঙ্গে যুক্ত। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
দীর্ঘস্থায়ীভাবে দেরি করার এই অভ্যাস কেবল দায়িত্বহীনতা বা অবহেলার কারণে হয় না। এটি মস্তিষ্কের গঠন, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এবং এমনকি জৈবিক ঘড়ির সঙ্গে যুক্ত। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

বন্ধুমহলে এমন অনেকে থাকেন, যাঁরা সব সময় দেরি করে আড্ডায় পৌঁছান। তাঁদের ফোন করলে যদি শোনা যায়, ‘এই তো, বাসা থেকে বের হয়েছি’, তাহলে মোবাইল ফোনের অপর প্রান্তে থাকা বন্ধুটি অনায়াসে বুঝে নেন, বন্ধুটি আসলে বাসায় আছেন। তেমনই অফিসে এমন অনেকে আছেন, যাঁদের মিটিংয়ের দিন কীভাবে যেন একটা না একটা সমস্যা জুটে যায়! ফলে অফিসে আসতে দেরি হয়। এমন মানুষদের সরল বাংলায় বলা হয় ‘লেট লতিফ’। তবে এই লেট লতিফেরা আসলে কেন দেরি করে আসেন, তার কিছু প্রবণতা ব্যাখ্যা করেছে বিজ্ঞান। অর্থাৎ তাদের দেরি হওয়ার এই অভ্যাসের পেছনে একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে।

মনোবিজ্ঞান, ক্রোনোবায়োলজি এবং আচরণগত বিভিন্ন গবেষণা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যা জানাচ্ছে, তার মোদ্দাকথা হলো, দীর্ঘস্থায়ীভাবে দেরি করার এই অভ্যাস কেবল দায়িত্বহীনতা বা অবহেলার কারণে নয়; বরং এটি আমাদের মস্তিষ্কের গঠন, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এবং এমনকি জৈবিক ঘড়ির সঙ্গে যুক্ত। দেরি করা মানেই সব সময় অনিচ্ছাকৃত অবহেলা নয়। এটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক গঠনের একটি জটিল প্রতিফলন। নিজের এই প্রবণতাগুলো চিহ্নিত করতে পারলে এবং প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পরিবর্তন আনলে এই লেট লতিফ তকমা ঘোচানো সম্ভব।

দেরি করার অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক কারণ হলো প্ল্যানিং ফ্যালাসি বা পরিকল্পনার ভুল। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
দেরি করার অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক কারণ হলো প্ল্যানিং ফ্যালাসি বা পরিকল্পনার ভুল। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

পরিকল্পনার ভুল বা প্ল্যানিং ফ্যালাসি

দেরি করার অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক কারণ হলো প্ল্যানিং ফ্যালাসি বা পরিকল্পনার ভুল। একে বলা যেতে পারে কগনিটিভ বায়াস বা জ্ঞানীয় পক্ষপাত। অর্থাৎ কোনো কাজ সম্পন্ন করতে আসলে কত সময় লাগবে, তা সঠিকভাবে আন্দাজ করতে না পারা; বিশেষ করে আশাবাদী মানুষেরা মনে করেন, সবকিছুই খুব মসৃণভাবে চলবে। তাঁরা রাস্তায় যানজট বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত বিঘ্নের কথা বিবেচনায় রাখেন না বলে তাঁদের হাতে কোনো অতিরিক্ত সময় থাকে না। ফলে একবার জ্যামে পড়েই সব শেষ। এ ছাড়া অনেকের মধ্যে পার্সোনাল স্পিড ইলিউশন কাজ করে। তাঁরা মনে করেন, শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে সব কাজ দ্রুত সেরে ফেলতে পারবেন। এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাঁদের সময়সূচি সংকুচিত করে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁরা দেরি করেন।

ব্যক্তিত্বের ধরন: সচেতনতা বনাম বিশৃঙ্খলা

ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্যও সময়ানুবর্তিতার ওপর বড় প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁদের মধ্যে সচেতনতাবোধ বেশি, তাঁরা প্রাকৃতিকভাবে আগে থেকে পরিকল্পনা করেন এবং খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে নজর দেন। ফলে তাঁরা সময়মতো সবখানে পৌঁছাতে পারেন। অন্যদিকে, যাঁরা প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা অগোছালো, তাঁদের পক্ষে সময়ের হিসাব রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এটি পরিবর্তনের জন্য আমূল ব্যক্তিত্ব বদলানোর প্রয়োজন নেই। ঘড়ি বা অ্যালার্মের মতো বাহ্যিক সাহায্যের মাধ্যমে এই সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।

বহুমুখী কাজ এবং সংস্কৃতির প্রভাব

যাঁরা একই সঙ্গে অনেক কাজ করতে পছন্দ করেন, তাঁদের দেরি করার প্রবণতা বেশি থাকে। তাঁরা ঘড়ির কাঁটার চেয়ে মুহূর্তের গুরুত্ব বা সম্পর্কের ওপর বেশি জোর দেন। ফলে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে তাঁরা সময়ের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর সঙ্গে সংস্কৃতির একটি যোগসূত্র আছে। লাতিন আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো পলিক্রোনিক সংস্কৃতিতে সামাজিক যোগাযোগকে সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর জার্মানি, জাপান বা আমেরিকার মতো দেশে সময়কে অত্যন্ত কড়াকড়িভাবে দেখা হয়। এই সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণেও অনেকে নিজের অজান্তে লেট লতিফ হয়ে ওঠেন।

রাতজাগা পাখি ও জৈবিক ঘড়ি

আমাদের শরীরের ভেতরে একটি প্রাকৃতিক ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম থাকে। যাঁরা প্রাকৃতিকভাবে নাইট আউল বা রাতজাগা পাখি, তাঁদের মস্তিষ্ক সকালে দেরিতে সক্রিয় হয়। তাঁদের শরীরে মেলাটোনিন হরমোন দেরিতে নিঃসৃত হয়। ফলে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই জৈবিক কারণে সকালের প্রতিটি কাজে তাঁদের দেরি হতে থাকে এবং সারা দিন এর প্রভাব বজায় থাকে।

টাইম ব্লাইন্ডনেস বা সময়ের অন্ধত্ব

এডিএইচডি, অটিজম বা ডিসলেক্সিয়ার মতো নিউরোডাইভারজেন্ট বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের মধ্যে প্রায়ই টাইম ব্লাইন্ডনেস বা সময়ের অন্ধত্ব দেখা যায়। তাঁদের কাছে সময় অত্যন্ত অননুমেয়ভাবে অতিবাহিত হয়। তাঁরা কোনো একটি কাজ থেকে অন্য কাজে যাওয়ার সময়টুকুর হিসাব রাখতে পারেন না। এটি কোনো ইচ্ছাকৃত ভুল নয়, বরং তাঁদের মস্তিষ্কের গঠনগত কারণেই তাঁরা সময়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হিমশিম খান।

সমাধানের পথ কী

বিজ্ঞান শুধু সমস্যার কথাই বলে না। উত্তরণের পথও দেখায়। এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—

সময়ের হিসাব দ্বিগুণ করা: কোনো কাজ বা যাতায়াতে যতটুকু সময় লাগবে বলে মনে হয়, হিসাবে তার দ্বিগুণ সময় হাতে রাখা।

বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের তালিকা: কোথাও যাওয়ার জন্য প্রতিটি ছোট ছোট পদক্ষেপ; যেমন তৈরি হওয়া, জুতা পরা, বের হওয়া ইত্যাদির জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করা।

বাহ্যিক সংকেত ব্যবহার: কেবল ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর না করে অ্যালার্ম, চেক লিস্ট বা ডিজিটাল টুল ব্যবহার করা।

সহমর্মিতা: সময়নিষ্ঠ ব্যক্তি এবং লেট লতিফদের বুঝতে হবে যে প্রত্যেকে সময়কে ভিন্নভাবে অনুভব করেন। ফলে একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা দেখালে সম্পর্কের টানাপোড়েন কমে।

সূত্র: লাইফ সায়েন্স, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৬ সালে লিপস্টিকের যে ৫টি ট্রেন্ড জনপ্রিয় হবে

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৩
২০২৬ সালে লিপস্টিকের যে ৫টি ট্রেন্ড জনপ্রিয় হবে

মেকআপের ট্রেন্ড সব সময় পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে ঠোঁটের সাজেও আসে বদল—কখনো ম্যাট ফিনিশ তো কখনো গ্লসি। লিপস্টিকের রং ও টেক্সচারের ক্ষেত্রেও প্রতিবছর নতুন নতুন ট্রেন্ড চোখে পড়ে। তেমনি ২০২৫ সালের বোল্ড এবং গাঢ় শেডগুলো কাটিয়ে ২০২৬ সালে আসতে চলেছে বিশেষ কিছু পরিবর্তন। আগামী বছর লিপস্টিকের ট্রেন্ডে থাকবে কিছু বৈচিত্র্য; একদিকে থাকবে স্নিগ্ধ গোলাপি আভা, অন্যদিকে ব্ল্যাক ও চেরি রেডের মতো শেডগুলো।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রিমিয়াম বিউটি ও মেকআপ স্টুডিও ব্র্যান্ড কেলি ঝাং মেকআপের নতুন পাঁচটি ট্রেন্ডের কথা জানিয়েছে।

lipstick-2

স্মোকি রোজ

কয়েক বছর ধরে ন্যুড শেডের জনপ্রিয়তা থাকলেও ২০২৬ সালে ঠোঁটে ফিরে আসবে ক্ল্যাসিক গোলাপি আভা। তবে এবারের গোলাপি কোনো চড়া বা উগ্র শেড নয়, বরং এটি হবে অত্যন্ত স্নিগ্ধ, কোমল ও অনুজ্জ্বল একধরনের ‘স্মোকি রোজ’ শেড। এই শেড চেহারায় তাৎক্ষণিক একটি সতেজ ভাব ফুটিয়ে তোলে এবং একদম ভারী মনে হয় না। যাঁরা একেবারে ন্যাচারাল বা ‘ক্লিন মেকআপ লুক’ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এটি হবে সেরা পছন্দ। সাধারণ ন্যুড শেডগুলো চেহারায় একটি ফ্যাকাশে ভাব আনে। কিন্তু স্মোকি রোজ সাধারণ ন্যুডের চেয়ে একটু বেশি উজ্জ্বল হওয়ায় চেহারায় আনে স্নিগ্ধ ভাব। নিত্যদিনের আউটিংয়ের জন্য নিজেকে মার্জিত এবং সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে আগামী বছর এই ট্রেন্ড থাকবে তালিকার শীর্ষে।

গথিক ব্ল্যাক
গথিক ব্ল্যাক

গথিক ব্ল্যাক

যাঁরা একটু সাহসী লুক পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য সামনের বছর ফিরতে চলেছে ব্ল্যাক লিপস্টিক। সাধারণত ফ্যাশন শো বা এডিটরিয়ালে এর ব্যবহার বেশি দেখা গেলেও ২০২৬ সালে এটি মূলধারার ফ্যাশনে জায়গা করে নেবে। ক্লিন মেকআপ লুকের বদলে যাঁরা একটু বোল্ড বা ড্রামাটিক লুক চাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সেরা হবে এই পিগমেন্টেড ব্ল্যাক লিপস্টিক।

ক্লাউড লিপস
ক্লাউড লিপস

ক্লাউড লিপস

এটি হতে চলেছে ২০২৬ সালের অন্যতম সেরা ট্রেন্ড। বিশ্বখ্যাত কালার ইনস্টিটিউট প্যানটোন ২০২৬ সালের জন্য যে ‘ক্লাউড ড্যান্সার’ রং বেছে নিয়েছে, সামনের বছর লিপস্টিকের শেডেও এর প্রতিফলন দেখা যাবে। এই ট্রেন্ডে ঠোঁটের বর্ডার কিংবা রেখা খুব একটা স্পষ্ট থাকে না, বরং হালকাভাবে ব্লার করে দেওয়া হয়। এটি দেখতে অনেকটা ফ্রেঞ্চ বা কোরিয়ান মেকআপের মতো মনে হয়, যা খুবই স্নিগ্ধ দেখায়। প্রতিদিনের হালকা সাজের জন্য এই ক্লাউড লিপস হবে দারুণ মানানসই।

ভিনাইল লিপস
ভিনাইল লিপস

ভিনাইল লিপস

যাঁরা ম্যাট নাকি গ্লসি লিপস নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন, তাঁদের জন্য সুখবর হিসেবে ২০২৬ সালে আসতে চলেছে হাই-শাইন বা ভিনাইল লিপস। ভিনাইল ফিনিশ মূলত ঠোঁটে আয়নার মতো একধরনের চকচকে আভা তৈরি করে, যা ঠোঁটকে আরও ভরাট, মসৃণ ও সজীব করে তোলে। লিপ গ্লস, লিপ অয়েল বা স্টেইন ব্যবহার করে খুব সহজে এই লুক তৈরি করা সম্ভব। ম্যাট লিপস্টিকই বেশি পছন্দ হলে লিপস্টিকের ওপর ঠোঁটের মাঝ বরাবর কিছুটা ট্রান্সপারেন্ট গ্লস বা লিপ অয়েল লাগিয়ে নিলে মুহূর্তেই তৈরি হয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত ভিনাইল লুক। ২০২৬ সালে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে এই লুকই হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।

চেরি রেড
চেরি রেড

চেরি রেড

লাল রঙের আবেদন কখনো পুরোনো হওয়ার নয়। ২০২৬ সালে ফিরে আসতে চলেছে চেরি রেড বা গাঢ় লাল লিপস্টিক। উজ্জ্বল ত্বকের সঙ্গে একটি গাঢ় লাল লিপস্টিক মুহূর্তে আপনাকে দিতে পারে আত্মবিশ্বাসী ও অভিজাত লুক। তবে এই বোল্ড লুক নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে দরকার একটু প্রস্তুতি। সুন্দর একটা ফিনিশ পেতে লিপস্টিক ব্যবহারের আগে ঠোঁট ভালো করে এক্সফোলিয়েট করে সামান্য লিপ বাম লাগিয়ে লিপস্টিক দিলে তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় এবং ঠোঁট দেখায় বেশ মসৃণ ও আকর্ষণীয়।

সূত্র: গ্ল্যামার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সব চর্বি কি সবার জন্য সমান ক্ষতিকর

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ঘি, মাখন, পনির আর লাল মাংস বা রেড মিট মানেই হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি। এই পুরোনো ধারণা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। ছবি: পেক্সেলস
ঘি, মাখন, পনির আর লাল মাংস বা রেড মিট মানেই হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি। এই পুরোনো ধারণা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। ছবি: পেক্সেলস

দশকের পর দশক ধরে আমাদের শেখানো হয়েছে, ঘি, মাখন, পনির আর লাল মাংস বা রেড মিট মানেই হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি। এগুলো রক্তনালি বন্ধ করে দেয়, কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাকের পথ প্রশস্ত করে। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই ধ্রুব সত্য কি বদলে যেতে বসেছে?

৬৬ হাজার মানুষের ওপর করা ১৭টি বড় ট্রায়ালের তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। নতুন এই গবেষণার চমকপ্রদ দিক হলো, ‘একই দাওয়াই সবার জন্য’ এই পুরোনো ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানানো।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি আগে থেকে কম বা মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি কমার ক্ষেত্রে পরবর্তী পাঁচ বছরে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি কমানো তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। তবে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য চিত্রটি ভিন্ন। তাঁদের ক্ষেত্রে চর্বি কমানো বা পরিবর্তন করা মৃত্যুঝুঁকি এবং হার্ট অ্যাটাকের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাট লিভারের ব্যাড কোলেস্টেরল বা এলডিএল পরিষ্কার করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তনালিতে চর্বি জমে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। তবে পাঁচ বছরের স্বল্প মেয়াদে সুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই কোলেস্টেরল কমানো হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সরাসরি ভূমিকা রাখছে না বলেই গবেষণায় উঠে এসেছে।

পরিবর্তন যখন খাদ্যের স্বাদে

আপনি কী খাচ্ছেন না, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি তার বদলে কী খাচ্ছেন। ছবি: পেক্সেলস
আপনি কী খাচ্ছেন না, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি তার বদলে কী খাচ্ছেন। ছবি: পেক্সেলস

গবেষকেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তা হলো, আপনি কী খাচ্ছেন না, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি তার বদলে কী খাচ্ছেন। কেবল চর্বি কমানোর চেয়ে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট; যেমন বাদাম, স্যামন বা ম্যাকারেল মাছের তেল গ্রহণ করা অনেক বেশি কার্যকর। এ ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছোট পরীক্ষা বেশ কার্যকর। সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এক দলকে দেওয়া হয়েছিল প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত কেক ও বিস্কুট, আর অন্য দলকে দেওয়া হয়েছিল সমপরিমাণ ক্যালরির স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (বাদাম ও মাছ)। এই গবেষণার ফল ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম দলের রক্তে ব্যাড কোলেস্টেরল ১০ শতাংশ এবং লিভারে চর্বির পরিমাণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, যা ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগের বড় কারণ। বিপরীতে, যাঁরা স্বাস্থ্যকর চর্বি খেয়েছিলেন, তাঁদের কোলেস্টেরল শুধু কমেইনি, বরং হৃদ্‌যন্ত্রের কর্মক্ষমতাও বেড়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নীতা ফরুহি এই গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, পাঁচ বছর সময়কাল হৃদ্‌রোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি মডেলগুলো সাধারণত ১০ বছরের হিসাব ধরে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া তিনি আরও একটি দিক তুলে ধরেছেন, সব স্যাচুরেটেড ফ্যাট এক নয়। লাল মাংসের ফ্যাট এবং গাঁজানো দুগ্ধজাত পণ্য; যেমন দই বা পনির আমাদের শরীরে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করতে পারে। তাই কেবল নিউট্রিশন বা উপাদানের দিকে নয়; বরং সেই উপাদানের উৎসের দিকে নজর দিতে হবে। কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টম স্যান্ডার্স আবার বলছেন, গত ৫০ বছরে কোলেস্টেরল এবং হৃদ্‌রোগে মৃত্যুহার কমার পেছনে এই প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই গড়পড়তা কোলেস্টেরল লেভেল কমিয়ে রাখা পুরো জনসংখ্যার জন্যই দীর্ঘ মেয়াদে মঙ্গলজনক।

ভারসাম্যই যেখানে চাবিকাঠি

গবেষণা আর পাল্টা গবেষণার এই ভিড়ে সাধারণ মানুষের জন্য বার্তাটি বেশ স্পষ্ট। চর্বি আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ, এটি ভিটামিন শোষণে সাহায্য করে। এনএইচএসের পরামর্শ অনুযায়ী, পুরুষদের দৈনিক ৩০ গ্রাম এবং নারীদের ২০ গ্রামের বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু জীবন বাঁচাতে শুধু ফ্যাট কমানোই যথেষ্ট নয়। প্রক্রিয়াজাত মাংস বা কেক-বিস্কুটের বদলে প্লেটে রাখতে হবে তৈলাক্ত মাছ, বাদাম ও উদ্ভিজ্জ তেল। স্যাচুরেটেড ফ্যাট হয়তো অনেকের জন্য তাৎক্ষণিক ঘাতক নয়, কিন্তু সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্যের গুণগত মান এবং উৎসের দিকে নজর দেওয়াই বরং বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: তাড়াহুড়ো করে বিয়ে আর ঋণ—দুটাই সমান বিপজ্জনক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজকের রাশিফল: তাড়াহুড়ো করে বিয়ে আর ঋণ—দুটাই সমান বিপজ্জনক

মেষ

আজ আপনার দিনটি বেশ ভালো, কিন্তু বড্ড তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাতিক আপনার। মনে রাখবেন, তাড়াহুড়ো করে বিয়ে আর তাড়াহুড়ো করে ঋণ করা—দুটাই সমান বিপজ্জনক। আজ ঋণ নেওয়ার আগে ভাবুন, শোধ করার ক্ষমতা আপনার আছে নাকি নাতি-পুতিদের ওপর দায় চাপাতে চান। বন্ধুদের সঙ্গে সময় ভালো কাটবে, তবে তাদের পকেট মারার চেষ্টা করবেন না!

বৃষ

আজ খুব ব্যস্ত থাকবেন। এত দৌড়ঝাঁপ করবেন যে লোকে ভাববে আপনি বোধহয় অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সাবধান, আজ পায়ে চোট পাওয়ার প্রবল যোগ। রাস্তাঘাটে মোবাইলে মুখ গুঁজে না হেঁটে একটু সামনের দিকে তাকান। আর্থিক বিনিয়োগের জন্য দিনটি ভালো, তবে টাকাটা লটারিতে না লাগিয়ে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে লাগালে ভবিষ্যতে বাড়ির লোক আপনাকে অন্তত একটু সম্মান দেবে।

মিথুন

অফিসে আজ বসের প্রচুর কথা শুনতে হতে পারে। মনে রাখবেন, বসের কথাগুলো অনেকটা রেডিওর বিজ্ঞাপনের মতো—শুনতে খারাপ লাগলেও বন্ধ করার উপায় নেই। বাড়িতে গেস্ট আসার সম্ভাবনা আছে, যা আপনার শান্তিতে বিঘ্ন ঘটাবে। জরুরি কাগজে সই করার আগে অন্তত তিনবার পড়ে নিন, নয়তো পরে দেখবেন নিজের সম্পত্তি অজান্তেই কাউকে দান করে দিয়েছেন। আর্থিক দিকটা মোটামুটি উজ্জ্বল।

কর্কট

সকাল থেকে ব্যবসায় ভালো গতি আসবে। কাস্টমারকে কথা বলার সুযোগ দেবেন না, একাই বকে যান। তবে খরচ করার সময় একটু রাশ টানুন, জমানো টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার ভয় আছে। ভাই-বোনদের ওপর আজ দাদাগিরি ফলাতে পারবেন, তারা আপনার কথা শুনবে (হয়তো ভয়ে)। স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, কিন্তু তাই বলে আজই হিমালয়ে ট্রেকিং করতে বেরিয়ে যাবেন না!

সিংহ

স্ত্রীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার যোগ আছে। মনে রাখবেন, স্ত্রীর হাসি মানেই আপনার পকেটের ফাঁসি! পাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হবে। যদি কেউ আপনার নামে ষড়যন্ত্র করে, তবে জানবেন জনপ্রিয় হচ্ছেন। আজ নতুন কারোর সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে পারে, তবে সেই বন্ধুর থেকে টাকা ধার নেওয়ার কথা এখনই ভাববেন না।

কন্যা

আপনার অসাধারণ বুদ্ধির জোরে আজ ব্যবসায় মুনাফা বাড়বে। ঋণ থেকে মুক্তির সুযোগ আসতে পারে, কিন্তু তার জন্য লটারি জেতার অপেক্ষা করলে চলবে না। আজ কাউকে ‘না’ বলতে শিখুন, নয়তো লোকে আপনাকে দিয়ে অফিসের সব ছোট কাজ করিয়ে নেবে। ভ্রমণে বেরোলে পেটের দিকে খেয়াল রাখুন, রাস্তার ফুচকা আপনার বড় শত্রু হতে পারে।

তুলা

প্রেমে অতিরিক্ত আশা করা আজ ঠিক হবে না। হয়তো চাঁদ-তারা এনে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, আর সঙ্গী হয়তো ভাবছে পরের মাসে ইলেকট্রিক বিল কে দেবে। মানসিক চাপ বাড়তে পারে। তাড়াহুড়ো এড়িয়ে চলুন, শান্তিতে এক কাপ চা খান। মনে রাখবেন, প্রেম না টিকলে কাচ্চি বিরিয়ানি তো আছেই!

বৃশ্চিক

সকালের দিকে কোনো বন্ধুর দ্বারা একটু বিরক্ত হতে পারেন। হয়তো সে আপনার কাছে পুরোনো ধার চাইতে এসেছে। শরীরের কোথাও ব্যথা আজ আপনার কাজে বাগড়া দিতে পারে। হাঁটাহাঁটি করার সময় একটু সচেতন থাকুন। প্রিয়জনের প্রতি আস্থা বজায় রাখুন, অকারণে গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে কপালে দুঃখ আছে।

ধনু

আজ সকাল থেকেই মন খাওয়ার দিকে থাকবে। ডায়েট চার্টটা আজ ড্রয়ারে ভরে রাখুন। সমাজে দান-ধ্যান করার জন্য খ্যাতি বাড়তে পারে, তবে নিজের পকেট খালি করে দান করবেন না। অতিথিদের সংখ্যা বাড়তে পারে, তাই ফ্রিজে অন্তত কয়েকটা মিষ্টি মজুত রাখুন। পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে।

মকর

অংশীদারি ব্যবসায় নিজের অধিকার বজায় রাখার চেষ্টা করুন, নয়তো পার্টনার আপনাকে দিয়ে চা বানিয়ে নেবে। শিল্পীদের জন্য আজ দারুণ সুযোগ আসতে পারে। গাড়ি কেনার পরিকল্পনা থাকলে আজ আলোচনা এগোতে পারেন। গুরুজনদের শরীর নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা হতে পারে, তাই অযথা তর্ক করে তাঁদের ব্লাড প্রেশার বাড়াবেন না।

কুম্ভ

আজকের দিনটি আপনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। বিবাদে জড়ানোর সম্ভাবনা আছে, তাই পাড়ার মোড়ে অযথা তর্ক করবেন না। ব্যবসায় একটু ক্ষতির আশঙ্কা আছে, তাই বড় ইনভেস্টমেন্ট আজ এড়িয়ে চলাই মঙ্গল। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন, অন্তত প্রতিদিন সকালে দাঁত মাজাটা শুরু করতে পারেন!

মীন

আজ কর্মক্ষেত্রে পরিস্থিতি আপনার অনুকূল থাকবে। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের বশে বসের চেয়ারে বসে পড়বেন না। পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই বড় সিদ্ধান্ত নিন। মূল্যবান জিনিসপত্রের প্রতি যত্নশীল হোন, নয়তো দেখবেন মোবাইলটা ভুলে বাসেই ফেলে এসেছেন। দিনটি সামগ্রিকভাবে শুভ, শুধু বিকেলের পর একটু শান্ত থাকুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত